Advertisement
০৮ মে ২০২৪

সুরক্ষাই এ বার ‘অজুহাত’

অনেক সময়েই পুরুষ অটোচালকের পাশে সামনের সিটে বসে যেতে অস্বস্তি হয় সদ্য কলেজ যেতে শুরু করা শোভাবাজারের বাসিন্দা নবীনা বক্সীর।

অস্বস্তির এই যাত্রা কি বদলাবে? ফাইল চিত্র

অস্বস্তির এই যাত্রা কি বদলাবে? ফাইল চিত্র

সুচন্দ্রা ঘটক
শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৮ ০১:৪৮
Share: Save:

মেয়েরা অটো চালাবেন শুনে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু মহিলা যাত্রী রাতে বাড়ি ফেরা নিয়ে কিছুটা বাড়তি ভরসা পেয়েছিলেন। অটোর পাশাপাশি ধীরে ধীরে ট্যাক্সি, রিকশা চালিয়েও আয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন এ শহরের আরও কিছু মহিলা। নিরাপত্তাহীনতার ‘অজুহাতে’ পুরুষ অটোচালকদের অসহযোগিতার বাস্তব চিত্র দেখে মাঝ পথেই স্বপ্ন থমকে গিয়েছে তাঁদের কারও কারও। মহিলাচালিত অটো পরিষেবার ভাগ্য এখন একেবারেই অনিশ্চিত। তার সঙ্গেই কি অনিশ্চয়তা দেখা দিল এ শহরে মহিলাদের এগিয়ে চলা নিয়েও, প্রশ্ন তুলছেন মহিলা নাগরিকদের পাশাপাশি পুরুষেরাও।

অনেক সময়েই পুরুষ অটোচালকের পাশে সামনের সিটে বসে যেতে অস্বস্তি হয় সদ্য কলেজ যেতে শুরু করা শোভাবাজারের বাসিন্দা নবীনা বক্সীর। নবীনার আশা ছিল, ধীরে ধীরে শহরের সর্বত্রই মহিলারা অটো চালাতে শুরু করবেন। তা হলে তাঁর মতো অনেকেরই সমস্যা কিছুটা কমবে। তখন আর পিছনের সিটের অপেক্ষায় একের পর এক অটো ছাড়তে হবে না ব্যস্ততার সময়ে। মেয়েকে নাচের ক্লাস থেকে নিয়ে ফিরতে বেশ রাত হয় দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা সুনয়না রক্ষিতের। অনেক দিনই ঘড়ির কাঁটা এগারোটা পেরিয়ে যায়। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এ বার কি তবে লোকে বলবে মহিলা যাত্রীদেরও রাতে না বেরোতে?’’

মহিলা যাত্রীরা যদি অচেনা চালকের গাড়িতে ভরসা করে উঠতে পারেন তবে মহিলা চালকদের কেন নিরাপত্তার সমস্যা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বহু শহরবাসীই। দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা নির্মল বিশ্বাস আবার প্রশ্ন তোলেন, ‘‘চালক এবং যাত্রী, সকলের নিরাপত্তার ভাবনাই তো পুলিশের। তা হলে কি ধরে নেওয়া হচ্ছে এই শহরে মেয়েদের নিরাপত্তা দিতে প্রশাসন ব্যর্থ?’’

কয়েকটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজের ফাঁকে টাকা জমিয়ে গাড়ি চালানো শিখছেন কাজল নায়েক। ভাল করে শেখা হয়ে গেলে চেষ্টা করবেন,
সেই কাজ করে একটু আয় বাড়ানোর। মহিলাদের অটো চালানোয় বাধা এসেছে শুনে তিনি বলেন, ‘‘এক বাড়ির দিদির কাছে শুনেছিলাম বিদেশে মেয়েরাও ড্রাইভারের কাজ করেন। ভেবেছিলাম এখানেও তেমন চালু হলে একটু বেশি টাকা কামানো যাবে। তাই গাড়ি চালানো শুরু করেছিলাম।’’ তাঁর বক্তব্য, আশপাশের মানুষই যদি নিরাপত্তার ভয় দেখান, তবে নতুন কাজে এগোনোর সাহসই পাবেন না।

পরিস্থিতি এমন শুনে নারী আন্দোলনের কর্মী শাশ্বতী ঘোষের বক্তব্য, মুখে যে যা-ই বলুন, এ শহরে এখনও কতটা নারী বিরোধী, তা ফের দেখা গেল। তিনি বলেন, ‘‘নিরপত্তার চিন্তা তো অজুহাত মাত্র। আসলে এ তো বৈষম্যের বহিঃপ্রকাশ।’’ তাঁর আরও আক্ষেপ, মহিলারাই তো মহিলাদের এখনও ভরসা করেন না, পুরুষদের একা দোষ দিয়ে লাভ কী? মহিলা যাত্রীরাও যদি জোর দিয়ে এ পরিষেবা চাইতেন, তবেও কি মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া যেত এই পরিকল্পনা, উঠেছে প্রশ্ন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

excuses Auto Union Women Drivers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE