Advertisement
১৭ মে ২০২৪
Jadavpur University Student Death

যাদবপুরকাণ্ডে গ্রেফতার দ্বিতীয় বর্ষের দুই ছাত্রও, পকসো আইনের ধারাও এ বার জুড়তে পারে মামলায়

শুক্রবার রাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী তথা হস্টেলের আবাসিক সৌরভ চৌধুরী। রবিবার গ্রেফতার করা হল বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুই পড়ুয়া মনোতোষ ঘোষ এবং দীপশেখর দত্তকে।

—ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২৩ ২২:২৮
Share: Save:

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার আরও দু’জন। শুক্রবার রাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী তথা হস্টেলের আবাসিক সৌরভ চৌধুরী। রবিবার গ্রেফতার করা হল বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুই পড়ুয়া মনোতোষ ঘোষ এবং দীপশেখর দত্তকে। এর পর ধৃত দু’জনকে আলিপুর আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাঁদের ২২ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল জানান, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ার মৃত্যুর ঘটনায় অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। সিপির কথায়, ‘‘ইতিমধ্যে মৃত ছাত্রের ময়নাতদন্ত হয়েছে। তার ভিডিয়োগ্রাফিও করা হয়েছে। আমরা দ্রুত তদন্ত শেষ করতে পারব বলেই আশা করছি।’’

অন্য দিকে, রবিবার নদিয়ায় মৃত পড়ুয়ার বাড়িতে যান পশ্চিমবঙ্গের শিশু সুরক্ষা কমিশনের উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী। সেখান থেকে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে পড়ুয়া মৃত্যুর ঘটনাকে পকসো আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। তিনি জানান, এই ঘটনা পকসো আইনের অধীনে পড়ে। স্বপ্নদীপের ১৮ বছর বয়স হয়নি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ১৭ বছর ৯ মাস ৯ দিন। অনন্যার কথায়, ‘‘ছেলেটিকে উলঙ্গ অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। ওর দেহে সিগারেটের ছ্যাঁকা ছিল। ও নিজেও ফোন করে ভাইকে জানিয়েছিল, ওকে সমকামী বলা হচ্ছে। তাই এটি যৌন নির্যাতনের পর্যায়ে পড়ে। ছেলেটির ১৮ বছর হয়নি। তাই পকসো আইনের অধীনে এই ঘটনার বিচার প্রয়োজন।’’ কেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এবং হস্টেলে সিসি ক্যামেরা নেই, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনন্যা। তাঁর মন্তব্য, ‘‘যাদবপুর কি অন্য কোনও গ্রহ? দেশের আর পাঁচটা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে নিয়ম আছে, এখানে তা মানা হবে না কেন?’’ নাবালক হওয়ায় ওই পড়ুয়ার নাম আর উল্লেখ না করার জন্য অনুরোধ করেছেন শিশু সুরক্ষা কমিশনের উপদেষ্টা। পুলিশ সূত্রেও খবর, যাদবপুরের ঘটনায় পকসো আইনের ধারা জুড়তে পারে।

পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় প্রকাশ্যে আসা একটি চিঠি ঘিরেও রহস্য দানা বাঁধতে শুরু করেছে। সেটির সত্যতা অবশ্য আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি। শনিবার তদন্তকারীদের একটি সূত্রে জানা গিয়েছিল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের যে ঘরে প্রথম বর্ষের পড়ুয়া ‘অতিথি’ হিসাবে থাকছিলেন, সেই ঘর থেকে একটি ডায়েরি উদ্ধার হয়েছে। প্রকাশ্যে আসা চিঠিটি সেই ডায়েরির পাতায় লেখা হয়েছে বলেই দাবি। অভিযোগ, ওই পড়ুয়াকে দিয়ে সেই চিঠিটি জোর করে লিখিয়ে নেওয়া হয়েছিল। যদিও সেই চিঠির হাতের লেখা এবং নীচের সইটি মৃত পড়ুয়ার করা কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে খবর পুলিশ সূত্রে। সরকারি আইনজীবী সৌরীন ঘোষাল সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘‘একটি চিঠি পাওয়া গিয়েছে। সেটি জোর করে লেখানো হয়েছিল।’’ তাঁর আরও দাবি, চিঠিটি মৃত পড়ুয়াকে দিয়ে জোর করে লিখিয়ে নেওয়ার নেপথ্যে মনোতোষ এবং দীপশেখরের ভূমিকা থাকতে পারে।

রবিবার আদালতে মনোতোষের আইনজীবী অমি হক এবং দীপশেখরের আইনজীবী সৌম্যশুভ্র রায় আদালতকে জানান, এফআইআরে তাঁদের মক্কেলদের নাম নেই। আইনজীবীরা এ কথাও বলেন যে, এঁদের বিরুদ্ধে বড়জোর আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার মামলা হতে পারে, হত্যার মামলা নয়। কিন্তু সরকারি আইনজীবী এর পাল্টা যুক্তি দেখিয়ে বলেন, তদন্তে এই ঘটনায় অনেকেই জড়িত বলে ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আসছে। তা ছাড়া এই ধৃত ছাত্র বা প্রাক্তনীরাও সব বলছেন না। তাই ঘটনাটির গভীরে পৌঁছনোর জন্যই এঁদের পূর্ণ মেয়াদের পুলিশি হেফাজত দেওয়া হোক। যুক্তি হিসাবে সরকারি আইনজীবী দু’টি বয়ান পেশ করেছিলেন আদালতে। প্রথমে হস্টেলের রাঁধুনির কথা বলে তিনি জানান, ওই রাঁধুনি বিশদে বলেছেন, কী ভাবে প্রথম বর্ষের ছাত্রদের উপর হস্টেলে অত্যাচার করা হয়। পরে এক ছাত্রের কথাও জানান তিনি। ওই ছাত্রের নাম না করে সরকারি আইনজীবী বলেন, ওই ছাত্রও জানিয়েছেন, যাদবপুরের হস্টেলে ছাত্রদের উপর হওয়া অত্যাচারের কথা। এর পরই তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে এমন অত্যাচার চলে আসছে দীর্ঘ দিন ধরেই। অথচ এখনও এই ঘটনায় গ্রেফতার এক প্রাক্তনী এবং দুই পড়ুয়া এ ব্যাপারে বিশদে কিছুই জানাননি। রবিবার এর পরেই আদালত দু’জনকে ন’দিনের পুলিশি হেফাজত দেয়।

কী বললেন কমিশনের উপদেষ্টা

রবিবার মৃত পড়ুয়ার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের উপদেষ্টা অনন্যা। পরে তিনি জানান, এর আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ‘হোক কলরব’ আন্দোলন হয়েছিল, সে সময় যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল, সেখানে তিনি ছিলেন। তাঁরা সকলে মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসি ক্যামেরা বসানোর জন্য সুপারিশ করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্টার মেনে চলার পরামর্শও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তখন অনেকেই এ সবের বিরোধিতা করে‌ছিলেন বলে অভিযোগ। অনন্যা বলেন, ‘‘আমরা যখন সিসিটিভি বসাতে বলেছিলাম, ওখানকার এক অধ্যাপক ফুটপাতে ক্লাস নিতে শুরু করেন। ওখানে সিনিয়র এবং প্রাক্তনীদের দাদাগিরি চলে। কেউ তাঁদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পান না। এর আগে প্রাক্তন উপাচার্য সুরঞ্জন দাসও চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু অধ্যাপক এবং পড়ুয়ারা এর বিরোধিতা করেছিলেন। তাই আজকের ঘটনায় কেউ দায় এড়াতে পারেন না। সিসিটিভি থাকলে আমরা জানতে পারতাম হস্টেলে কী হয়েছিল। সকলের হাতেই রক্তের দাগ লেগে আছে। সকলেই আমাদের আতশকাচের নীচে। আমরা পৃথক ভাবে ঘটনার তদন্ত করছি।’’

কী বলছে দীপশেখরের পরিবার

রবিবার যে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে দীপশেখর দত্ত বাঁকুড়ার বাসিন্দা। ১৯ বছরের দীপশেখর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তাঁর বাবা-মা জানাচ্ছেন, রবিবার সকালে ছেলের গ্রেফতারির খবর পেয়েছেন। কিন্তু তাঁরা কিছুতেই বিশ্বাস করেন না যে, ছেলে খারাপ কোনও কাজ করতে পারেন। কারণ, ছোট থেকেই দীপশেখর পরোপকারী। মা সঙ্গীতা দত্ত বলেন, ‘‘সকালেই জানলাম আমার ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু ও কোনও ভাবে এমন ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে না। বরং ও হয়তো ছেলেটিকে (স্বপ্নদীপ) সাহায্য করতে গিয়েছিল। আমাকে ফোনও করেছিল। ও খুব ভয় পেয়ে আছে। ওকে আমি অনেক বুঝিয়েছি। আমি ওর পাশে আছি।’’ দীপশেখরের বাবা মধুসূদন বলছেন, ‘‘আমি চাই প্রকৃত দোষীরা যেন শাস্তি পান। তার মধ্যে যদি আমার ছেলে থেকে থাকে, তবে ও শাস্ত পাক। এক জন বাবা হিসেবে অন্যের কোল খালি হয়ে যাওয়া আমিও সহ্য করতে পারছি না। কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমার ছেলে নির্দোষ। এখন তদন্তের জন্য পুলিশ গ্রেফতার করতেই পারে। সত্যিটা সামনে আসুক।’’

কী বলছে মনোতোষের পরিবার

আর এক ধৃত মনোতোষের বাড়ি হুগলির আরামবাগে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিদ্যার দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রের বাবা শান্তিনাথ এবং মা টগর ঘোষ একটি ‘ফাস্ট ফুড’-এর দোকান চালান। মনোতোষের বাবা বলেন, ‘‘ছেলে একটা কথাই বলেছিল— ‘এই ঘটনায় পুলিশ আমাকে ডাকতে পারে। তোমরা চিন্তা কোরো না’।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘যাদবপুর থানায় ডেকেছে বলল ও। জানাল, ও যাবে, ভয়ের কোনও কারণ নেই।’’ তবে তাঁদের ছেলে কারও মৃত্যুর কারণ হতে পারেন না বলে দৃঢ় বিশ্বাস ঘোষ দম্পতির। মনোতোষ আরামবাগ হাই স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছেন। বাবা-মায়ের দাবি, ছেলে ছোট থেকে পড়াশোনায় খুব ভাল। বলেন, ‘‘কখনও কেউ কোনও দিন ছেলের নামে অভিযোগ করেনি।’’ প্রসঙ্গত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের ১০৪ নম্বর ঘরে থাকতেন ২০ বছরের মনোতোষ। মৃত পড়ুয়ার বাবা রামপ্রসাদ কুণ্ডুর দাবি, সৌরভ চৌধুরী নামে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী মনোতোষের সঙ্গে তাঁর ছেলের আলাপ করিয়ে দেন। তাঁর রুমে কিছু দিন অতিথি (গেস্ট) হিসেবে ছিলেন ছেলে। পরে অন্য একটি ঘরে থাকতেন তিনি।

ডায়েরিতে রহস্যময় চিঠি

উদ্ধার হওয়া ডায়েরির পাতায় লেখা চিঠি নিয়েও রহস্য দানা বাঁধতে শুরু করেছে। প্রকাশ্যে আসা চিঠিতে দেখা যাচ্ছে, সেটি বিভাগীয় সিনিয়রদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডিন অফ স্টুডেন্টস’কে লেখা হয়েছে। অভিযোগ তোলা হয়েছে যে, বিভাগীয় সিনিয়রেরা হস্টেলের পরিবেশ নিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছেন। চিঠিতে এক জনের নামও নেওয়া হয়েছে। তিনিই প্রথম বর্ষের পড়ুয়াকে ‘ভয় দেখানোর’ চেষ্টা করছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে চিঠিতে। ডিনকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করার আর্জিও চিঠিতে জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছে চিঠি ঘিরে। চিঠিতে তারিখ রয়েছে ১০ অগস্ট অর্থাৎ গত বৃহস্পতিবার। ঘটনাচক্রে, ৯ অগস্ট রাতে হস্টেলের নীচে প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়াকে গুরুতর আহত অবস্থায় পাোয়া যায়। এর পর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এর পর বৃহস্পতিবার হাসপাতালেই মারা যান তিনি। তা হলে চিঠি কবে লেখা হল, তা ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। চিঠিটির শেষে মৃত পড়ুয়ার নামে দু’টি সই কেন, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। শুধু তা-ই নয়, চিঠিটি যে হেতু ডিনের উদ্দেশে লেখা, তা হলে সেটি ডায়েরির পাতায় কেন লেখা হল? কেন সাদা এ৪ কাগজে লেখা হল না? এই প্রশ্নেরও উত্তরের খোঁজে তদন্তকারীরা। তদন্তকারীদের সূত্রেই জানা গিয়েছে, উদ্ধার হওয়া ডায়েরির পাতায় চিঠির পাশাপাশি মৃত পড়ুয়ার একাধিক সইও মিলেছে। পড়ুয়ার হাতের লেখা এবং সই রয়েছে, এমন বেশ কিছু খাতা, ডায়েরি এবং নথি ভাল করে খতিয়ে দেখে জানার চেষ্টা চলছে, চিঠিটির হাতের লেখা এবং সই কার? হাতের লেখা বিশারদকে দিয়ে সেগুলি পরীক্ষা করে দেখা হবে বলে খবর পুলিশ সূত্রে। যদি তা পড়ুয়ারই হয়ে থাকে, তা হলে তাঁকে ওই চিঠি লিখতে বাধ্য করা হয়েছিল কি না, তা-ও ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা চলছে। যদি সত্যিই তাকে দিয়ে জোর করে চিঠি লেখানো হয়ে থাকে, তা হলে তার পিছনে উদ্দেশ্য কী ছিল? এই প্রশ্নও ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।

(পশ্চিমবঙ্গ শিশু সুরক্ষা কমিশনের উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী রবিবার তাঁর একটি ফেসবুক পোস্টে যাদবপুরের মৃত ছাত্রের নাম না-লিখতে অনুরোধ করেছেন। এই মৃত্যুমামলা অপ্রাপ্তবয়স্কদের উপর যৌন নির্যাতন বিরোধী ‘পকসো’ আইনে হওয়া উচিত বলেও তাঁর অভিমত। কমিশনের উপদেষ্টার অনুরোধ মেনে এর পর আনন্দবাজার অনলাইন মৃত ছাত্রের নাম এবং ছবি প্রকাশে বিরত থাকছে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jadavpur University Student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE