সকালে কসবার একটি বুথে ভোটারদের লাইন। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
ভোটের আগে জনমত সমীক্ষায় যা পূর্বাভাস ছিল, ভোটের পরে বুথ-ফেরত সমীক্ষাতেও একই ইঙ্গিত মিলল। জনমত সমীক্ষা ইঙ্গিত দিয়েছিল, ১৩০টি ওয়ার্ডে জিতে কলকাতা পুরসভা দখলে রাখতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর বুথ-ফেরত সমীক্ষা দেখাচ্ছে, তৃণমূলের দখলে আসতে পারে ১৩১টি ওয়ার্ড। দুই সমীক্ষাই বিজেপির ভাগে ১৩টি ওয়ার্ড যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
প্রায় গোটা কলকাতা জু়ড়েই রবিবার পুরভোটের দিন বুথ দখল, জাল ভোট ও গা-জোয়ারির অভিযোগে সরব বিরোধীরা। এই ভোটকে ‘প্রহসন’ বলে আখ্যা দিয়েছে সব বিরোধী দলই। বিজেপি গোটা পুরভোটই বাতিল করার দাবি তুলেছে। অথচ এবিপি আনন্দ-সি ভোটারের বুথ-ফেরত সমীক্ষা দেখাচ্ছে, যাদের বিরুদ্ধে গা-জোয়ারির অভিযোগ, সেই শাসক দলের জয়ের আসন কার্যত একই থাকছে! শুধু বামেদের দিতে একটি ওয়ার্ড যাওয়ার যে ইঙ্গিত জনমত সমীক্ষায় ধরা পড়েছিল, বুথ-ফেরত সমীক্ষায় এসে তা চলে গিয়েছে তৃণমূলের দিকে। বিজেপির সম্ভাব্য ওয়ার্ড-সংখ্যা একই থাকছে। বরং, তাদের ভোটপ্রাপ্তির হার প্রায় ৪% বাড়তে পারে বলে বুথ-ফেরত সমীক্ষার ইঙ্গিত। এই পরিসংখ্যান সামনে রেখে তৃণমূলের প্রশ্ন, তা হলে ভোটের দিন ‘সন্ত্রাসের’ অভিযোগ তো বুথ-ফেরত সমীক্ষার ফলেই নাকচ হয়ে যাচ্ছে! বিরোধীরা আবার পাল্টা বলছে, যেখানে প্রহসন হয়েছে, সেখানে বুথ-ফেরত সমীক্ষা আরও ‘অর্থহীন’।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, বুথ-ফেরত সমীক্ষায় এ দিন দেখা যাচ্ছে, উত্তর ও মধ্য কলকাতায় বিজেপি ৭টি ওয়ার্ড জিততে পারে। আর দক্ষিণ কলকাতার একটি অংশে তারা পেতে পারে ৩টি ওয়ার্ড। জনমত সমীক্ষায় ওই বরোগুলিতে অ-বাংলাভাষী অধ্যুষিত এলাকায় বিজেপির একই রকম ফলের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। ভোটে বড়বাজার-সহ ওই ধরনের বেশ কিছু এলাকায় জাল ভোট ও অশান্তির অভিযোগ উঠেছে দিনভর। কিন্তু বুথ-ফেরত সমীক্ষায় তার কার্যত প্রতিফলন নেই। বিজেপির ফলেও তার প্রভাব নেই।
এই তথ্যের প্রেক্ষিতেই তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য ‘‘আমার ধারণা, আরও বেশি আসন পাব। তবে জনমত সমীক্ষায় যা দেখা গিয়েছিল, বুথ-ফেরত সমীক্ষাতেও তেমনই ছবি দেখা যাচ্ছে। এর থেকেও তো বোঝা যাচ্ছে, তা হলে এই যে হিংসা, সন্ত্রাস, ভয় দেখানোর অভিযোগ—এ সব মনগড়া!’’
রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, ‘‘এর মধ্যে কোনও সমীক্ষার ফলকেই আমরা বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করছি না। তৃণমূল কী ভাবেভোট লুঠ করছে, টিভি ক্যামেরাতেও দেখা গিয়েছে। এই ভোটের ফলাফল যা-ই হোক, সেটা জনমানসের প্রতিফলন হবে না।’’
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও সমীক্ষার ফলকে গুরুত্ব দিতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘একে তো ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে। আগরতলায় এই কায়দায় ভোট করে বিজেপি ৫১ ওয়ার্ডের মধ্যে ৫১ পেয়েছিল। তা হলে কলকাতায় তৃণমূলও ১৪৪ পেতে পারে! আর তৃণমূল সব সময় চায় বিজেপিই তাদের বিরোধী থাকুক, বাম-কংগ্রেস শূন্য হয়ে যাক। সমীক্ষাও সে রকমই দেখাচ্ছে।’’
সমীক্ষকদের তরফে জানানো হয়েছে, কলকাতায় এ দিন ১৬ হাজারেও বেশি উত্তরদাতার সঙ্গে কথা বলে নমুনার ভিত্তিতে বুথ-ফেরত সমীক্ষার ফল তৈরি করা হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, তৃণমূল পেতে পারে ৫৭.৯% ভোট। বিজেপি পেতে পারে ২৮.১%। বামেদের ভোট ৪.৫% ও কংগ্রেসের ভোট ৬.৬% হতে পারে বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। জনমত সমীক্ষার চেয়ে অনেকটাই নেমে গিয়েছে ‘অন্যান্য’দের ভাগের ভোট। তারা ২.৯% ভোট পেতে পারে বলে জানাচ্ছে বুথ-ফেরত সমীক্ষা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy