প্রতীকী ছবি।
লাইসেন্স না-থাকলে কেনা যাবে না মোটরবাইক-স্কুটার। পথ দুর্ঘটনা এড়াতে রাজ্য সরকারের জারি করা এই কড়া নিয়মই এখন ঠান্ডা ঘরে। শহর এবং শহরতলি ঘুরে দেখা গেল, সর্বত্র লাইসেন্স ছাড়াই দেদার বিক্রি হচ্ছে বাইক। নিয়মকানুন রয়েছে কেবল খাতায়-কলমে। লাইসেন্স আছে কি না, জানতে চাওয়া তো দূর, যিনি কিনতে এসেছেন, তিনি মোটরবাইক চালাতে পারেন কি না, এই সামান্য প্রশ্নটাও করা হচ্ছে না কোথাও!
করোনা অতিমারির পরিস্থিতিতে ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে চাহিদা বেড়েছে দু’চাকার যানের। কিন্তু, লাইসেন্স পাওয়া বা আবেদনই না-করার আগে কাউকে এ ভাবে মোটরবাইক বিক্রিতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি দেখছেন অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, দালাল চক্রের দাপটে অপটু হাতেও লাইসেন্স পৌঁছে যায় বলে ভূরি ভূরি অভিযোগ ওঠে। অনেক ক্ষেত্রেই আবার শোনা যায়, টাকা ঢালতে পারলে দাদাদের কল্যাণে পরীক্ষা না-দিয়েও হাতে লাইসেন্স পৌঁছে যায়। সেখানে এ বার সরকারি নিয়মকেই বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এ ভাবে মোটরবাইক বিক্রি হলে দুর্ঘটনা রুখবে কে?
পরিবহণ দফতর জানাচ্ছে, এমনি সময়ে রাজ্যে এক মাসে প্রায় এক লক্ষ মোটরবাইক-স্কুটার বিক্রি হয়। তবে গত পয়লা জুন থেকে এ পর্যন্ত শুধু কলকাতাতেই প্রায় ৩২ হাজার বাইক-স্কুটার বিক্রি হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, প্রথমে পরিবহণ দফতরের ওয়েবসাইটে গাড়ি বিক্রির সমস্ত কাগজপত্র আপলোড করতে হয় ডিলারকে। আবেদনে পাঠানো ছবির সঙ্গে বাইকের খুঁটিনাটি মিলিয়ে দেখে সেটি রিজিয়োনাল ট্রান্সপোর্ট অথরিটি-র (আরটিও) অফিসে পাঠিয়ে দেন মোটর ভেহিক্লস দফতরের টেকনিক্যাল অফিসারেরা। সব খতিয়ে দেখে আরটিও অফিস থেকে রেজিস্ট্রেশনের ছাড়পত্র দেওয়া হয় ডিলারকে। ডিলার নম্বর প্লেট বানিয়ে সেই প্লেটের ছবি ফের আপলোড করেন পরিবহণ দফতরের সাইটে। এর পরে তা খতিয়ে দেখে চূড়ান্ত রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট বা আর সি বুক দেওয়া হয়। পরিবহণ দফতরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, ‘‘যিনি কিনতে চাইছেন, তাঁর লাইসেন্স না-থাকলে বাইকের রেজিস্ট্রেশনই হবে না। অন্তত লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন দেখাতে পারলেও ছাড় দিচ্ছি। সেটাও না-থাকলে ওই বাইক কেনাই বেআইনি।’’ কিন্তু তা হলে দেদার বাইক বিক্রি হচ্ছে কী ভাবে? কোনও উত্তর মেলেনি ওই আধিকারিকের থেকে।
দিন কয়েক আগেই ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে অফিস যাওয়ার জন্য মোটরবাইক কিনেছেন উল্টোডাঙার অভিজিৎ দাস। তাঁর দাবি, কেনার সময়ে ডিলার তাঁকে লাইসেন্স আছে কি না, তা জিজ্ঞাসা করেননি। উল্টে বলেছেন, ‘‘এখন ও সব আর লাগে না।’’ বাইক কেনার পরের দিনই নিজের মোবাইলে একটি মেসেজ পান অভিজিৎ। তিনি ভাবেন, ডিলার রেজিস্ট্রেশনের আবেদন করায় মেসেজ এসেছে। এর পরে নিজে দালাল মারফত লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে গিয়ে তিনি দেখেন, ফের একই মেসেজ এসেছে মোবাইলে। দালাল এর পরে অভিজিৎকে জানান, তড়িঘড়ি বাইক বেচতে গিয়ে কিছু না-জানিয়েই ডিলার তাঁর নামে একটি লাইসেন্সের আবেদন করে দিয়েছিলেন। পরিবহণ দফতরও ওই আবেদন দেখেই ছাড়পত্র দিয়ে দিতে পারত।
অভিজিতের প্রশ্ন, ‘‘গ্রাহক হিসেবে বিষয়টি আমাকে জানানো উচিত ছিল! আমি লাইসেন্স ছাড়া বেরোচ্ছি না। কিন্তু কমবয়সি কেউ বিনা বাধায় বাইক পেয়ে গেলে কি বাড়িতে বসে থাকবেন?’’ কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পরিবহণ দফতরেরই বিষয়টি দেখার কথা। কিন্তু লাইসেন্স ছাড়া রাস্তায় নামলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ পরিবহণ দফতরের কেউই অবশ্য এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি। পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী শুধু বলেন, ‘‘বিষয়টি দেখব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy