দুর্দশা: এমনই হাল রাস্তার। ছবি:অরুণ লোধ
অফিস থেকে মোটরবাইকে বাড়ি ফিরছিলেন সোমদেব মিত্র। তারাতলা রোডে একটি ঠান্ডা পানীয় সংস্থার অফিসের কাছে আসতেই গর্ত ভর্তি জলে বাইকের চাকা পড়ে যায়। কিছু বোঝার আগেই এক জন ছিটকে পড়লেন রাস্তার মাঝে। পিছনের আরোহী পড়লেন রাস্তার অন্য ধারে। স্থানীয়েরাই এসএসকেএমে নিয়ে যান তাঁদের। এক জনের ভাঙে ডান হাত। অন্য জন, পায়ে প্লাস্টার নিয়ে শয্যাশায়ী। আতঙ্কিত সোমদেববাবুর কথায়, ‘‘পিছনে গাড়ি থাকলে, আজ কথা বলার সুযোগ পেতাম না।’’
তারাতলা রোডের এই অঘটন সপ্তাহখানেক আগের। গাড়িচালক এবং যাত্রীদের অভিজ্ঞতা বলছে, ভাঙাচোরা তারাতলা রোডে প্রায় প্রতি দিনই এমন ঘটে। তাঁদের অভিযোগ, শুধু প্রাণহানি হলেই খবর হয়। অথচ এমন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় রয়েছে অসংখ্য বড় বড় অফিস, কারখানা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবু মেরামতি নিয়ে উদাসীন প্রশাসন।
নিউ আলিপুর পেরিয়ে শুরু তারাতলা রোড। নেচার পার্কের সামনে থেকে বাঁক নিয়েছে এই রাস্তা। সোজা মিশেছে কার্ল মার্কস সরণিতে। দীর্ঘ এই রাস্তার অসংখ্য জায়গায় পিচ উঠে গর্ত হয়ে খোয়া বেরিয়ে পড়েছে। ঝাঁকুনি চিনিয়ে দেবে যে, আপনি তারাতলা রোডে ঢুকে পড়েছেন। সব থেকে খারাপ অবস্থা সিইএসসি-র সামনে থেকে রামগড় পর্যন্ত। বিশাল বিশাল গর্ত সেখানে। তাতে পড়ে আস্ত ইট, খোয়া, বড় পাথরকুচি। গর্ত ভর্তি জলে চাকা পড়লে বড় গাড়িও টাল সামলাতে পারে না। এই ফাঁদে চাকা পড়েই দু’বছরে একাধিক বার অঘটন ঘটেছে।
এ বছর মে মাসে সবেবরাতের রাতে তারাতলা রোডে উল্টে পড়ে মৃত্যু হয় দুই বাইক আরোহীর। গত অগস্টেই এই রাস্তার নরম মাটিতে ট্রেলারের চাকা বসে উল্টে যায়
সেটি। তারই নীচে চাপা পড়ে যান রামবচন নামে এক ব্যক্তি। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও দমকল আসে ঘটনাস্থলে। তিনটি ক্রেনের সাহায্যে যখন তোলা হল ট্রেলারটি। তত ক্ষণে সব শেষ। প্রায় দু’বছর আগে এই রাস্তার গর্তে পড়ে যায় কন্টেনার বোঝাই একটি ট্রেলার। একটি কন্টেনার পিছনের বাইক আরোহীর উপরে পড়লে ঘটনাস্থলেই মারা যান মহম্মদ হারুন। এমনই অসংখ্য ঘটনা শুধু লিপিবদ্ধই হয়ে রয়েছে
পুলিশের খাতায়।
তারাতলার থানার অধীন এই রাস্তা। পুলিশ সূত্রের খবর, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই রাস্তায় দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ভাঙাচোরা গর্ত ভর্তি রাস্তাকে। তারাতলা রোড যে মৃত্যু সরণি হয়ে উঠেছে মানছে পুলিশ। কলকাতা পুরসভার অন্তর্গত এই রাস্তার মেরামতিতে কেন এত দেরি? মেয়র পারিষদ (রাস্তা) রতন দে-র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রাস্তার দায়িত্বে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট। মেরামতির দায়িত্বও পোর্টের।
কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের ডেপুটি চেয়ারম্যান এস বালাজি অরুণ কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘২০১৫ সালে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা খরচ করে তারাতলা রোড মেরামত হয়েছিল। কাজের প্রায় শেষ পথে জলের পাইপ বসাতে কলকাতা পুরসভা রাস্তা খোঁড়ে। কিন্তু এ জন্য পোর্টকে কোনও টাকা দেয়নি কেএমসি। পুরসভায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। দেখা যাক কী হয়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘তারাতলা রোডের সবচেয়ে বড় সমস্যা, মাটির নীচে বিভিন্ন জায়গা থেকে জল ক্রমাগত চুঁইয়ে রাস্তার ক্ষতি করছে। তাতেই রাস্তার বিটুমিন নষ্ট হচ্ছে। ঠিক মতো মেরামতে পুরসভা ও পোর্ট ট্রাস্টকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy