Advertisement
১৭ মে ২০২৪
Fire Accident

ঋণ নয়, অনুদান চান মঙ্গলাহাটের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা

পোড়া মঙ্গলাহাটের সামনে এ দিনও সকাল থেকে ভিড় করেন ব্যবসায়ীরা। প্রায় সকলেরই মুখ শুকনো। কেউ কেউ ধ্বংসস্তূপের দিকে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থেকেছেন।

An image of fire

ধিকিধিকি: আগুণ সম্পূর্ণ নেভেনি তখনও। কাজ করছেন দমকলকর্মীরা। শনিবার, হাওড়ার মঙ্গলহাটে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৩ ০৭:৫২
Share: Save:

ঋণ নয়, অনুদান চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখলেন হাওড়ার পোড়া মঙ্গলাহাটের ব্যবসায়ীরা। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, বৃহস্পতিবার রাতের আগুনে তাঁদের সব পুঁজি শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই ঋণ নিয়ে পরিশোধ করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। এই অবস্থায় কিছু সরকারি অনুদান পেলে তাঁরা সপরিবার বাঁচতে পারেন। সেই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের আবেদন, মুখ্যমন্ত্রী যদি সময় দেন, তা হলে তাঁদের একটি প্রতিনিধিদল তাঁর সঙ্গে দেখা করে নিজেদের সমস্যার কথা জানাতে পারে। এ দিকে, শনিবারই জেলা প্রশাসনের তরফে পোড়া হাটের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের নাম, স্টল নম্বর ও মোবাইল নম্বর চেয়ে পাঠানো হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, ওই তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।

পোড়া মঙ্গলাহাটের সামনে এ দিনও সকাল থেকে ভিড় করেন ব্যবসায়ীরা। প্রায় সকলেরই মুখ শুকনো। কেউ কেউ ধ্বংসস্তূপের দিকে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থেকেছেন। কেউ বা সর্বস্ব খুইয়ে পোড়া হাটের সামনে অঝোরে কেঁদেছেন। পোড়া হাটের ঠিক পাশেই রয়েছে ‘লক্ষ্মী নার্সিং মঙ্গলাহাট’। সেই হাটের তেতলায় সপরিবার বসবাস করেন টুম্পা ভুঁইয়া। তিনি শনিবার ও সোমবার এই হাটে চৌকি ভাড়া দেন। এ দিন দেড় বছরের মেয়েকে কোলে নিয়ে পোড়া হাটের দিকে তাকিয়ে টুম্পা বললেন, ‘‘মাপ অনুযায়ী ৩০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া নিই এক-একটি চৌকির জন্য। এই করেই স্বামী ও তিন সন্তানকে নিয়ে সংসার চালাই। আগুনে বেশির ভাগ চৌকিই পুড়ে গিয়েছে। কী করে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বাঁচব, জানি না।’’

সাত-আট বছর আগে স্বামীকে হারিয়ে মঙ্গলাহাটে ব্যবসা শুরু করেছিলেন পূর্ণিমা রায়। বর্তমানে ১৮ বছরের ছেলেকে নিয়ে স্টল চালান তিনি। পুড়ে যাওয়া স্টলের দিকে আঙুল দেখিয়ে তিনি বললেন, ‘‘আমাদের দীর্ঘদিনের গেঞ্জি, অন্তর্বাসের ব্যবসা। আগুন সব শেষ করে দিল। এর পরে সংসার চলবে কী করে, জানি না।’’ এ দিনও পোড়া হাটের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ভাবে প্রোমোটিং-চক্র এই আগুন লাগিয়েছে। আগুন লাগানোর আগে চার দিকে কেরোসিন তেল ও এক ধরনের রাসায়নিক ছড়ানো হয়, যার জেরে আগুন অত দ্রুত চার দিকে ছড়িয়ে পড়ে।আগুন ঠিক কী ভাবে লেগেছিল, ঘটনাস্থল পরীক্ষা করে তা জানতে এ দিন সেখানে আসেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের একটি দল। ওই বিশেষজ্ঞেরা ধ্বংসাবশেষ থেকে নানা নমুনা সংগ্রহ করেন পরীক্ষার জন্য। এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘‘এই হাটে অনেক আইএসএফ কর্মী-সমর্থক ব্যবসা করেন। তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। রাজ্য সরকারকে অবিলম্বে ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং ওই জায়গাতেই বসার ব্যবস্থা করতে হবে।’’

এ দিন মঙ্গলাহাটের ব্যবসায়ীদের দু’টি সংগঠন ‘হাওড়া মঙ্গলাহাট ব্যবসায়ী সমিতি’ এবং ‘পোড়া হাট ব্যবসায়ী সংগ্রাম সমিতি’র তরফে দাবি করা হয়, তাঁরা হাটে ফের ব্যবসা করার জন্য ঋণ চান না। ‘পোড়া হাট ব্যবসায়ী সংগ্রাম সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক দিলীপ দত্ত বললেন, ‘‘যা পরিস্থিতি, ব্যবসায়ীরা ঋণ নিলে শোধ করতে পারবেন না। তাই আমরা চাইছি, রাজ্য ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের আর্থিক সাহায্য করুক। ঋণ নয়, অনুদান চাই।’’ পাশাপাশি, এ দিন ব্যবসায়ীরা আরও দাবি তোলেন, ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে তাঁরা যাতে সোমবার থেকেই ওই জায়গায় মাটিতে বসে ব্যবসা শুরু করতে পারেন, তার বন্দোবস্ত করুক জেলা প্রশাসন ও পুরসভা। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের আবেদন আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। যে হেতু একটা অন্তর্ঘাতের অভিযোগ রয়েছে এবং ওই ঘটনার তদন্ত সিআইডি ও ফরেন্সিক বিভাগ করছে, তাই এখনই ওই হাট চালু করা যাবে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fire Accident businessmen Mangalahat Howrah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE