Advertisement
১৮ মে ২০২৪
Adiganga

বর্ষায় আদিগঙ্গার দূষণে বিপন্ন হতে পারে জীবন

প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, আদিগঙ্গার দূষণ কমাতে রাজ্যের মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২১ ০৬:৩৪
Share: Save:

আদিগঙ্গার জল যে চুঁইয়ে চুঁইয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভূগর্ভস্থ জলকে দূষিত করছে, সেই তথ্য এর আগে একাধিক সমীক্ষায় উঠে এসেছিল। বর্ষায় সেই দূষণ বড়সড় কোনও বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে এ বার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞ-পরিবেশকর্মীরা।

এ বিষয়ে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে দূষণ নিয়ন্ত্রণে পর্ষদের ভূমিকা কার্যত ‘শূন্য’! যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, আদিগঙ্গার দূষণ কমাতে রাজ্যের মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রধান সমন্বয়কারী এজেন্সি করা হয়েছে কলকাতা পুরসভাকে। মুখ্যসচিবের নির্দেশ মতো প্রথম দফায় চেতলা ব্রিজ পর্যন্ত আদিগঙ্গার পলি তোলার কাজ বা ড্রেজিংয়ের কাজ পুরসভাই করবে। দ্বিতীয় দফায় কুঁদঘাট পর্যন্ত এই কাজ করা হবে। রাজ্য পরিবেশ দফতরের এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘গত সপ্তাহেই মুখ্যসচিব আদিগঙ্গা নিয়ে একটি পর্যালোচনা বৈঠক করেছেন। তিনটি নিকাশি পরিশোধন প্লান্ট তৈরি নিয়েও কথা হয়েছে।’’

কিন্তু দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ থাকতে পুরসভা কেন?

প্রশ্নের উত্তরে ওই কর্তার বক্তব্য, ‘‘ছোটখাটো ক্ষেত্রে, যেমন কোনও সংস্থাকে পরিবেশগত ছাড়পত্র দিতে বা জরিমানার ক্ষেত্রে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু আদিগঙ্গার মতো বৃহৎ সমস্যা সামলানোর ক্ষেত্রে পর্ষদ কী করতে পারে?’’ যা শুনে জাতীয় পরিবেশ আদালতে আদিগঙ্গা মামলায় আদালতবান্ধব হিসেবে নিযুক্ত থাকা পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘‘তা হলে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাজটা কী? শুধু জল পরীক্ষা করে তার রিপোর্ট প্রকাশ করা বা এখানকার জল খাবেন না, স্নান করবেন না, এই প্রচারটুকু করা?’’ পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর সম্পাদক নব দত্ত বলছেন, ‘‘শুধু আদিগঙ্গাই নয়, রাজ্যের সিংহভাগ পুকুর, জলাশয়, নদীর জলের দূষণ নিয়ে পর্ষদের কোনও হেলদোল নেই। তারা শুধু সমীক্ষা-পরীক্ষার কথা বলেই খালাস! আমরা সেই কারণে খুব শিগগিরই ধর্নায় বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ এই বিষয়ে জানতে ফোন করা হলে পর্ষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তিনি উত্তর দেননি মেসেজেরও।

কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের মাপকাঠি অনুযায়ী, গুণগত মান ও ব্যবহার অনুযায়ী জলের পাঁচটি ‘ক্যাটেগরি’ রয়েছে— ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’, ‘ডি’ এবং ‘ই’। ‘এ’ ক্যাটেগরির ক্ষেত্রে জলে মোট কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়া প্রতি ১০০ মিলিলিটারে ৫০ এমপিএন (মোস্ট প্রোবাবল নাম্বার) বা তার কম থাকে, ক্যাটেগরি ‘বি’-এর ক্ষেত্রে মোট কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়া প্রতি ১০০ মিলিলিটারে ৫০০ এমপিএন বা তার কম এবং ক্যাটেগরি ‘সি’-এর ক্ষেত্রে মোট কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়া প্রতি ১০০ মিলিলিটারে ৫০০০ এমপিএন বা তার কম থাকার কথা। সেখানে পর্ষদের তরফে করা জলের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট (ফেব্রুয়ারি, ২০২১, লো-টাইড বা ভাটার সময়ে) জানাচ্ছে, জিরাট ব্রিজ, কালীঘাট, করুণাময়ী, কুঁদঘাট, বাঁশদ্রোণী, শহিদ ক্ষুদিরাম মেট্রো সংলগ্ন এলাকায় আদিগঙ্গার জলে কোথাও মোট কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়ার সংখ্যা প্রতি ১০০ মিলিলিটারে ৭৯ লক্ষ এমপিএন কোথাও প্রতি ১০০ মিলিলিটারে ১ কোটি ১০ লক্ষ এমপিএন, কোথাও আবার ১ কোটি ৩০ লক্ষ এমপিএন! ফেকাল কলিফর্মের (যা প্রধানত মানুষের মল-মূত্রে থাকে) অবস্থাও তথৈবচ। জলের গুণগত মান ভাল না খারাপ, তা নির্ধারণের অন্যতম মাপকাঠি হল এই কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়ার উপস্থিতি। নদী বিশেষজ্ঞ সুপ্রতিম কর্মকার বলছেন, ‘‘অবিলম্বে যদি কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা না যায়, তা হলে আদিগঙ্গার দূষণ এই বর্ষায় স্থানীয় মানুষের জীবন বিপন্ন করে তুলতে পারে! কারণ, আদিগঙ্গার দূষণ সংলগ্ন এলাকার বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্যকে নষ্ট করে দিয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pollution Adiganga
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE