একবালপুর এলাকার ৪০ শতাংশ বাড়ি বেআইনি বলে অভিযোগ। এর উপরে অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ জানিয়ে ফি-বছর কম করে ১৫০টি আবেদন জমা পড়ে পুরসভার কাছে।
গার্ডেনরিচ এলাকায় ১৫ নম্বর বরোয় প্রায় ৭৫ শতাংশ নির্মাণ অবৈধ বলে অভিযোগ। আর ৭ নম্বর বরোয় প্রায় ৫০ ভাগ নির্মাণ পুর-আইনের তোয়াক্কা না-করেই নির্মিত হয়েছে। সম্প্রতি এমনই সব তথ্য মিলেছে কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং দফতর থেকেই। অভিযোগ, এ সব চলছে সেই বাম আমল থেকে।
ভোটের মুখে কলকাতা শহর জুড়ে অবৈধ নির্মাণের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এ নিয়ে কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে দিন কয়েক আগে একটি চিঠিও দিয়েছেন পুরমন্ত্রী। অবৈধ নির্মাণ রুখতে পুর প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর কথাও তিনি ওই চিঠিতে জানান মেয়রকে। ওই চিঠির খবর জানাজানি হতেই পুরসভার কোন কোন এলাকায় অবৈধ নির্মাণ বাড়ছে, তার খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে।
পুরসভার বিল্ডিং দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “১৫ এবং ৯ নম্বর বরোয় বেআইনি নির্মাণের সংখ্যাটা সবচেয়ে বেশি। একবালপুর ৯ নম্বর এবং গার্ডেনরিচ ১৫ নম্বর বরোয়।” তাঁর হিসেবে, ৯ নম্বর বরোয় ১০০টি নির্মাণের মধ্যে ৬০টি পুর নিয়ম মেনে তৈরি হয়। আর ১৫ নম্বর বরোয় শতকরা ৭৫ ভাগ নির্মাণ পুরসভার অনুমতি না নিয়েই হয়েছে। তবে এ পরিসংখ্যান এখনকার নয়। সেই বাম আমল থেকে চলছে।
কলকাতা পুলিশের এক পদস্থ কর্তার কথায়, পুলিশ বা প্রশাসন যখন ব্যস্ত থাকে, তখনই অবৈধ নির্মাণের হিড়িক বেড়ে যায়। আর অবৈধ নির্মাণ থেকেই নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয় বলে মনে করেন ওই অফিসার। কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, বেহালা, গার্ডেনরিচ, খিদিরপুর, একবালপুর, তিলজলা এলাকায় অধিকাংশ ঘটনার সূত্রপাত বেআইনি নির্মাণ নিয়েই হয়ে থাকে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁদেরকে নীরব দর্শক হয়ে থাকতে হয় বলে মনে করেন বিল্ডিং দফতরের এক অফিসার।
রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতাই কী এর অন্যতম কারণ?
পুরোপুরি অবশ্য তা নয় বলে জানালেন ওই কর্তা। বেআইনি নির্মাণ যে হারে কলকাতায় বাড়ছে, তা ভাঙার মতো পরিকাঠামো পুরসভায় নেই বলে জানান তিনি। তাঁর বক্তব্য, “গত এক বছরে কলকাতায় ১৭৩টি বেআইনি নির্মাণ ভাঙা হয়েছে। আর শুধুমাত্র ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকেই প্রায় সমসংখ্যক বেআইনি নির্মাণ ভাঙার অভিযোগ জমা পড়েছে।” অর্থাত্ শহরে যত সংখ্যক বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ ওঠে, ভাঙা হয় তার অনেক কম। মূলত পুলিশবাহিনী পাওয়া যায় না বলেই সমস্যা হয়।
কেন?
বিল্ডিং দফতরের পদস্থ এক কর্তা জানান, সপ্তাহে চার দিন, সোম থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে যান পুরকর্মীরা। সেই হিসেবে বছরে প্রায় ২০০ দিন। এর মধ্যে আবার মাস তিনেক পরীক্ষা ও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের কারণে পুলিশ ব্যস্ত থাকে। প্রয়োজনীয় ফোর্স মেলে না। ফলে ১৫০ দিনের মতো হাতে পাওয়া যায়। স্বভাবতই দেড়-দুশোর বেশি বেআইনি নির্মাণ ভাঙা সম্ভব হয় না।
তা হলে কি শহরে বেআইনি নির্মাণের পরিমাণ বাড়তেই থাকবে?
পরিস্থিতি তেমনটাই বলছে, জানালেন ওই কর্তা। যদিও তিনি জানান, জরিমানা (রিটেনশন ফি) দিয়ে অবৈধ নির্মাণকে বৈধ করার প্রচলনও পুরসভায় রয়েছে। সেই ফাঁক দিয়ে অনেক অবৈধ নির্মাণ পুর নিয়মের আওতায় চলে আসছে। এর জন্য যে পুরসভার আয়ও হয়। তিনি জানিয়েছেন, গত আর্থিক বছরে ওই খাতে প্রায় ৫৫ কোটি টাকা আয় হয়েছে পুরসভার।
কিন্তু এর ফলে তো শহরের নকশা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? কড়া দাওয়াই দেওয়ার ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এমনটা হবেই বলে মনে করেন ওই অফিসার। তিনি জানান, আইনি জটিলতা না থাকায় দোতলা ও তিনতলা বাড়ির কিছু পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের জন্য মুখ্যমন্ত্রী ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ ছাড়ের সুযোগ দিয়েছেন। তার পরেও বেআইনি নির্মাণের প্রবণতা থাকলে কড়া হতে হবে পুর প্রশাসনকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy