ফ্ল্যাটে সিসিটিভির ফুটেজ দেখছেন অভিনেত্রী। — নিজস্ব চিত্র।
চুরি-ডাকাতি-খুনের মতো নানা অপরাধে বাড়ির পরিচারকের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে বিভিন্ন ঘটনায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, পরিচারকদের সম্পর্কে যথাযথ তথ্য পুলিশ বা গৃহকর্তা কারও কাছেই নেই। এবং প্রতি বারই পুলিশ মনে করিয়ে দিয়েছে, নিজেদের নিরাপত্তার খাতিরেই নিয়ম মেনে থানায় পরিচারকের ছবি-সহ তথ্য জমা রাখা জরুরি। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে নাগরিকদের সচেতনতায় একটা বড়সড় ফাঁকই যে এ ধরনের অপরাধের দরজা খুলে দিচ্ছে, তা কার্যত ফের চোখে আঙুল দেখিয়ে দিল অভিনেত্রী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে একটি চুরির ঘটনা। অসচেতন হওয়ার এই প্রবণতা যে সমাজের সর্বস্তরেই রয়েছে, এই ঘটনা তারও প্রমাণ। একই ভাবে ফ্ল্যাটবাড়িগুলিতে নিযুক্ত বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীরা আদৌ কতটা প্রশিক্ষিত ও বিশ্বাসযোগ্য, এই ঘটনায় প্রশ্ন তুলছে তা নিয়েও।
পুলিশ জানায়, শনিবার ট্র্যাঙ্গুলার পার্কের কাছে পণ্ডিতিয়া রোডে ওই অভিনেত্রীর ফ্ল্যাট থেকে নগদ টাকা ও গয়না চুরি হয়। রাতেই বাড়ির পরিচারিকার নামে লেক থানায় অভিযোগ দায়ের করেন রচনা। তবে ওই পরিচারিকার কোনও তথ্যই আগে থানাকে দিয়ে রাখেননি তিনি। বরং এই ঘটনার পরে নিজেই মানছেন পুলিশকে তথ্য দেওয়ার বিষয়টি তাঁর জানাই ছিল না। রচনার আক্ষেপ, ‘‘আগে জানলে নিশ্চয়ই পুলিশকে তথ্য দিয়ে আসতাম। এ বার ঠেকে শিখলাম।’’
পুলিশ সূত্রে খবর, তেরো তলা ফ্ল্যাটটির তিনতলায় গত চার বছর ধরে ছেলে প্রণীল বসু ও পরিচারিকা সবিতা মণ্ডলের সঙ্গে থাকেন রচনা। শনিবার বিকেলে ছেলেকে নিয়ে বেরোন তিনি। রাতে ফিরে দেখেন— ফ্ল্যাটের দরজা খোলা, সবিতা বাড়িতে নেই। শোয়ার ঘরে ড্রয়ার থেকে নগদ টাকা ও গয়না উধাও। সঙ্গে সঙ্গে লালবাজারের এক পুলিশকর্তাকে ফোন করেন রচনা। রাতেই লেক থানার পুলিশ রচনার ফ্ল্যাটে তদন্তে আসে। বাড়ির পরিচারিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন অভিনেত্রী।
তবে এই ঘটনায় রবিবার ফ্ল্যাটের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন রচনা। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ফ্ল্যাটের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বাবদ মাসে ৬ হাজার টাকা দিই। ফ্ল্যাট থেকে এক জন পরিচারিকা ব্যাগে টাকা-গয়না নিয়ে চলে গেল। গেটের রক্ষীরা কী করছিলেন?’’ অভিনেত্রীর আরও অভিযোগ, তাঁর ফ্ল্যাটের সামনে সিসিটিভি ক্যামেরা বহু দিন ধরে খারাপ। ফ্ল্যাট পরিচালন সমিতিকে বলেও কাজ হয়নি। ফ্ল্যাট তদারকির দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার অরিন্দম দে সুরক্ষায় খামতির কথা মেনে বলেন, ‘‘ওই পরিচারিকা ফ্ল্যাট থেকে বেরোনোর সময়ে তাঁর ব্যাগ তল্লাশি করেননি নিরাপত্তারক্ষীরা। এটা বড় গাফিলতি। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
গত দেড় বছর ধরে সবিতা তাঁর বাড়িতে কাজ করছেন বলে এ দিন জানান রচনা। আগে পাশের ফ্ল্যাটেই কাজ করতেন ওই পরিচারিকা। রচনার কথায়, ‘‘সবিতা বর্ধমানের কালনার বাসিন্দা। এর বেশি কিছু জানা নেই। ওঁদের সবিস্তার তথ্য নেওয়া যে জরুরি, এখন বুঝছি।’’
রচনা আরও বলেন, ‘‘অন্য দিন ফ্ল্যাট থেকে বেরোলে শোয়ার ঘরের দরজায় তালা দিয়ে যেতাম। শনিবার ভুলে যাই। সেই সুযোগেই পরিচারিকা ড্রয়ারের চাবি খুলে টাকা-গয়না নিয়ে পালাল।’’ এক পুলিশকর্তার কথায়, শহরের বিভিন্ন ফ্ল্যাটে কর্মরত পরিচারকদের সব তথ্য স্থানীয় থানায় জমা দেওয়ার কথা নাগরিকদের। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা মানা হয় না। ওই পুলিশকর্তার কথায়, পুলিশের কাছে থাকলে তথ্য থাকলে পরবর্তী ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা হয়। বিশেষত ফ্ল্যাটে চুরির ঘটনায় পরিচারিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ হলে অভিযুক্তকে খুঁজতে সমস্যা হয় না।
শনিবার রাতেই ওই ফ্ল্যাটের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। গোয়েন্দাপ্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ জানান, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy