অবাধে: রাজপথে নির্ভয়ে অবৈধ ভ্যানো। ই এম বাইপাস সংলগ্ন আনন্দপুরের কাছে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
গাড়ি পুরোপুরি বেআইনি। তাই ওই গাড়ি নিয়ে পরিবহণ দফতরের কোনও হেলদোল নেই। আর পুলিশ দেখেও চুপ। তাই সেই গাড়ি নিয়েই রমরমিয়ে ব্যবসা করতে পারেন এক্কেবারে কলকাতার দোরগোড়ায়। রুট— রুবি হাসপাতাল থেকে চৌবাগা।
এলাকায় গিয়ে ভ্যানো চালানোর ইচ্ছে প্রকাশ করতেই চলে এল সমাধান। এক যুবক এগিয়ে এসে নিজেকে স্থানীয় ভ্যানো ইউনিয়নের শাসক দলের নেতা কৃষ্ণ মণ্ডল বলে পরিচয় দিলেন। অকপটে জানিয়ে দিলেন, ‘‘আপনি ৬০ হাজার টাকা দিলেই হবে। গাড়ি আমরা চালাব। দৈনিক আপনাকে ১০০ টাকা করে দিয়ে দেব। বাকি টাকা চালকের।’’ কিন্তু এই গাড়িই তো বেআইনি! সঙ্গে সঙ্গে ‘দাদার’ উত্তর, ‘‘তাতে কোনও অসুবিধেই নেই। পুলিশ তো গা়ড়ি-পিছু ১০০ টাকা করে আমাদের কাছ থেকে নিয়েই নেয়। ধরার ভয় নেই।’’
শুধু রুবি থেকে চৌবাগাই নয়, কলকাতার উত্তর ও দক্ষিণ শহরতলির অলি-গলিতে দেদার চলছে সবচেয়ে বেশি দূষণযুক্ত গাড়ি ‘ভ্যানো’। মোটর ভেহিক্লস আইনে যা বেআইনি।
পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘মোটর ভেহিক্লস আইনে ভ্যানো কোনও গাড়িই নয়। এগুলির রেজিস্ট্রেশনও হয় না। যাত্রী পরিবহণ করার কোনও এক্তিয়ারই নেই এই গাড়িগুলির। মাত্রাতিরিক্ত দূষণ ছড়ায় মোটর চালিত এই ভ্যান।’’ তিনি জানান, এ ধরনের গাড়ির ক্ষেত্রে পুলিশ এবং পরিবহণ দফতরের এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ যৌথ অভিযান চালিয়ে গাড়ির চালক এবং মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু এমন পদক্ষেপ রাজ্যের কোথাও করা হয়েছে, এমন খবর নেই বলেই জানাচ্ছেন পরিবহণকর্তারা।
শুধু ধরপাকড় হয়নি, এমন নয়। ভ্যানোর যাত্রাপথ যাতে মসৃণ হয়, সে জন্য স্থানীয় রাজনৈতির দাদাদের ভূমিকাও চোখে পড়ার মতো। যেমন, বেহালার সারদা পার্ক থেকে আনন্দপুর পর্যন্ত মিনিবাস রুটই ধরা যাক। অভিযোগ, সেখানকার ভ্যানো চালকদের বিরোধিতায় বাস ওই রুটে আপাতত বন্ধ। হাওড়ার সাঁতরাগাছি থেকে আনন্দপুর বা আনন্দপুর থেকে হাওড়া স্টেশন রুটের বাসও আনন্দপুর মেন রোড ও মুন্ডাপাড়ার মোড় পর্যন্ত যেতে পারে। চৌবাগার দিকে যেতেই পারে না।
ইউনিয়নের নেতারা জানাচ্ছেন, বাইপাসের কাছে আনন্দপুরের ওই এলাকায় চৌবাগা পর্যন্ত মোট দুশোটি ভ্যানো চলে। তা নিয়ে প্রশাসনের কোনও হেলদোলই নেই। প্রশাসনের এই উদাসীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বাসমালিকদের অভিযোগ, তাঁরা বৈধ হয়েও ব্যবসা করতে পারছেন না। আর শাসক দলের ‘অভয়’ থাকায় ভ্যানো অবৈধ হয়েও দেদার ব্যাবসা করছে।
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই পুলিশ কী বলছে? কলকাতা পুলিশের এক উচ্চপদস্থ কর্তার বক্তব্য, ‘‘কিছুই জানতাম না। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy