Advertisement
১৯ মে ২০২৪
sand smuggling

Sand Smuggling: ‘চলছে বালির গাড়ি’, বার্তা পৌঁছচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপে

তিনটি কলামে ট্রাক বা ডাম্পারের নম্বর, সেটি কত চাকার, সময় (সকাল ও রাত ভাগ করে)— লেখা রয়েছে সবই।

বালি পাচারে হোয়াটসঅ্যাপ ‘বার্তা’। নিজস্ব চিত্র

বালি পাচারে হোয়াটসঅ্যাপ ‘বার্তা’। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২১ ০৫:৩৬
Share: Save:

প্রশাসনের নির্দেশে গত ১ জুলাই থেকে বালি তোলা বন্ধ। তবে পশ্চিম বর্ধমানে বালি ‘পাচার’ চলছে হোয়াটসঅ্যাপ বার্তার (সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) ভরসায়—এমনই অভিযোগ বিরোধীদের। তারা আঙুল তুলেছে রাজ্যের শাসক দলের দিকে। অভিযোগ অস্বীকার করে রাজ্যের মন্ত্রী তথা জেলার বিধায়ক মলয় ঘটক মনে করিয়ে দিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বালির অবৈধ কারবার রুখতে বার বার প্রশাসনকে কড়া হতে বলেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘বালি পাচার চলছে বলে জানা নেই। খোঁজ নিচ্ছি। প্রশাসন উপযুক্ত পদক্ষেপ করবে।’’ বালি পাচার রুখতে অভিযান চলছে বলে দাবি জেলা প্রশাসনেরও।

কী থাকছে ওই হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায়? একটি বার্তায় দেখা গিয়েছে, রুল টানা খাতার পাতার উপরে লেখা, নারকেলবাগান ঘাট। তারিখ, ৪ জুলাই। তিনটি কলামে ট্রাক বা ডাম্পারের নম্বর, সেটি কত চাকার, সময় (সকাল ও রাত ভাগ করে)— লেখা রয়েছে সবই। অবৈধ কারবারিদের একাংশের দাবি, কলকাতা, হুগলি-সহ ভিন্‌জেলায় যে সমস্ত ট্রাক, ডাম্পার ‘অবৈধ’ বালি নিয়ে যাচ্ছে, সেগুলির ‘নির্বিঘ্নে’ যাতায়াতের জন্যই দরকার এই বার্তা।

বিরোধীদের অভিযোগ, অজয়ে কাঁকসার নারকেলবাগান, শেওড়াকুড়ি, পাণ্ডবেশ্বেরর গৌরবাজার, কেন্দ্রার রামনগর, জামুড়িয়ার চিচুরবিল এবং দামোদরে রানিগঞ্জের নূপুর, অণ্ডালের মদনপুর, দুর্গাপুরের ওয়ারিয়ার মতো নানা ঘাট থেকে কোথাও নৌকা ও পাম্পের সাহায্যে, কোথাও বা যন্ত্রের সাহায্যে অবৈধ ভাবে বালি তোলা চলছে। কয়েকজন ‘কারবারি’ জানান, এই বার্তা পাঠান ‘বালি-সিন্ডিকেটের মাথা’, দুর্গাপুরের জনৈক ‘কেবু’। সিন্ডিকেটে তাঁর নীচে রয়েছেন জনা ছয়েক। তাঁদের তলায় রয়েছেন আরও কয়েকজন।

অজয়, দামোদরের ঘাটগুলিতে ছড়িয়ে থাকেন সিন্ডিকেটের দ্বিতীয় সারির ওই ছ’জন ও তাঁদের সঙ্গীরা। তাঁরা ঘাটে দিনে কতগুলি ট্রাক, ডাম্পার বালি বোঝাই করল, পুঙ্খানুপুঙ্খ সে তথ্য দেন ‘কেবু’কে। যাবতীয় তথ্য খাতায় ‘নোট’ করেন কয়েকজন। সে নোটের ছবি ‘কেবু’ পাঠান নানা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা তাঁর লোকজনের কাছে। তাঁরা বার্তায় থাকা নম্বর মিলিয়ে বালি বোঝাই ট্রাক, ডাম্পার যাতায়াতের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু রাস্তায় তো নজরদারি থাকার কথা? সিন্ডিকেটের লোকেদের দাবি, ‘‘সব ম্যানেজ করা আছে।’’

এই ‘ম্যানেজ’-এর জন্য যাঁরা অবৈধ বালি পরিবহণ করছেন, তাঁরা প্রতিটি ট্রাক-ডাম্পার পিছু ঘাটে থাকা ‘কেবু’র লোকজনকে চার হাজার টাকা করে দেন বলে জানা গিয়েছে। এক-একটি ঘাট থেকে গড়ে দিনে ১০ থেকে ৩০টি ট্রাক, ডাম্পার যাতায়াত করে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। পড়শি জেলা বীরভূম, বাঁকুড়া থেকে অবৈধ বালি বোঝাই গাড়ি পশ্চিম বর্ধমানে ঢুকলে, নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য ‘কেবু’র লোকজনের থেকে তিন হাজার টাকায় ‘প্যাড’ (অবৈধ কারবারে চালু রসিদ) কিনতে হয় বলে দাবি। ‘কেবু’ অবশ্য সব অভিযোগ উড়িয়ে দাবি করেন, ‘‘আমার নামে লোকে কেন এ সব বলছে জানি না। এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই।’’

বিজেপি নেতা জিতেন চট্টোপাধ্যায়, সিপিএম নেতা তুফান মণ্ডলদের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল, পুলিশ, প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদতে বালি লুট হচ্ছে। পাচারের নিত্য নতুন পদ্ধতিও আবিষ্কার হচ্ছে।’’

অবৈধ বালির কারবার রোধে নিয়মিত অভিযান চলছে বলে দাবি জেলাশাসক বিভু গোয়েল, আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার অজয়কুমার ঠাকুর, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের ওসি (মাইন‌্‌স) প্রিয়ব্রত রাঢ়ীর। যদিও কমিশনারের সংযোজন: ‘‘হোয়াটসঅ্যাপ বার্তার বিষয়ে কিছু জানি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sand smuggling Whats APP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE