Advertisement
১৭ মে ২০২৪
লিলুয়া হোম

দু’বেলার খাইখরচ ২৫ টাকা, বালাই নেই সুচিকিৎসারও

আবাসিকদের মাথা-পিছু বরাদ্দ মাসে ১১৪০ টাকা। তার মধ্যে দৈনিক ২৫ টাকা হিসেবে মাসে ৭৫০ টাকা খাওয়াদাওয়ার জন্য। বাকি টাকায় জোটে পোশাক আর চিকিৎসা। এই বরাদ্দে যা হওয়ার কথা, লিলুয়া হোমের ভিতরকার ছবিটাও ঠিক সে রকমই। বরং আরও খারাপ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৪ ০১:০৩
Share: Save:

আবাসিকদের মাথা-পিছু বরাদ্দ মাসে ১১৪০ টাকা। তার মধ্যে দৈনিক ২৫ টাকা হিসেবে মাসে ৭৫০ টাকা খাওয়াদাওয়ার জন্য। বাকি টাকায় জোটে পোশাক আর চিকিৎসা। এই বরাদ্দে যা হওয়ার কথা, লিলুয়া হোমের ভিতরকার ছবিটাও ঠিক সে রকমই। বরং আরও খারাপ।

আবাসিকদের অভিযোগ, খাওয়ার থালায় থাকে এক হাতা ভাত, জলের মতো পাতলা ডাল এবং সব্জির ঝোল। সপ্তাহে দু’এক দিন মাছ-মাংস-ডিম দেওয়ার কথা থাকলেও তা জোটে কালেভদ্রে। আরও অভিযোগ, গত পাঁচ বছর ধরে হোমে চিকিৎসক নেই। খুব গুরুতর অসুস্থ না হলে চিকিৎসার পাট নেই বললেই চলে। ছোটখাটো অসুস্থতায় সর্দি-জ্বরে ওষুধ দিয়ে দেন হোমের কর্মীরাই। অথচ অনুদান আছে। আছে পরিকাঠামো উন্নয়নের সুযোগও। তবু লিলুয়া হোমে নেই-রাজ্যের ছবিটা এ রকমই। জেলা প্রশাসনের ধারণা, মূলত খাওয়াদাওয়া ও চিকিৎসায় এমন উদাসীনতার কারণেই বারবার বিক্ষোভ করছেন আবাসিকেরা। কিংবা পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে আকছার।

জেলা প্রশাসনের খবর, বাম আমল থেকেই প্রত্যেক আবাসিকের জন্য মাসে ১১৪০ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। মাথাপিছু দৈনিক ২৫ টাকা বরাদ্দের কথা শুনে কিছুটা অবাক খোদ নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা। বিষয়টি দেখবেন বলে জানান তিনি। তবে মন্ত্রী বলেন, “খাবারদাবারের মান যে খুব ভাল তা কখনওই বলব না। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ওই হোমে মাথাপিছু বরাদ্দ রয়েছে। সবই তো ধীরে ধীরে করা হচ্ছে। খাবারদাবারের মানও উন্নত হবে।”

একই সঙ্গে মন্ত্রীর দাবি, “মূল সমস্যা খাবার নয়। আসলে আইনগত বা অন্য নানা কারণে অনেক মেয়েকে এখানে ইচ্ছের বিরুদ্ধেও থাকতে হচ্ছে। এই অবস্থায় পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যার কারণে পালানোর সুযোগ পেলে তারা কাজে লাগাতে চাইছে।” অথচ মন্ত্রীই জানাচ্ছেন, পরিকাঠামো উন্নয়নে গত আর্থিক বছরে ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। এ বছর আরও টাকা বরাদ্দ হয়েছে।

রাজ্যে সরকার পরিচালিত মোট ১৭টি হোম রয়েছে। এর মধ্যে মহিলাদের জন্য সব থেকে বড় হোম এই লিলুয়া হোম। লিলুয়া স্টেশন রোডের ঘিঞ্জি এলাকা ও কলকারখানার মাঝে প্রায় ৬ একর জায়গায় ৪৩০ জন আবাসিকের থাকার ব্যবস্থা। উদ্ধার হওয়া অপ্রাপ্তবয়স্ক, প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের আলাদা ৭টি ব্লক। চত্বরে রয়েছে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড ও চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির অফিস।

হোমের চার পাশ উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা থাকলেও হোমের নিরাপত্তার হাল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে গত পনেরো দিনে চার বার আবাসিক পালানোর ঘটনা। তার জেরেই নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য প্রশাসন। হোমের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবারই ছুটে গিয়েছেন মন্ত্রী শশী পাঁজাও।

শুক্রবার বিকেলেও হোম পরিদর্শনে যান জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাশ ও পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডে-সহ পূর্ত, সমাজকল্যাণ দফতরের অফিসার এবং হাওড়া জেলের সুপার ও অন্যান্য প্রশাসনিক কর্তারা। পরিদর্শনের পরে জেলাশাসক জানান, গলদ রয়েছে মূলত হোমের নকশাতেই। এ ছাড়াও পালানোর অনেক পথ রয়েছে কখনও ব্লক লাগোয়া সীমানা পাঁচিল, কখনও ঝোপঝাড়। কখনও বা অর্ধেক কাটা গাছ। শুভাঞ্জনবাবু বলেন, “পূর্ত দফতরকে এক-দু’দিনে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে। সবক’টি পাঁচিল উঁচু করে কাঁটাতার লাগিয়ে দেওয়া হবে। জঙ্গল কেটে ফেলা হবে।”

এর পাশাপাশি জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, হোম পরিচালনার জন্য মোট ৭৪ জন কর্মী থাকার কথা। কিন্তু রয়েছেন মাত্র ৪৫ জন। যার মধ্যে নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্যা মাত্র ৯। যাঁদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিন শিফ্টে কাজ করতে হয়। ফলে প্রায় ৬ একর জায়গা পাহারা দেন মাত্র ৩ জন। এর মধ্যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে বা ছুটি নিলে অরক্ষিতই হয়ে পড়ে গোটা হোম।

হোম সূত্রে জানা গিয়েছে, হোমে এক জন সুপার ও সহ-সুপারের পদ রয়েছে। সুপার পদে থাকলেও সহ সুপারের পদ খালি থাকায় উত্তরবঙ্গের একটি হোমের প্রাক্তন সুপারকে সেখানে আনা হয়েছে। সুপার চাইল্ড কেয়ার লিভে থাকায় তিনিই গত তিন মাস হোমের দায়িত্বে ছিলেন।

হোমে প্রশাসনিক অব্যবস্থার কথা মানছেন মন্ত্রী শশী পাঁজাও। তিনি বলেন, “হোমে প্রশাসনিক ব্যবস্থায় গলদ রয়েছে। কর্তৃপক্ষকে আরও সক্রিয় হতে হবে। পরিদর্শনের পরে আমি হোম-কর্তৃপক্ষ ও সমাজকল্যাণ দফতরের আধিকারিকদের বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়ে এসেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

lilua home mismanagement southbengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE