Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Kidnap

ডলারে টাকা বদলে দিতে না পারায় ‘অপহরণ’, পিছনে কি হাওয়ালা-যোগ

জানা গিয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছে মহম্মদ আহিয়া (৫২) নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। বাঁশদ্রোণী থানার ব্রহ্মপুরে একটি ফ্ল্যাটে স্ত্রী ও চার সন্তানকে নিয়ে থাকেন তিনি।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:০৯
Share: Save:

ভারতীয় মুদ্রা আমেরিকান ডলারে বদলে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, তা করতে না পারায় এক ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখা, মারধর এবং শেষে মুক্তিপণ দাবি করার অভিযোগ উঠল তাঁর পরিবারের কাছ থেকে। মঙ্গলবার রাতের এই ঘটনায় বাঁশদ্রোণী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়। তদন্তে নেমে ওই থানার পুলিশ এবং লালবাজারের গুন্ডা দমন শাখার গোয়েন্দারা বুধবার ভোরে বনগাঁর বাগদা এলাকা থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করেন। উদ্ধার করা হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে। কিন্তু যে ভাবে টাকা লেনদেনের ঘটনা ঘটেছে, সেটাই ভাবাচ্ছে পুলিশকে। ঘটনায় হাওয়ালা-যোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে দাবি লালবাজারের একটি সূত্রের।

জানা গিয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছে মহম্মদ আহিয়া (৫২) নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। বাঁশদ্রোণী থানার ব্রহ্মপুরে একটি ফ্ল্যাটে স্ত্রী ও চার সন্তানকে নিয়ে থাকেন তিনি। আহিয়ার স্ত্রী লাইলা নাসরিন বলেন, ‘‘আমার স্বামী ওয়েস্ট বেঙ্গল ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান। একটি ল’ ফার্ম চালান। সেই কাজের সূত্রে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় অভিজিৎ বিশ্বাস এবং পার্থ নামে দু’জনের। তাঁরা আহিয়াকে বলেছিলেন, সাড়ে তিন লক্ষ টাকা আমেরিকান ডলারে পরিবর্তন করে দেওয়ার জন্য। দেড় লক্ষ টাকা বদলে দিতে পেরেছিলেন আহিয়া। বাকি দু’লক্ষ টাকা দিতে না পারায় ওঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল।’’

লাইলার দাবি, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরোন আহিয়া। বলেছিলেন, টাকা দিতে পারছেন না বলে তাঁকে দেখা করতে বলেছেন অভিজিৎ এবং পার্থ। বিকেলে স্ত্রীকে ফোন করে ওই ব্যক্তি জানান, তিনি কাঁচড়াপাড়া থেকে অভিজিৎ ও পার্থের সঙ্গে বনগাঁর দিকে যাচ্ছেন। ফিরতে দেরি হতে পারে। এ-ও বলে রাখেন, রাত আটটার পরে খোঁজ না পাওয়া গেলে স্ত্রী যেন থানায় যান। লাইলার কথায়, ‘‘রাত আটটার পর থেকেই ফোনে হুমকি দেওয়া হতে থাকে। বলা হয়, পাঁচ মিনিটের মধ্যে দু’লক্ষ টাকা না দিলে আমার স্বামীকে মেরে ফেলা হবে। ভয়ে রাত পৌনে ন’টা নাগাদ বাঁশদ্রোণী থানায় যাই।’’

রাতেই থানার একটি দল এবং গুন্ডা দমন শাখা তদন্তে নামে। যে ফোন থেকে লাইলার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল, সেটির টাওয়ারের অবস্থান দেখা শুরু করে পুলিশ। রাতেই পুলিশের একটি বিশেষ দল বনগাঁর উদ্দেশে রওনা দেয়। তাদের সঙ্গে ছিলেন আহিয়ার এক মেয়ে এবং এক প্রতিবেশী। বুধবার ভোর পাঁচটা নাগাদ পুলিশের দলটি পৌঁছয় বাগদা থানা এলাকার স্রোতেরখাল গ্রামে। দলে পুলিশেরই এক জন ছিলেন আহিয়ার ভাই সেজে।

পুলিশ সূত্রের খবর, এর পর ফোনে শুরু হয় দর কষাকষি। পুলিশের তরফে বলা হতে থাকে, টাকা আনা হয়েছে। কিন্তু আহিয়াকে না আনা পর্যন্ত টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। প্রায় দু’ঘণ্টা ফাঁকা মাঠে অপেক্ষা করানোর পরে সকাল সাতটা নাগাদ আহিয়াকে নিয়ে পৌঁছন দু’জন। তখনই আশপাশে অপেক্ষারত পুলিশকর্মীরা এলাকা ঘিরে ফেলেন। ধরা হয় অভিজিৎ এবং পার্থকে।

লালবাজার সূত্রের খবর, অপহরণের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হলেও পুলিশকে ভাবাচ্ছে টাকা লেনদেনের বিষয়টি। এক পুলিশকর্তা জানান, সাধারণত কোনও বিদেশি মুদ্রায় ভারতীয় টাকা বদল করতে হলে নির্দিষ্ট কারণ জানাতে হয়। এর পরে কোনও ব্যাঙ্ক বা লাইসেন্সপ্রাপ্ত সংস্থা থেকে টাকা বদল করানো যায়। বিদেশে যাওয়ার ব্যাপার থাকলেও কত টাকা বদল করে নিয়ে যাওয়া যাবে, তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে। সেই টাকা কোথায়, কী ভাবে খরচ হল, ফিরে এসে সেই হিসাবও দিতে হয়। ওই পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘সরকারি অনুমতি ছাড়া ভারতীয় টাকা ব্যতীত যে কোনও বিদেশি টাকা হাতে রাখাই বেআইনি। সে ক্ষেত্রে গোটা বিষয়টি ফরেন এক্সচেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট, ১৯৯৯-এর আওতায় পড়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে কেন টাকা বদল করতে চাওয়া হয়েছিল, হাওয়ালা-যোগ রয়েছে কি না— সবই দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kidnap police investigation arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE