Advertisement
১৯ মে ২০২৪

পর্ণশ্রীতে বৃদ্ধার অপমৃত্যু, খুনের মামলা রুজু

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শিপ্রাদেবী থাকতেন ওই দোতলা বাড়ির একতলায়। এ দিন সকাল পৌনে আটটা নাগাদ ঘরের দরজা ভেঙে তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। শিপ্রাদেবী ঘরের মেঝেতে উপুড় হয়ে পড়ে ছিলেন। কানে ও মুখে রক্তের দাগ লেগে থাকলেও আঘাতের চিহ্ন ছিল না।

রহস্য: এ ভাবেই উদ্ধার হয় শিপ্রাদেবীর দেহ। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

রহস্য: এ ভাবেই উদ্ধার হয় শিপ্রাদেবীর দেহ। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৭ ০০:৩১
Share: Save:

নিজের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে এক বৃদ্ধার মৃতদেহ। শনিবার সকালে পর্ণশ্রীর ফকিরপাড়া রোডে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম শিপ্রা ভট্টাচার্য (৬৮)। তাঁর ঘর থেকে পাওয়া একটি চিরকুটের বয়ান দেখে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলেই ভেবেছিল। কারণ, খালি চোখে মৃতার দেহে আঘাতের কোনও চিহ্ন দেখা যায়নি। তবে, বিকেলের পরে ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানা যায়, শিপ্রাদেবীকে গলা টিপে খুন করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, মৃত্যুর আগে এক বা একাধিক আততায়ীর সঙ্গে ধস্তাধস্তিও হয়েছিল তাঁর। এই ঘটনায় পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একটি খুনের মামলা রুজু করেছে। সেই সঙ্গে বৃদ্ধার মেয়ে ও জামাইকে আটক করে থানায় নিয়ে গিয়ে রাত অবধি দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদও করে তারা।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শিপ্রাদেবী থাকতেন ওই দোতলা বাড়ির একতলায়। এ দিন সকাল পৌনে আটটা নাগাদ ঘরের দরজা ভেঙে তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। শিপ্রাদেবী ঘরের মেঝেতে উপুড় হয়ে পড়ে ছিলেন। কানে ও মুখে রক্তের দাগ লেগে থাকলেও আঘাতের চিহ্ন ছিল না। বৃদ্ধার ঘর থেকে যে চিরকুট পাওয়া যায়, তাতে লেখা ছিল, ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়’। ওই চিরকুট পড়ে ও প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সেই সময়ে পুলিশের ধারণা হয়েছিল, মানসিক অবসাদে শিপ্রাদেবী আত্মঘাতী হয়েছেন।

এর পরে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে পর্ণশ্রী থানার পুলিশ দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠায়। কলকাতা পুলিশের ডি সি (সাউথ-ওয়েস্ট) মিরাজ খালিদ জানান, এ দিন সকালে কমল নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা শিপ্রাদেবীর কাছে গিয়েছিলেন তাঁর আধার কার্ড আনতে। রেশন দোকানে সেই কার্ড জমা দেওয়ার কথা ছিল। সেই সময়ে তাঁর ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। অনেক ডেকেও সাড়া না পেয়ে কমল ফিরে যাচ্ছিলেন। তখন বৃদ্ধার মেয়ে ও জামাই দোতলা থেকে নেমে আসেন ও পাড়ার এক রিকশাচালকের সাহায্যে দরজা ভেঙে শিপ্রাদেবীকে মৃত অবস্থায় পান। খবর যায় থানায়।

ডি সি বলেন, ‘‘বৃদ্ধার মৃত্যু নিয়ে এখনও পর্যন্ত কেউ অভিযোগ জানাননি। তবে প্রতিবেশীদের অনেকেই বলেছেন, মেয়ে-জামাইয়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভাল ছিল না।’’

ডি সি আরও জানান, বৃদ্ধার মেয়ে কাবেরী ও জামাই অনুপম থাকেন বাড়ির দোতলায়। তাঁর চার বছরের এক নাতিও রয়েছে। বৃদ্ধার ঘরে পাওয়া চিরকুট তাঁরই হাতের লেখা কি না, তা জানার জন্য ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। এ দিন দুপুরে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের একটি দল ৪৮সি ফকিরপাড়া রোডে শিপ্রাদেবীর বাড়িতে যায়। তাঁর ঘর থেকে হাতের ছাপ-সহ কিছু তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করা হয়েছে।

শিপ্রাদেবীর স্বামী বিমানবাবু ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে বছর দুই আগে মারা গিয়েছেন। তাঁর বন্ধু ও প্রতিবেশী সত্যবান সাহা জানান, বিমানবাবু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের চাকুরে ছিলেন। শিপ্রাদেবী কাজ করতেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE