প্রতীকী ছবি।
কখনও পড়ুয়া বোঝাই স্কুলগাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা মেরেছে উল্টো দিক থেকে আসা গাড়িতে। কখনও ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়াই পথে নামা স্কুলবাস ২০-২৫ জন পড়ুয়া নিয়ে রাস্তার ধারের বাতিস্তম্ভে ধাক্কা মেরে দুমড়ে গিয়েছে। চাকা ফেটে উল্টে যাওয়া কিংবা যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে এমন স্কুলবাস ও স্কুলগাড়ির রাস্তার ধারের ঘরে ঢুকে যাওয়া বা ফুটপাতে উঠে যাওয়ার ঘটনাও খুব কম নয়!
করোনা আবহে নতুন করে স্কুল খোলার পরে পুরনো ওই সব ঘটনা থেকে প্রশ্ন উঠছে, দু’বছর বসে থাকার পরে এই ধরনের স্কুলবাস বা স্কুলগাড়িগুলি পড়ুয়াদের নিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থায় রয়েছে তো? তাদের সংগঠনগুলির সঙ্গে কথা বলে যে ছবিটা উঠে এল, তাতে আতঙ্ক কিছুটা বাড়তেই পারে। কারণ সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলি জানাচ্ছে, এই ধরনের অধিকাংশ গাড়িই আপাতত অচল হয়ে পড়ে রয়েছে। সেগুলিকে তড়িঘড়ি রাস্তায় নামানোর জন্য তৈরি করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশেরই ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই। দূষণের শংসাপত্র এবং পথকরের নথির মেয়াদও ফুরিয়ে গিয়েছে। বিমাও ‘ফেল’! পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে গাড়ির ওই সব নথিপত্র বার করাও এই মুহূর্তে যথেষ্ট খরচসাপেক্ষ। ফলে, অধিকাংশ গাড়ির মালিকই পিছিয়ে আসছেন। যা থেকে প্রশ্ন উঠছে, খরচ বাঁচাতে কোনও পরীক্ষা ছাড়াই এই ধরনের গাড়ি বা বাস পড়ুয়া নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়বে না তো?
স্কুলবাস সংগঠনগুলির অন্যতম ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল কন্ট্র্যাক্ট ক্যারেজ পারমিট ওনার্স অ্যান্ড অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক হিমাদ্রি গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘‘কোনও ভাবেই সমাধান দেখতে পাচ্ছি না। প্রাক্-করোনা পরিস্থিতিতে কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া এবং হুগলি মিলিয়ে আমাদের সংগঠনের প্রায় সাড়ে চার হাজার বাস চলত। সেই সংখ্যা এখন অর্ধেকেরও কম। কিছু স্কুল সরাসরি আমাদের সঙ্গে চুক্তি করে ভাড়ায় বাস নেয়। আবার, অভিভাবকদের সঙ্গেও সরাসরি কথা বলে আমরা সেই পরিষেবা দিই। কিন্তু যে হারে সব জিনিসের দাম বেড়েছে, সেখানে এই মুহূর্তে সমস্ত কাগজপত্র ঠিক করে পথে গাড়ি নামানো মুশকিল।’’
স্কুলগাড়ি এবং স্কুলবাসের মালিকেরা জানাচ্ছেন, কোনও বাসের এক বছরের ফিটনেস সার্টিফিকেট বার করতে খাতায়কলমে ৮৫০ টাকা দেওয়ার কথা। স্কুলগাড়ির ক্ষেত্রে সেই অঙ্ক ৬৪০ টাকা। কিন্তু অভিযোগ, বাস্তবে ঘুরপথে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা দিতে হয়। দু’টি ক্ষেত্রে পারমিট এবং পথকরের জন্য লাগে যথাক্রমে সাড়ে ১২ থেকে ১৪ হাজার এবং ১৫-১৬ হাজার টাকা। এ ছাড়া দূষণ পরীক্ষা করার খরচ ১২০ থেকে ৫০০ টাকা এবং এক বছরের বিমার খরচ প্রায় ৪০-৬০ হাজার টাকা। দেখা যাচ্ছে, দু’বছর স্কুল বন্ধ থাকার এই সময়ে অধিকাংশ গাড়ির বিমা হয় নবীকরণ করা হয়নি, নয়তো পারমিট বা পথকরের টাকা মেটানো হয়নি।
স্কুলগাড়ি মালিকদের একটি সংগঠন ‘পুলকার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক সুদীপ দত্ত বললেন, ‘‘সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, টাকা মিটিয়ে পাকা কাগজপত্র নিয়ে রাস্তায় নামতে হলে কোনও কোনও গাড়ির পিছনে প্রায় লাখখানেক টাকার কাছাকাছি খরচ হবে। যা মেটানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সরকারি সহায়তা না পেলে কিছুই করা সম্ভব নয়। উল্টে ব্যক্তিগত নম্বর প্লেটের বেআইনি পুলকারের রমরমা বাড়তে পারে। তখন কিন্তু পড়ুয়াদের নিরাপত্তা আরও বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’’
লালবাজারের ট্র্যাফিক পুলিশের কর্তারা যদিও জানাচ্ছেন, ২০১৯ সালে চিৎপুর লকগেটের কাছে হেদুয়ার একটি স্কুলের পড়ুয়া-ভর্তি বাস বাতিস্তম্ভে ধাক্কা মারার পরে এ নিয়ে কড়া হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল বাহিনীকে। এখন নতুন করে স্কুল খোলার এই সময়েও একই ভাবে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। সেই সঙ্গে কাগজপত্র ঠিক না-থাকা গাড়ির বিরুদ্ধে জরিমানার অঙ্ক এমনিই প্রায় ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ফলে এমন গাড়ি দেখলেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy