Advertisement
১৮ মে ২০২৪

জমা জলে লিলুয়া, দোসর মশা

কলকাতা ও তার লাগোয়া পুরসভাগুলির মতো ডেঙ্গির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামিল হাওড়া পুরসভাও। জেলা স্বাস্থ্য দফতর, জেলা প্রশাসন, পুরসভা ও সিটি পুলিশের প্রতিনিধিদের নিয়ে সমন্বয় কমিটি তৈরি করে শুরু হয়েছে মশা নিধন অভিযান।

উঠোনে জমে রয়েছে জল। (ইনসেটে) সেই জলে মশার লার্ভা। সোমবার, লিলুয়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

উঠোনে জমে রয়েছে জল। (ইনসেটে) সেই জলে মশার লার্ভা। সোমবার, লিলুয়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৬ ০২:৩০
Share: Save:

কলকাতা ও তার লাগোয়া পুরসভাগুলির মতো ডেঙ্গির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামিল হাওড়া পুরসভাও। জেলা স্বাস্থ্য দফতর, জেলা প্রশাসন, পুরসভা ও সিটি পুলিশের প্রতিনিধিদের নিয়ে সমন্বয় কমিটি তৈরি করে শুরু হয়েছে মশা নিধন অভিযান। ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বহুতল, সরকারি আবাসন ও সরকারি অফিসে অভিযান চালিয়ে মশার লার্ভা নষ্ট করা হয়েছে। পরিস্থিতির নিরিখে ডেঙ্গি-যুদ্ধে এই পুর উদ্যোগ যে যথেষ্ট নয়, তা বোঝা যায় শুধু লিলুয়ার কয়েকটি এলাকা ঘুরে।

কী অবস্থা জনবহুল লিলুয়ার? সোমবার লিলুয়ার বড়বাগান, বি রোড, সি রোড ঘুরে দেখা গেল, অলিগলিতে জমে রয়েছে জল। জল জমে থাকতে দেখা গিয়েছে বসতবাড়ির উঠোনে, সরকারি আবাসনের চারপাশে এমনকী একটি স্কুলের প্রবেশপথের ধারেও।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, তাঁদের এলাকায় কোথাও এক মাস ধরে, কোথাও বা টানা ২০ দিন জল জমে রয়েছে। পুরসভার নিকাশি দফতর মাঝে মধ্যে পাম্প চালিয়ে সেই জমা জল এলাকার পুকুরে ফেলছে ঠিকই। কিন্তু, ফের বৃষ্টি হলেই পুকুর উপচে সেই জল ঢুকছে আশপাশের এলাকা, গলিতে। ফলে গোটা এলাকায় ক্রমাগত বেড়ে চলেছে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ। ইতিমধ্যে দু’জনের ডেঙ্গি ধরা পড়েছে। ঘরে ঘরে বাড়ছে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে বিকেলের পর থেকেই দরজা-জানলা বন্ধ করে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন বাসিন্দারা।

হাওড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, সোমবার পর্যন্ত ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪২। এ দিনই হাওড়া জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও তিন জনের রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গির জীবাণু ধরা পড়েছে।

সি রোড এলাকার বাসিন্দা সৌমেন রায় বলেন, ‘‘বর্ষায় এলাকায় জল জমে। কিন্তু এ বার জমা জল বেরোতে মাস পেরিয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে মশার উপদ্রব।’’

বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও চার বছরের মেয়েকে নিয়ে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন রাকেশ গুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘গত দু’মাস ধরে বাড়ির উঠোনে জল জমে আছে। মশার কামড়ে টিকতে পারছি না। বাড়ি বাড়ি জ্বর হচ্ছে। আতঙ্কে রয়েছি।’’ এর সঙ্গে যোগ হয়েছে দুর্গন্ধ-যুক্ত পানীয় জল। বাসিন্দাদের সন্দেহ, পুরসভার জলের পাইপ ফুটো হয়ে নর্দমার পাঁকজল পানীয় জলের সঙ্গে মিশেছে।

এই পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ স্থানীয়েরা। তাঁদের অভিযোগ, নর্দমাগুলির জলধারণ ক্ষমতা নেই বললেই চলে। ফলে এলাকার যে সব বাড়িতে দু’ মাস আগে জল ঢুকেছে, তা আর বার করা যাচ্ছে না। বার করলেও ফের বৃষ্টি হলে জল জমে থাকছে উঠোনে, বাড়ির ভিতরে। সেই জমা জলে জন্মাচ্ছে মশার লার্ভা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাস্তার গর্তে জমা জলেও মশা ডিম পাড়ছে।

এর পরেও পুরসভা এই রোগ প্রতিরোধে যথেষ্ট ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) ভাস্কর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা সব রকমের ব্যবস্থা নিচ্ছি। স্বাস্থ্য কর্মীরা জেলা স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কাজ করছেন। লিলুয়ার পরিস্থিতি দেখতে মঙ্গলবারই এলাকায় বিশেষ দল যাবে।’’

মেয়র রথীন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মশার লার্ভা মারতে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বা কেন নর্দমার জল বেরোচ্ছে না, তা নিয়ে আমি অবশ্যই ভারপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদদের সঙ্গে কথা বলব। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dengue liluah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE