নম্বরটা অপরিচিত হলেও পরিচিতের ছবি ভেসে উঠেছিল মোবাইল স্ক্রিনে। তা দেখে শরৎ বসু রোডের সোনার কারবারি বিশাল সোনি ভেবেছিলেন, পরিচিত এক ব্যবসায়ী ফোন করেছেন তাঁকে। ফোনালাপের ভিত্তিতেই দক্ষিণ কলকাতার একটি অভিজাত ক্লাবের সামনে আড়াই কেজি সোনা নিয়ে হাজির হন বিশাল। অভিযোগ, খোয়া গিয়েছে পুরোটাই।
ভবানীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের হতে তদন্তে নেমে পুলিশ মূল অভিযুক্ত-সহ দু’জনকে গ্রেফতার করে। তদন্তকারীরা বলছেন, এই ঘটনায় এক নতুন ধরনের জালিয়াতি-চক্রের হদিস মিলেছে। পুলিশের এক অফিসারের কথায়, ‘‘স্মার্টফোনে এখন বিভিন্ন ধরনের স্পুফিং অ্যাপ বেরিয়েছে। তাকেই হাতিয়ার করেছিল অভিযুক্তেরা।’’
ঘটনাটি কী? বিশালের অভিযোগ, ৬ নভেম্বর বিকেলে তিনি একটি ফোন পান। ফোনে তাঁর পরিচিত, শেক্সপিয়র সরণি এলাকার এক পরিচিত জহুরির ছবি ও নাম ভেসে ওঠে। ফোনের ও-পারের ব্যক্তি বিশালকে জানান, এক খদ্দের আড়াই কেজি সোনার গয়না কিনতে চান। তাই বিশাল যেন দক্ষিণ কলকাতার এক ক্লাবের সামনে পৌঁছে যান। কথা মতো বিশাল শরৎ বসু রোড থেকে ওই ক্লাবের সামনে পৌঁছন। কিন্তু শেক্সপিয়র সরণির ওই ব্যবসায়ী আসেননি। বিশাল পুলিশকে জানিয়েছেন, কিছুক্ষণ পরে ফের ওই নম্বর থেকে ফোন করে জানানো হয়, এক ব্যক্তি আসবেন। তাঁর হাতে বিশাল যেন গয়না দিয়ে দেন। একটু পরেই ফোনের বিবরণ মতো এক ব্যক্তি আসেন এবং সোনার গয়নার ব্যাগ নেন। তিনি বিশালকে ওই ক্লাবের রিসেপশনে অপেক্ষা করতে বলে ভিতরে চলে যান।
পুলিশ জানায়, আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরে বিশাল ফের ওই নম্বরে ফোন করেন। কিন্তু সাড়া মেলেনি। শেক্সপিয়র সরণির ওই ব্যবসায়ীর আর একটি যে নম্বর বিশালের কাছে ছিল, তাতেও সাড়া মেলেনি। এর পরে দোকানের ল্যান্ডলাইনে ফোন করে বিশালের বাবা জানতে পারেন, শেক্সপিয়র সরণির ওই ব্যবসায়ীর ফোন খারাপ হয়ে গিয়েছে। তাই তিনি কোনও ফোন করেননি। এর পরে মোবাইল পরিষেবা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁরা জানতে পারেন, শেক্সপিয়র সরণির ওই ব্যবসায়ী নিজেই ফোন করে মোবাইল চুরি হওয়ার অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তখনই বিশাল বুঝতে পারেন, তিনি জালিয়াতের খপ্পরে পড়েছেন।
লালবাজার সূত্রে খবর, বিশাল ও শেক্সপিয়র সরণির ওই ব্যবসায়ী সোনা-জহরতের ব্যবসায় উল্লেখযোগ্য নাম। এ ছাড়াও আড়াই কেজি সোনার দাম প্রায় কোটি টাকা। তাই ডিসি (দক্ষিণ) মুরলীধর ঘটনার তদন্তভার দেন ভবানীপুর থানার অতিরিক্ত ওসি সুমিত দাশগুপ্তকে। তদন্তে সহায়তার জন্য সত্যব্রত দাশগুপ্ত নামে আর এক সাব-ইনস্পেক্টরকেও ভার দেওয়া হয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, যে নম্বর থেকে ফোন এসেছিল, তার তথ্য জোগাড় করতে গিয়ে দেখা যায় সেটি এক জন সিআইএসএফ কনস্টেবলের। তাঁর বাবা কলকাতা পুলিশে কর্মরত। কিন্তু গত ছ’মাসে ওই কনস্টেবল এ রাজ্যে আসেননি। ফলে পুলিশ বুঝতে পারে, ওই তথ্য ভুয়ো। এর পরে ওই নম্বরের সিম কার্ডটি কোন কোন ফোনে ব্যবহার করা হয়েছে, তা দেখতে শুরু করেন তদন্তকারীরা। তাতে পাঁচটি মোবাইলের ‘আইইএমআই’ নম্বর মেলে। ওই পাঁচটি নম্বরের সূত্রে খোঁজ মেলে একটি গ্যাস সংস্থার এবং সেই সূত্র ধরে পুলিশ মণীশ সোনি নামে পোস্তার এক সোনার কারবারির নাম জানতে পারে পুলিশ।
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, মণীশের নাম উঠে আসার পরেই তাঁর উপরে নজরদারি শুরু হয়। ইতিমধ্যেই মণীশের মোবাইলের সূত্র ধরে বৈজয়ন্তী ওরফে খুশবু নামে সোনাগাছির এক যৌনকর্মীর হদিস মেলে। তাঁর থেকে উদ্ধার হয় প্রচুর সোনার গয়না। পুলিশের দাবি, জেরায় খুশবু স্বীকার করেন, মণীশ তাঁকে ওই গয়না দিয়েছেন। এর পরেই মণীশকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁকে জেরা করে ধরা হয় শচীন অগ্রবাল নামে আর এক জনকে। পুলিশ বলছে, শচীনই ওই ক্লাবের সামনে থেকে সোনার ব্যাগ নিতে গিয়েছিল। এই ঘটনায় আরও এক জনকে খুঁজছে পুলিশ। তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, বাজারে ধার শোধ করতেই এই পন্থা বেছে নিয়েছিলেন মণীশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy