বিপজ্জনক ভাবে বেরিয়ে থাকা কেবল সংযোগের তারের পাশ দিয়েই যাতায়াত বেহালায়। ছবি রণজিৎ নন্দী ও শৌভিক দে।
তারের জটে জর্জরিতই শহর!
চলতি বছরের প্রথম দিনেই পার্ক সার্কাস চার নম্বর সেতুতে বাতিস্তম্ভে ঝুলতে থাকা তারের কুণ্ডলী জড়িয়ে মৃত্যু হয়েছিল এক মোটরবাইক আরোহীর। এই ঘটনার পরেই শহরের বিভিন্ন ট্র্যাফিক গার্ড ও কলকাতা পুরসভার তরফে কেব্ল অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছিল। পুলিশ সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, রাস্তায় বিপজ্জনক ভাবে তারের কুণ্ডলী ঝোলানো থাকলে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সংশ্লিষ্ট কেব্ল অপারেটরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করবে। পুরসভার কেব্ল অপারেটরদেরও সতর্ক করেছিল।
সেই বৈঠকের পরেও পেরোতে চলল আট মাস। শহরের তার-চিত্র অবশ্য বিন্দুমাত্রও বদয়ালনি। টালা থেকে টালিগঞ্জ, বেহালা থেকে বেলেঘাটা— শহরের প্রায় সর্বত্র বাতিস্তম্ভ থেকে বিপজ্জনক ভাবে তারের কুণ্ডলী ঝুলছে। এর জেরে যেমন দৃশ্যদূষণ হচ্ছে, তেমনই থাকছে বড় বিপদের আশঙ্কাও।
সল্টলেকে তারের জট। ছবি রণজিৎ নন্দী ও শৌভিক দে।
শহরের অন্যান্য এলাকা তো বটেই, খোদ কলকাতা পুলিশের সদর দফতর লালবাজারের সামনেও বাতিস্তম্ভের সঙ্গে বিপজ্জনক ভাবে কেব্লের তারের কুণ্ডলী ঝুলে থাকতে দেখা গিয়েছে। লালবাজার স্ট্রিট ও বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের মোড়ে বাতিস্তম্ভের নীচে রাস্তার পাশে তার প়ড়ে থাকতে দেখা গেল। স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, ‘‘তারের কুণ্ডলী বিপজ্জনক ভাবে পড়ে থাকায় আগে একাধিক বার পায়ে জড়িয়ে অনেকে হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়েছেন। পুলিশের সদর দফতরের সামনেই এই হাল হলে গোটা কলকাতার অবস্থা কী, তা তো বুঝতেই পারছেন।’’
একই চিত্র শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে। বেহালা থানার সামনে, ডায়মন্ড হারবার রোডে, কালীঘাটের হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট, পার্ক স্ট্রিট, ডি এল খান রোড, গড়িয়াহাট বা ধর্মতলা সংলগ্ন এস এন ব্যানার্জি রোড, লেনিন সরণি, মৌলালির সামনে এ জে সি বসু রোড থেকে শুরু করে ডালহৌসি এলাকার অধিকাংশ রাস্তার বাতিস্তম্ভে বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে রয়েছে তারের কুণ্ডলী। অথচ আট মাস আগে পুলিশের সঙ্গে বিভিন্ন কেব্ল অপারেটরের বৈঠকের পরে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, পরিত্যক্ত তারের কুণ্ডলী রাস্তায় বা ফুটপাতে পাকিয়ে না রেখে পুরসভার ভ্যাটে ফেলতে হবে। পাশাপাশি বলা হয়েছিল, রাস্তার উপর দিয়ে যাওয়া টিভি-র তার কমপক্ষে কুড়ি ফুট উচ্চতায় রাখতে হবে। যাতে তা কোনও ভাবেই মালবাহী গাড়িতে আটকে বিপদ না ঘটায়। কিন্তু ওই বৈঠক যে কার্যত নিষ্ফলা, তারই প্রমাণ দিচ্ছে শহরের বিভিন্ন রাস্তা। এমনকি কলকাতা পুরসভার তরফেও দফায় দফায় বৈঠক করে কেব্ল অপারেটরদের সতর্ক করা হয়েছিল। গত জানুয়ারিতে পার্ক সার্কাস উড়ালপুলে দুর্ঘটনার পরে মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার কেব্ল অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তা সত্ত্বেও পরিস্থিতি বদলায়নি। এ প্রসঙ্গে মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমারের দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি নিজে হস্তক্ষেপ করার পরে মাটির নীচে তার পাতার কাজ শুরু হয়েছে। বিধাননগরের কাজ শেষ হওয়ার পরে কলকাতায় কাজ শুরু হবে।’’
আট মাস আগে পুলিশের তরফে এই নির্দেশ জারি হলেও পুলিশ কেন সংশ্লিষ্ট কেব্ল অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি? এ প্রসঙ্গে ডিসি (ট্র্যাফিক) সুমিত কুমারকে একাধিক বার ফোন করা হলে তাঁর ফোন বেজে গিয়েছে। জবাব মেলেনি এসএমএসের। শহরের মাল্টি সার্ভিস অপারেটরদের (এমএসও) অবশ্য দাবি, পরিত্যক্ত তার রাস্তায় পড়ে থাকলে কেব্ল অপারেটরের কর্মীরা তা সরিয়ে দেন। পাশাপাশি তাঁদের দাবি, শুধু কেব্ল টিভি-র তারই নয়, একাধিক সংস্থার তার বাতিস্তম্ভে জড়িয়ে রয়েছে। বিভিন্ন বাতিস্তম্ভ জুড়ে ঝুলতে থাকা তারের প্রসঙ্গে শহরের অন্যতম বড় একটি এমএসও-র কর্তা সুরেশ শেঠিয়া বলেন, ‘‘আমাদের যাবতীয় তার যাতে মাটির তলায় থাকে, তার জন্য বিধাননগর পুর এলাকায় কাজ চলছে। ওই কাজ শেষের মুখে। বিধাননগরের কাজ শেষ হলেই কলকাতায় মাটির তলায় তার পাতার কাজ শুরু হবে। প্রথমেই হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট, পার্ক স্ট্রিট, গড়িয়াহাটে কাজ হবে, তার পরে হবে শহরের অন্যান্য এলাকায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy