Advertisement
০৪ মে ২০২৪

পিজিতে কি অন্তর্ঘাত, তদন্তে পুলিশ

নাশকতার উদ্দেশ্যেই আগুন লাগানো হয়েছিল এসএসকেএম হাসপাতালে। এই মর্মে মামলা দায়ের করে ঘটনার তদন্ত শুরু করল পুলিশ। লালবাজার সূত্রের খবর, সোমবার রাতেই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভবানীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন এসএসকেএম-কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের তরফে সুপার ওই অভিযোগ দায়ের করেছেন।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেই হাসপাতালের ভিতরে মোতায়েন দমকলের দু’টি গাড়ি। মঙ্গলবার। — নিজস্ব চিত্র

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেই হাসপাতালের ভিতরে মোতায়েন দমকলের দু’টি গাড়ি। মঙ্গলবার। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৪১
Share: Save:

নাশকতার উদ্দেশ্যেই আগুন লাগানো হয়েছিল এসএসকেএম হাসপাতালে। এই মর্মে মামলা দায়ের করে ঘটনার তদন্ত শুরু করল পুলিশ।

লালবাজার সূত্রের খবর, সোমবার রাতেই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভবানীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন এসএসকেএম-কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের তরফে সুপার ওই অভিযোগ দায়ের করেছেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, এসএসকেএমে কী ভাবে আগুন লাগল এবং সেই অগ্নিকাণ্ডে কারা জড়িত, সুপারের দায়ের করা অভিযোগে সেটাই খুঁজে বার করতে বলা হয়েছে। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৩৬ ধারায় (দুষ্কর্ম করে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে আগুন লাগানো) মামলা দায়ের করেছে। তবে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।

সোমবার সকালে রোনাল্ড রস ভবনের সাততলার গ্রন্থাগারে আগুন লাগে। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি স্পষ্টই বলেন, ওই অগ্নিকাণ্ডের পিছনে অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি, হাসপাতালে দমকলমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং পুলিশকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘কেন আগুন লেগেছে, তা তদন্ত করে দেখা হবে। আগুন লেগেছে, না লাগানো হয়েছে, সে দিকটাও দেখা হবে।’’ পুলিশের একাংশের বদাবি, কার্যত মুখ্যমন্ত্রীর আশঙ্কাই প্রকাশ পেয়েছে হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের দায়ের করা অভিযোগ এবং রুজু হওয়া মামলার মধ্যে।

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, হাসপাতালের সাততলাতেই গ্রন্থাগারের পাশে রয়েছে বেশ কয়েকটি বেসরকারি টেলিকম সংস্থার সার্ভার রুম। যাদের টাওয়ার রয়েছে ওই বিল্ডিংয়ের ছাদে। সব ক’টি টেলিকম সংস্থার সার্ভার রুমই গ্রন্থাগারের পাশে। গ্রন্থাগারের একটি অংশে ভাগ করেই ওই সার্ভার রুমটি তৈরি করা হয়েছে।

সোমবার বিকেলেই ঘটaনাস্থল পরিদর্শন করেন রাজ্য ফরেন্সিক বিভাগের বিশেষজ্ঞেরা। প্রাথমিক তদন্তের পরে তাঁদের অনুমান, ওই সার্ভার রুম থেকেই আগুন লাগে। যা পরে গ্রন্থাগারে ছড়িয়ে পড়ে। ফল্স সিলিং থাকায় খুব দ্রুত সেই আগুন ছড়িয়ে যায়। তদন্তকারীদের দাবি, ওই সার্ভার রুমটি অধিকাংশ সময়ে বন্ধই থাকে। মাঝে মাঝে টেলিকম সংস্থার প্রতিনিধিরা তা পরিদর্শন করেন। তবে ঘটনার সময়ে ওই অংশে টেলিকম সংস্থার কেউ ছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের দাবি, রোনাল্ড রস বিল্ডিংয়ের দোতলায় অর্থোপে়ডিক আউটডোর চলে। তিনতলায় বার্ন ইউনিট ও ডাক্তারদের ঘর। চারতলায় লাইগেশন ওয়ার্ড। পাঁচতলায় মে়ডিসিন, গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ও এন্ডোক্রিনোলজির ডাক্তারদের ঘর। ছ’তলায় প্লাস্টিক সার্জারির অপারেশন থিয়েটার ও ওয়ার্ড। সাততলায় গ্রন্থাগার ও সার্ভার রুম। এতগুলি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ ওই বিল্ডিং-এ থাকলেও কোনও সিসিটিভি নেই কোনও তলায়। ফলে কারা ওই দিন আগুন লাগার আগে সাততলায় গিয়েছিলেন, তা জানতে সব বিভাগের নিরাপত্তারক্ষী এবং কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, রোনাল্ড রস বিল্ডিংয়ের ছাদে মোবাইল টাওয়ার বাসনো হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। তখন সেটি ছাদ ছিল। পড়ে বছর দুই আগে ওই ছাদটিকে ঘিরে দিয়ে গ্রন্থাগার বানানোর পরিকল্পনা করা হয়। সেই মতো ছাদটি টিন দিয়ে ঘেরা হয়। সার্ভার রুমটি চলে আসে ওই টিনের তলায়।

এ দিকে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো মঙ্গলবার থেকেই এসএসকেএমে চালু করা হয়েছে দমকলের একটি স্টেশন। সেখানে আপাতত দু’টি গাড়ি থাকছে আগুন নেভানোর জন্য। এ ছাড়া থাকছে একটি স্বয়ংক্রিয় ল্যাডার। দমকল সূত্রের খবর, এসএসকেএমের পাশাপাশি শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল এবং বাঙুর নিউরোলজিতেও আগুন নেভানোর কাজে ওই দমকলের ইঞ্জিন কাজ করবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

SSKM Fire Brigade Sabotage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE