Advertisement
১৭ মে ২০২৪
Child Death

পানিহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যু ১০ মাসের শিশুর, কারণ জানতে ময়না তদন্ত

দশ মাসের শিশুটির মৃত্যুর কারণ জানতে হাসপাতালের কথা মতো ময়না তদন্তে সম্মতি জানান শিশুটির পরিজনেরা। বুধবার কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে দেহের ময়না তদন্ত হয়েছে।

An image of a baby

—প্রতীকী চিত্র।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২৩ ০৭:৩৯
Share: Save:

টিকা নেওয়ার পরে সামান্য জ্বর এসেছিল দশ মাসের শিশুটির। কিন্তু ক্রমেই তা বাড়তে থাকে। এক সময়ে শুরু হয় শ্বাসকষ্টও। তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়েও শেষরক্ষা হয়নি। ক্রিটিক্যাল কেয়ারের ভেন্টিলেশনে রাখা সত্ত্বেও ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে মৃত্যু হয় তার! যদিও এই মৃত্যুর সঙ্গে টিকার আদৌ কোনও সম্পর্ক আছে কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন চিকিৎসকেরা।

মৃত্যুর কারণ জানতে হাসপাতালের কথা মতো ময়না তদন্তে সম্মতি জানান শিশুটির পরিজনেরা। বুধবার কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে দেহের ময়না তদন্ত হয়েছে। পাশাপাশি, শিশুটির বিভিন্ন অঙ্গ থেকে প্রায় ৩৭টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মৃত্যুর কারণ জানতে সেগুলি বিশ্লেষণ করা হবে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সমস্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা করবেন টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খতিয়ে দেখার কাজে নিযুক্ত জেলা স্তরের কমিটির সদস্যেরা। তার পরে সেটি পাঠানো হবে রাজ্য স্তরের কমিটির কাছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘শিশুটি কেন মারা গেল, তা জানতে ময়না তদন্ত হয়েছে। অন্যান্য নমুনাও পরীক্ষা করা হচ্ছে। টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটে থাকলে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’’

শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ বলেন, ‘‘একসঙ্গে তিন-চারটি টিকা নেওয়ার ক্ষমতা শরীরের রয়েছে। ওই শিশুর ক্ষেত্রে টিকার কারণেই এমনটা ঘটেছে, তা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না। বিচ্ছিন্ন এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কেউ যেন শিশুর টিকাকরণ বন্ধ না রাখেন।’’ তাঁর কথায়, ‘‘হতে পারে, শিশুটির জ্বর অন্য কারণে এসেছিল। আমার ব্যক্তিগত মত, জ্বর বা কোনও শারীরিক অসুস্থতায় টিকা না নেওয়াই ভাল। পরবর্তী সময়ে ওই সমস্যা নিজের ছন্দে বৃদ্ধি পেলেও সেটিকে টিকার কারণ ভাবা হয়।’’

ঘোলা বাজার এলাকার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ দে ও শম্পা দে-র একমাত্র সন্তান আবির। গত ১২ জুন দশ মাসের ওই শিশুটিকে পানিহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে হাম-রুবেলা ও জাপানি এনসেফেলাইটিস এবং ইনজেকটেবল পোলিয়ো টিকা দেওয়া হয়। কাকা প্রসেনজিৎ জানাচ্ছেন, ওই দিনই রাতে হালকা জ্বর আসে আবিরের। টিকা নেওয়ার পরে যা স্বাভাবিক বলেই ধরেছিলেন বাড়ির সকলে। মঙ্গলবার থেকে জ্বর বাড়তে থাকে। রাতে আচমকাই শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। বুধবার ভোরে দুধ খেতেও কষ্ট হচ্ছিল শিশুটির। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ তাকে সাগর দত্তে নিয়ে আসা হয়। প্রসেনজিৎ বলেন, ‘‘ভাইপোর শারীরিক অবস্থা খুব যে খারাপ ছিল, তা নয়। পেডিয়াট্রিক ওয়ার্ডে ভর্তি নিলেও পরে ডাক্তারেরা জানান, আইসিইউ-তে দিতে হবে। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যে সব শেষ হয়ে যাবে, ভাবতে পারিনি।’’ তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, শিশুটির শারীরিক অবস্থার জরুরি মাপকাঠির ক্রমেই অবনতি হচ্ছিল। তাই ক্রিটিক্যাল কেয়ারে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। তাতেও লাভ হয়নি। প্রসেনজিৎ বলেন, ‘‘প্রত্যেক চিকিৎসকই জানান, ওর জন্মগত কোনও ত্রুটি ছিল না। তা হলে ঠিক কী কারণে ও চলে গেল, তা জানতে ময়না তদন্তে রাজি হই।’’

জন্মের পর থেকে আবিরকে পানিহাটির ওই হাসপাতালেই সমস্ত টিকা দেওয়ানো হয়েছে। সূত্রের খবর, মাস ছয়েক আগে আবিরের এলাকার আর একটি শিশুরও ওই হাসপাতালে টিকা নেওয়ার পরে জ্বর আসে ও পা অসাড় হতে শুরু করে। শেষে শিশুটির মৃত্যু হয়। যদিও তা স্বাস্থ্য দফতরে নথিভুক্ত হয়নি। জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, ‘‘অন্য কোনও ঘটনার কথা জানি না। এ সব ঘটনার তথ্য গোপন করলে চলবে না। বৃহত্তর স্বার্থেই এগুলির নথিভুক্তি ও বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Child death Autopsy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE