ঝুঁকি: টিন-প্লাস্টিকের ছাউনি দিয়ে ঢাকা বাজার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
বাজার তো নয়, যেন জতুগৃহ!
গোটা বাজার প্লাস্টিক এবং টিনের চাঁদোয়ায় ঢাকা। অস্থায়ী সব দোকান। সে সব তৈরি হয়েছে বাঁশ, দরমা, চটের মতো দাহ্য বস্তু দিয়ে। সামান্য আগুনে গোটা বাজার মুহূর্তে ভস্মীভূত হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন পাইকারি আনাজ বাজারের ব্যবসায়ীরা। ‘নেই’ রাজ্যের এই জতুগৃহে রাস্তা নেই, আলো নেই।
তবুও কোথাও অভিযোগ জানানোর চেষ্টা নেই ব্যবসায়ীদের। কারণ, প্রশাসনের কোন দফতরের জমিতে তাঁরা আছেন, সেটাই জানেন না। ২২ বছর ধরে কার্যত অনাথের মতো থেকে ব্যবসা চালাচ্ছে এই পাইকারি বাজার। অভিযোগ, বর্ষায় জমা জল আর কাদার মধ্যেই বিপদ মাথায় নিয়ে ব্যবসা করছেন তাঁরা। আগে একাধিক বার প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু কেউ কানে তোলেননি বলে অভিযোগ।
হাওড়া পাইকারি আনাজ বাজারের ইতিহাস বলছে, আশির দশকে এক বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গিয়েছিল সেখানে থাকা বৃহত্তর পান বাজারটি। রাজ্যের অন্যতম বড় পানের পাইকারি বাজার ছিল সেটি। তখন আনাজ বাজার বসত মুখরাম কানোরিয়া রোডে। বাম আমলে হওয়া ‘অপারেশন সানশাইন’-এর জেরে ১৯৯৭ সালের ৪ জানুয়ারি সেখান থেকেও তাঁদের উৎখাত করা হয়েছিল। এর পরে বাম আমলেই তাঁদের জায়গা হয়েছিল পোড়া পানবাজারের এক পাশের ওই জমিতে। অস্থায়ী ছাউনি করে তৈরি হয়েছিল রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পাইকারি আনাজ বাজারটি।
‘হাওড়া স্টেশন এরিয়া ভেজিটেবল মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক বিনয় সোনকার জানান, প্রায় ৫০ কাঠা জমিতে গড়ে ওঠা এই পাইকারি বাজারে প্রতিদিন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারেরও বেশি চাষি ফসল নিয়ে সরাসরি বিক্রি করতে আসেন। বাজারের মধ্যে আছে ৪০০টি আনাজের দোকান। যে দোকানগুলিতে ভিন্ রাজ্য থেকে ট্রেনে বা ট্রাকে নিয়মিত আনাজ আসে। সেই আনাজ সরবরাহ করা হয় অন্য রাজ্যেও।
বিনয়বাবু বলেন, ‘‘স্থায়ী আনাজ বাজারের দাবিতে আমরা অনেক চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।’’ সংগঠনের ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, আনাজ বাজারের জমির আসল মালিক চামেরিয়া পরিবার। এলাকার উন্নয়নের জন্য সেই জমি হস্তান্তর হয়ে যায় হাওড়া ইম্প্রুভমেন্ট ট্রাস্টের (এইচআইটি) হাতে। কিন্তু এইচআইটি পানবাজারের জন্য একটি দোতলা বাড়ি করে কাজ বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে জমিটি কেএমডিএ-র হাতে থাকলেও ওই দফতরের জমির মালিকানা নিয়ে কোনও ভূমিকা নেই তাদের। এ জন্য ব্যবসায়ীদেরও কেএমডিএ-কে কোনও ভাড়া দিতে হয় না। এমনকি ব্যবসা করলেও কর দিতে হয় না হাওড়া পুরসভাকেও।
আনাজ বাজারের সম্পাদক জানান, তৃণমূল সরকার বাজারের জন্য তাঁদের টিকিয়াপাড়ার কাছে একটি জায়গা দিয়েছিল। কিন্তু কিছু ব্যবসায়ীর আপত্তিতে তা হয়নি। ফের সরকার হস্তক্ষেপ করলে প্রয়োজনে ব্যবসায়ীরা টাকা দিতে রাজি আছেন। বাজারের আর এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘ওখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ। সরু রাস্তায় ট্রাক ঢোকা বা বেরোনো মুশকিলের। তাই যাইনি।’’
এ প্রসঙ্গে কেএমডিএ-র এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘সরকার কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। জমি দখলমুক্ত করা গেলে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy