Advertisement
০২ মে ২০২৪
Uttarakhand Disaster

Trekkers death: ট্রেকিংয়ের নেশাই ডাকবে চরম বিপদ, ভাবেননি কেউ

শুভায়নের পরিজনেরা জানাচ্ছেন, আবহাওয়া ভাল থাকবে জেনেই রওনা দিয়েছিলেন তিনি।

(বাঁ দিক থেকে) শুভায়ন দাস, সাধন বসাক, বিকাশ মাকাল

(বাঁ দিক থেকে) শুভায়ন দাস, সাধন বসাক, বিকাশ মাকাল

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২১ ০৬:৩১
Share: Save:

ট্রেকিংয়ের নেশা আগে থেকেই ছিল। কোভিডের কারণে ঘরবন্দি থাকার সময়ে সেই নেশাতেই অস্থির হয়ে উঠেছিলেন কালীঘাটের শুভায়ন দাস (২৮)। কিন্তু সেই নেশাই যে এ ভাবে প্রাণ কেড়ে নেবে, কে ভেবেছিল! অনেকটা একই অবস্থায় ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত রাজ্য সরকারি কর্মী সাধন বসাক। আচমকা দুঃসংবাদে বিধ্বস্ত তাঁর পরিবারও।

ট্রেকিংয়ের রোমাঞ্চ কম নয়। নেশার মতো তা চেপেও বসে। কিন্তু শুধু এ হেন নেশার ঝোঁকেই আগুপিছু ভাবতে কি ভুল করেন অভিযাত্রীরা? উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ে দুর্যোগে এতগুলি প্রাণ ঝরে যাওয়ার পরে এই প্রশ্নও উঠেছে। কোথাও কি তবে নেশার ঝোঁকেই বিপদের সঙ্গে সমঝোতা করছেন অভিযাত্রীরা?

শুভায়নের পরিজনেরা জানাচ্ছেন, আবহাওয়া ভাল থাকবে জেনেই রওনা দিয়েছিলেন তিনি। আচমকা আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় সব তছনছ হয়ে যায়। কালীঘাটের নেপাল ভট্টাচার্য স্ট্রিটের বাসিন্দা, পেশায় মেডিক্যাল রিপ্রেজ়েন্টেটিভ শুভায়ন গত ১১ অক্টোবর ১১ জনের একটি দলের সঙ্গে উত্তরাখণ্ডের লামখাগা পাসে ট্রেক করতে গিয়েছিলেন। দাদা শুভজিৎ দাস জানালেন, তাঁর ভাইয়ের লক্ষ্য ছিল কাঞ্চনজঙ্ঘার বেস ক্যাম্প ট্রেক করার। কিন্তু একবারে তা সম্ভব না-হওয়ায় ছোট-ছোট ট্রেক করে এগোচ্ছিলেন শুভায়নরা। লামখাগা পাসে তাঁদের ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার ট্রেকিং ছিল। ‘‘নবমীর দিন ভাইয়ের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল। তখন ও জানিয়েছিল, সব ঠিক আছে,’’— বলেন শুভজিৎ।

উত্তরাখণ্ডের সুন্দরডুঙ্গা হিমবাহে ট্রেকিংয়ে গিয়েছিলেন ঠাকুরপুকুরের ক্ষুদিরাম সরণির বাসিন্দা সাধন বসাক (৬৩)। ১২ অক্টোবর বাড়িতে ফোন করে জানিয়েছিলেন, সুন্দরডুঙ্গায় মোবাইলের নেটওয়ার্ক থাকবে না। সাত দিনের ট্রেকিং সেরে বাগেশ্বরে ফিরে এসে ফোন করবেন। আগেও বহু বার ট্রেকিংয়ে গিয়েছেন। তাই মোবাইলের নেটওয়ার্ক না-থাকলেও চিন্তা করেননি পরিবারের সদস্যেরা। কিন্তু আচমকাই খবর এসেছে, সাধনবাবুর ফোন আর আসবে না। বিশ্বাস করতে পারছেন না তাঁর স্ত্রী।

শুক্রবার সাধনবাবুর বড় জামাই শুভদীপ শেঠ বলেন, ‘‘যখন শ্বশুরমশাই ফোন করলেন, তখন কিন্তু আবহাওয়া খারাপ নিয়ে কিছুই বলেননি। হঠাৎ কী করে যে আবহাওয়া এত খারাপ হয়ে গেল!’’ শুভদীপ বলেন, ‘‘কন্ট্রোল রুম এক বার বলছে মৃত। আবার পরে বলছে, দেহের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। রাজ্য সরকার গুরুত্ব দিয়ে হস্তক্ষেপ করলে খুব ভাল হয়।’’

দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর, বারুইপুর ও দক্ষিণ শহরতলির হরিদেবপুর থানা এলাকা থেকে মোট সাত জনের একটি দল হিমাচলপ্রদেশের ছিটকুলে ট্রেকিংয়ে গিয়েছিল। ওই দলে সুখেন মাজি, তন্ময় দেবনাথ, মিঠুন দাড়ি, তন্ময় তিওয়ারি, রিচার্ড মণ্ডলের পাশাপাশি ছিলেন বিষ্ণুপুর থানা এলাকার রাঘবপুরের বাসিন্দা বিকাশ মাকাল (২৯) এবং নিশিদেরচকের বাসিন্দা সৌরভ ঘোষ (৩১)।

এক বেসরকারি সংস্থার কর্মী বিকাশের বাড়িতে মৃত্যুসংবাদ পৌঁছেছে। তাঁর ভগিনীপতি অ্যান্টনি গায়েন বলেন, ‘‘বিকাশের বৃদ্ধ মা-বাবা রয়েছেন। ওঁরা অসুস্থ। এই খবরে ভেঙে পড়েছেন।’’ তবে সৌরভের বাড়িতে রাত পর্যন্ত মৃত্যুসংবাদ পৌঁছয়নি বলেই জানিয়েছেন তাঁর এক আত্মীয়। বলা হয়েছে, সৌরভ নিখোঁজ। তবে পরিবারের তরফে কয়েক জন প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Uttarakhand Disaster Trekker trekking
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE