পরিবেশমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। — ফাইল চিত্র।
চলতি বছরে কালীপুজোর মরসুমে শব্দবাজি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। কলকাতা-সহ রাজ্যের একাধিক জায়গায় শব্দবাজি ফেটেছে। যার ভিত্তিতে শহরের মধ্যে বেশ কয়েকটি ‘হটস্পট’ও চিহ্নিত করা হয়েছে। এই প্রবণতা রুখতে সংশ্লিষ্ট এলাকার থানাকে পরবর্তী পুজোর মরসুমের আগে বাড়তি সতর্ক করা হবে। বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক বৈঠকে শব্দবাজি ফাটা নিয়ে এমনটাই জানালেন রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। তাঁর কথায়, ‘‘শব্দবাজি একেবারে ফাটেনি, তা কখনওই বলছি না। কিন্তু চলতি বছরে অনেক কম বাজি ফেটেছে।’’
যদিও পরিবেশকর্মীদের একাংশের প্রশ্ন, সবুজ বাজি ছাড়া অন্য সব ধরনের শব্দবাজি নিষিদ্ধ। সেই জায়গায় যদি কয়েকটি বাজিও ফেটে থাকে, তা হলে কি আদালতের রায় লঙ্ঘন করা হল না? তা ছাড়া, পর্ষদ-চিহ্নিত ‘হটস্পট’ই বলে দিচ্ছে, কোথায় কোথায় শব্দবাজির দাপট সীমা ছাড়িয়েছে। এর মাধ্যমে কার্যত শব্দবাজি ফাটার অভিযোগকে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ মান্যতা দিল বলেই মনে করছেন পরিবেশকর্মীদের একাংশ।
যেমন পর্ষদের রিপোর্টই জানাচ্ছে, কলকাতা পুলিশ এলাকায় ট্যাংরা, ফুলবাগান, নেতাজিনগর, বেহালা, চারু মার্কেট, টালা, পর্ণশ্রী, শ্যামপুকুর, কসবা, আনন্দপুর, যাদবপুর, বালিগঞ্জ, দমদম, টালিগঞ্জ, আলিপুর, নারকেলডাঙা, আমহার্স্ট স্ট্রিট, ভবানীপুরের মতো এলাকা থেকে শব্দবাজি ও জোরে মাইকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। আবার, রাজ্য পুলিশের মধ্যে নাগেরবাজার, বেলঘরিয়া, লেক টাউন, বারুইপুর, উত্তরপাড়া, খড়দহ, লিলুয়া, শিবপুর, বিধাননগর পূর্ব, হাওড়া, আরামবাগ, চন্দননগর-সহ একাধিক এলাকা রয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর সাধারণ সম্পাদক নব দত্ত বলছেন, ‘‘কালীপুজো, ছটপুজোয় মানুষের উপস্থিতিতে বাজি ফেটেছে, ডিজে বেজেছে। সরকার তা অস্বীকার করবে কী ভাবে?’’
তবে এ দিন পরিবেশমন্ত্রী দূষণ নিয়ন্ত্রণে আগামী দিনে যে পদক্ষেপের কথা বলেছেন, তাকে স্বাগত জানাচ্ছেন অনেকে। কারণ, শব্দবাজি নিয়ন্ত্রণে শাস্তির পরিবর্তে সরকার কেন প্রতি বছর অনুরোধ এবং সচেতনতার কথা বলে, এই প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী সাফ বলেন, ‘‘যদি কেউ বা কারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বাজি ফাটায়, তা হলে সরকার দর্শক হয়ে থাকবে না। আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।’’ এ ক্ষেত্রে ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তিও ছাড় পাবেন না বলে দাবি তাঁর।
যার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশবিদদের একাংশ জানাচ্ছেন, প্রভাবশালী ব্যক্তি মানে ক্ষমতাসীন শাসকদলেরই কোনও সদস্য। ফলে তিনি নিয়ম ভাঙলে শাস্তি পাবেন, এই কথাটা প্রকাশ্যে বলতে ‘সাহস’ লাগে। সেটা মন্ত্রী দেখিয়েছেন। এক পরিবেশবিজ্ঞানী জানাচ্ছেন, মানস ভুঁইয়া বেশি দিন হল দফতরের দায়িত্ব পাননি। তার মধ্যেই চেষ্টা করছেন। এ বার পর্ষদের অন্যেরাও কাজটা ঠিক মতো করলে শব্দবাজির উৎপাত থেকে মানুষ মুক্তি পাবেন। ওই বিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘কিন্তু দুর্ভাগ্য, পর্ষদের শীর্ষ কর্তাদের মধ্যে উদ্যোগ ও পরিকল্পনার ঘাটতি রয়েছে।’’
পরিবেশমন্ত্রী এ দিন আরও বলেন, ‘‘চলতি বছরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণে আগামী বছরের ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আগামী সপ্তাহ থেকেই কাজ শুরু হবে।’’ পঞ্চায়েত, পুর নিগম, পুরসভা, পুলিশ, পর্ষদ, জেলা কর্তৃপক্ষ, পরিবেশকর্মীদের সংগঠন, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, জনপ্রতিনিধি, সাধারণ নাগরিক-সহ সমাজের সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সংশ্লিষ্ট প্ল্যান তৈরি করা হবে। এ দিন সবুজ বাজি তৈরির কারখানা প্রসঙ্গে মন্ত্রী জানান, রাজ্যে সবুজ বাজির কারখানা তৈরির জন্য যে কেউ আবেদন করতে পারেন। তাঁর কথায়, ‘‘বাইরে থেকে কেন সবুজ বাজি আসবে? এই বাজি বাংলায় তৈরি হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy