Advertisement
০৪ মে ২০২৪

সম্পর্ক ঘিরে বচসা, সরোবরে ঝাঁপ প্রেমিকের

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুরের ওই তরুণীর সঙ্গে পটনার বাসিন্দা ওই যুবকের ঘনিষ্ঠতা ছিল। তরুণী সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করেন। পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকেন পূর্ব কলকাতার একটি জায়গায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৭ ০২:৪৭
Share: Save:

এক যুবক এবং এক তরুণীকে পাশাপাশি সামনে হেঁটে আসতে দেখে সাইকেলের গতি কমিয়েছিলেন ফুলবাগান থানার হোমগার্ড রঞ্জিত প্রামাণিক। তাঁদের জায়গা দেওয়ার জন্য বাঁ দিকে একটু সরতেই তিনি দেখলেন, যুবকটি সোজা গিয়ে ঝাঁপ দিলেন সুভাষ সরোবরে। কিছু ক্ষণের জন্য হকচকিয়ে গিয়েছিলেন রঞ্জিতবাবু। সম্বিৎ ফেরার পরে তিনি দেখেন, সরোবরের জলে হাবুডুবু খাচ্ছেন ওই যুবক। তা দেখে রঞ্জিতবাবুও ঝাঁপ দিলেন জলে।

হাত তিনেক সাঁতরে তিনি যুবকের ঘাড় ধরে টেনে তুলে আনলেন পাড়ে। ওই তরুণী তত ক্ষণে দু’হাত দিয়ে মুখ-চোখ ঢেকেছেন।

রবিবার বিকেল পাঁচটার ঘটনা। সরোবর থেকে উদ্ধার করার পরে ওই যুবক ও তরুণীকে নিয়ে রঞ্জিতবাবু সটান হাজির হন ফুলবাগান থানার ওসি পীযূষ কুণ্ডুর ঘরে।

ঠিক কী ঘটেছিল?

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুরের ওই তরুণীর সঙ্গে পটনার বাসিন্দা ওই যুবকের ঘনিষ্ঠতা ছিল। তরুণী সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করেন। পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকেন পূর্ব কলকাতার একটি জায়গায়। ওই যুবকও কাজ
করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। তিনিও পেয়িং গেস্ট থাকেন পূর্ব কলকাতা এলাকায়।

পুলিশের দাবি, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পরে ওই যুবক জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে তরুণীর বহু দিনের বন্ধুত্ব। কিন্তু সম্প্রতি সেই বন্ধুত্বে চিড় ধরেছিল। ওই তরুণী তাঁকে জানিয়ে দেন, সম্পর্কে ইতি টানতে হবে।

তদন্তকারীরা জেনেছেন, রবিবার বিকেলে সুভাষ সরোবরে শেষ বারের মতো দেখা করার কথা ছিল তাঁদের। যুবক পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি হাঁটতে হাঁটতে চেষ্টা করছিলেন কথা বলে সম্পর্ক জোড়া লাগানোর। কিছু ক্ষণ চেষ্টা করেও সফল না হয়ে তিনি রেগে জলে
ঝাঁপ দেন।

রঞ্জিতবাবু জানান, জল থেকে তুলে আনার পরে তিনি যুবককে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তিনি সাঁতার জানতেন কি না। উত্তরে যুবক জানান, তিনি একেবারেই সাঁতার জানতেন না।

তা হলে জলে ঝাঁপ দিলেন কেন? রঞ্জিতবাবুর দাবি, যুবক তাঁকে জানান, সম্পর্ক আর জোড়া লাগবে না, তা বুঝতে পেরেই রাগের চোটে ‘মাথা ঠিক রাখতে পারেননি’ তিনি।

তরুণী পুলিশকে কি জানিয়েছেন? সূত্রের খবর, যুবকটি যে সোজা জলে ঝাঁপ দেবেন তা ঘুণাক্ষরেও আন্দাজ করতে পারেননি তিনি। যখন বুঝতে পারেন কী ঘটেছে, লজ্জায় ও ভয়ে রীতিমতো আড়ষ্ট হয়ে যান ওই তরুণী।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, যুবক অথবা তরুণী কেউই কারও বিরুদ্ধে মৌখিক বা লিখিত অভিযোগ জানাননি। সে কারণে ঘটনার বিবরণ জেনারেল ডায়েরিতে নথিভুক্ত করে দু’জনকেই বাড়ি চলে যেতে দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, মাস তিনেক আগে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়ার আদালতে আগাম জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন নদিয়ার এক তরুণী। এক যুবকের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।
কিন্তু তরুণী সম্পর্ক রাখতে না চাওয়ায় গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হন ওই যুবক। তাঁর বাবা তরুণীর বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তার জেরেই ওই তরুণী আগাম জামিনের আবেদন জানান আদালতে। তরুণীর আইনজীবী কল্লোল মণ্ডল জানান, ওই মামলায় বিচারপতি আগাম জামিন মঞ্জুর করে মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘কাউকে ভালবাসা যেমন মৌলিক অধিকার, কাউকে ভাল না বাসাও কিন্তু মৌলিক অধিকার!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE