Advertisement
১৭ মে ২০২৪

নকল সোনায় ব্যাঙ্ক-জালিয়াতি, হাওড়ায় ধৃত ২

নকল সোনা রেখে কোটি কোটি টাকার ব্যাঙ্ক ঋণ! আর এই ঋণ আদায়ের জন্য ব্যবহার করা হত স্থানীয় কিছু বেকার যুবককে। তা-ও মাত্র কয়েক হাজার টাকার বিনিময়ে। ওই টাকার লোভ দেখিয়ে আর কিছু টাকা দিয়ে প্রথমে তাঁদের ওই ব্যাঙ্কের গ্রাহক করে নেওয়া হত। এর পরে তাঁদের দিয়েই সোনা বন্ধক রেখে ঋণের আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করানো হত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৪ ০১:৪৭
Share: Save:

নকল সোনা রেখে কোটি কোটি টাকার ব্যাঙ্ক ঋণ! আর এই ঋণ আদায়ের জন্য ব্যবহার করা হত স্থানীয় কিছু বেকার যুবককে। তা-ও মাত্র কয়েক হাজার টাকার বিনিময়ে। ওই টাকার লোভ দেখিয়ে আর কিছু টাকা দিয়ে প্রথমে তাঁদের ওই ব্যাঙ্কের গ্রাহক করে নেওয়া হত। এর পরে তাঁদের দিয়েই সোনা বন্ধক রেখে ঋণের আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করানো হত। তবে ওই সোনা যে আদতে নকল, ঘূণাক্ষরেও তা টের পেতেন না যুবকেরা। কিন্তু তাঁদের আবেদনের পরে নকল সোনাকে আসল শংসাপত্র দিয়ে ব্যাঙ্কের থেকে আদায় করা হত লক্ষ লক্ষ টাকা।

অভিযোগ, এ ভাবেই গত কয়েক বছর ধরে হাওড়ার রামরাজাতলা এলাকার সাঁতরাগাছির ওই সমবায় ব্যাঙ্কে নকল সোনা রেখে কোটি কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়। কিন্তু কয়েক জন গ্রাহক মাসের পর মাস ঋণ শোধ না করায় টনক নড়ে ব্যাঙ্কের। এ দিকে, অভিযোগ মেলে এই ঘটনায় জড়িত ব্যাঙ্কেরই কয়েক জন স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মী-সহ ব্যাঙ্কের এক সদস্য। শুক্রবার রাতে এই অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে পুলিশ। শনিবার রাত পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে ব্যাঙ্কের এক অস্থায়ী কর্মী ও এক স্বর্ণকার। পুলিশ জানায়, এই ঋণ নেওয়ার জন্য ব্যাঙ্কের মধ্যেই একটি চক্র গড়ে ওঠে। ওই চক্রের শিকড় খুব গভীরে বলে ধারণা পুলিশের। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃতেরা স্বীকার করেছে, বেকার যুবকদের ব্যবহার করেই নকল সোনা ব্যাঙ্কে রেখে ঋণ নেওয়া হত।

পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাতে তমালকুমার রীত নামে এমনই এক যুবক পুলিশে অভিযোগ করেন, ওই ব্যাঙ্কের সঙ্গে জড়িত কয়েক জন পদস্থ কর্তা ও কর্মী তাঁকে টাকার লোভ দেখিয়ে ঋণের আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে তাঁর নামে নকল সোনা বন্ধক রেখে লক্ষ লক্ষ টাকা জালিয়াতি করেছে। এর পরেই শনিবার সকালে পুলিশ প্রথমে কিশোর পাঠক নামে ব্যাঙ্কের এক অস্থায়ী কর্মীকে ধরে। রাতে গ্রেফতার হয় অরুণ আশ নামে ব্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত এক স্বর্ণকার। এ ছাড়া ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ব্যাঙ্কের এক সদস্য-সহ এক অস্থায়ী কর্মীর খোঁজেও পুলিশ তল্লাশি শুরু করেছে। ঘটনার পরে তাঁরা বেপাত্তা। রাত পর্যন্ত তাঁদের সন্ধান মেলেনি।

শনিবার ওই খবর ছড়িয়ে পড়তেই রামরাজাতলায় তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ওই ব্যাঙ্কের গ্রাহক-সংখ্যা প্রায় চল্লিশ হাজার। সকাল থেকেই ব্যাঙ্কের সামনে হাজার হাজার আতঙ্কিত গ্রাহক গচ্ছিত অর্থ ও সোনা তুলে নিতে ভিড় জমান। এলাকায় যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েই গ্রাহকদের এককালীন সর্বাধিক ২০ হাজার টাকা দিতে শুরু করেন। তা সত্ত্বেও উত্তেজনা কমেনি। রাতে পুলিশ পিকেট বসানো হয়।

ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, গ্রাহকদের সমম্ত টাকা-সোনা ফেরত দেওয়া হবে। এ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। ব্যাঙ্কের সম্পাদক সুশান্ত দত্ত বলেন, “নকল সোনা দিয়ে ঋণ নেওয়ার চার-পাঁচটি ঘটনা প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। তবে ঋণের পরিমাণ এক কোটি টাকার বেশি নয়। এ নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে মিথ্যা আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা চলছে। ব্যাঙ্কের যা আর্থিক অবস্থা, তাতে তা বন্ধ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। আমরা সব টাকা মিটিয়ে দেব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

howrah fake-gold
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE