রাজাবাজারের ক্যানাল ইস্ট রোডে এমন ভাবেই রাখা হয়েছে বিক্রি না হওয়া খাসি ও পাঁঠা। নিজস্ব চিত্র
ভাগাড়-কাণ্ডের জেরে বিক্রিবাটায় মন্দা চলছে পাঁঠার পাইকারি বাজারে। রাজাবাজারের ক্যানাল ইস্ট রোডে পাঁঠা-খাসির সব থেকে বড় পাইকারি বাজার। সেখানকার দোকানের মালিকেরা বলছেন, ‘‘আমরা তো ফ্রিজের মাংস বিক্রি করি না যে, মানুষ সন্দেহ করবে। কিন্তু সার্বিক ভাবে মানুষের মাংস খাওয়ার প্রবণতা কমে যাওয়ায় গোটা পাঠা বা খাসিও সে ভাবে বিক্রি হচ্ছে না।’’
ক্যানাল ইস্ট রোডের বাজারে সন্ধ্যার পরে ভিন্ রাজ্য থেকে ট্রাকে করে আসে পাঁঠা, খাসি। পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানালেন, আগের মতো খুচরো বাজারের মাংস বিক্রেতা, দোকানদার, হোটেলের কর্মীরা সে ভাবে ভিড় জমাচ্ছেন না। আসছেন না শহরতলির দোকানদারেরাও। অগত্যা বিক্রি না হওয়া খাসি-পাঁঠা দিনের শেষে জমা হচ্ছে পাইকারি দোকানের পিছনে ছোট ছোট বাঁশের বেড়া দেওয়া ঝুপড়ি ঘরে।
ব্যবসায়ী মহম্মদ আনজুল হক বললেন, ‘‘৩০ বছর ধরে ব্যবসা করছি। এরকম মন্দার বাজার আগে দেখিনি। আগে যেখানে এক রাতে ৩ থেকে ৪ হাজার পাঁঠা বা খাসি বিক্রি হয়ে যেত, এখন মেরেকেটে ১ হাজার বিক্রি হচ্ছে।’’
আর এক বিক্রেতা নাসিম আলম জানাচ্ছেন, দেড় থেকে দু’বছর বয়সী পাঁঠার মাংস সুস্বাদু ও পরিমাণেও বেশি হওয়ায় এদের চাহিদা সারা বছর ভাল থাকে। কিন্তু মন্দার বাজারে কদর নেই তাদেরও। ভবানীপুরের একটি পাঁঠার দোকানের মালিক তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘স্বাস্থ্যের জন্য ‘রেড মিট’ খাওয়ার প্রবণতা এমনিতেই কিছুটা কমে গিয়েছে। ভাগাড়-কাণ্ডের জেরে এর চাহিদা একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।’’
আবার শোভাবাজারের এক মাংস বিক্রেতার মতে, মুরগি যেমন খদ্দেরের চোখের সামনে কাটা হয় পাঁঠা বা খাসি সাধারণত তা করা হয় না। তাতেই সমস্যা বাড়ছে। যদিও মানিকতলার এক মাংস ব্যবসায়ী বললেন, ‘‘ক্রেতাদের চোখের সামনে পাঁঠা কাটার কথা বলেও দেখেছি। তাতেও বিক্রি বাড়ছে না।’’ পাঁঠার পাইকারি বাজারের এক বিক্রেতা বলেন, ‘‘মন্দার বাজারে পেটে টান পড়ছে অনেকেরই। সন্ধ্যায় বাজার বসার সময়ে প্রচুর দালালও ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে মধ্যস্থতার কাজ করতেন। তাঁদেরও রোজগার হত। এখন ক্রেতাই নেই। ফলে দালালদেরও আয় তলানিতে।’’
এক পাইকারি বিক্রেতা মইনুদ্দিন বললেন, ‘‘দেড় থেকে দু’বছরের পাঁঠাকে যত্ন করে বকরি ইদের কুরবানির জন্য তৈরি করা হয়। পাঁঠার বয়স ৪ বছরের বেশি হলে তাদের রামছাগল বলা হয়। বকরি ইদে এই রামছাগলের চাহিদাও ভাল থাকে।’’ মন্দার বাজারে এখন পাইকারি বিক্রেতারা তাকিয়ে রয়েছেন বকরি ইদের দিকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy