Advertisement
১৭ মে ২০২৪

মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ বেহালা

দৃশ্য ১: বিকেল সাড়ে পাঁচটা। বেহালা চৌরাস্তার টালিগঞ্জগামী লাইনে ১০-১২ জন অটোর জন্য অপেক্ষা করছেন। মা এবং দিদির সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা এক কিশোর লাফিয়ে লাফিয়ে মাথার উপরে থাকা কিছু মারার চেষ্টা করছে। নজরে এল প্রত্যেক যাত্রীর মাথার উপরেই মশা ভনভন করে উড়ছে। অনেকটা কালো চূড়োর আকারে থাকা সেই মশককূল মারতে ব্যস্ত ওই কিশোর।

অলঙ্করণ: সুমন চৌধুরী।

অলঙ্করণ: সুমন চৌধুরী।

দীক্ষা ভুঁইয়া
শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

দৃশ্য ১: বিকেল সাড়ে পাঁচটা। বেহালা চৌরাস্তার টালিগঞ্জগামী লাইনে ১০-১২ জন অটোর জন্য অপেক্ষা করছেন। মা এবং দিদির সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা এক কিশোর লাফিয়ে লাফিয়ে মাথার উপরে থাকা কিছু মারার চেষ্টা করছে। নজরে এল প্রত্যেক যাত্রীর মাথার উপরেই মশা ভনভন করে উড়ছে। অনেকটা কালো চূড়োর আকারে থাকা সেই মশককূল মারতে ব্যস্ত ওই কিশোর।

দৃশ্য ২: সখেরবাজার সংলগ্ন শীলপাড়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। দুপুর দেড়টা বাজতেই বাড়ির সব জানালা বন্ধ হয়ে গেল। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেই জানালা-দরজা খোলা পেলেই ঝাঁকে ঝাঁকে মশা বাড়িতে ঢুকে যাবে। তাই আগাম প্রস্তুতি।

শুধু এই দুই এলাকা নয়, বেহালা এবং সংলগ্ন এলাকাগুলিতে শীত পড়তেই শুরু হয়েছে ব্যাপক মশার প্রকোপ। যদিও স্থানীয় কাউন্সিলর থেকে শুরু করে দুই বরো চেয়ারম্যানের দাবি, প্রতি দিনই পুরসভার লোক এলাকা ঘুরে মশা মারার কীটনাশক ছড়ান। কোনও বাড়িতে কিংবা এলাকায় পরিষ্কার পাত্রে জল জমছে কি না, তাও দেখা হয়। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রশ্ন, প্রতি দিনই যদি কীটনাশক স্প্রে করা হয়, তাহলে এত মশা কোথা থেকে আসছে?

বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়াতেই মশা বাড়ছে। নদর্মাগুলি প্লাস্টিক ও অন্যান্য জিনিসে বুজে গিয়েছে। কিছু জায়গায় নদর্মার জল বেরোতে না পেরে একই জায়গায় আটকে যাচ্ছে। নিয়মিত সেগুলি পরিষ্কারও হয় না। তা ছাড়া আশপাশে প্রচুর গাছ-গাছালি এবং জলাজমি রয়েছে। এ সবের জন্যও মশা বাড়ছে।

যদিও বরো ১৩ এবং ১৪-র অন্তগর্ত প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের দাবি, পুরসভা থেকে প্রায় প্রতি দিনই এলাকা ভাগ করে মশা মারার কীটনাশক ছড়ানো হয়। নিয়মিত ১২-১৫ জনের একটি দল তৈরি করে ওয়ার্ড পরিদর্শন হয়। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের রত্না শূর জানান, বাড়ি এবং আবাসনগুলিতে নিয়মিত পরিদর্শন করে দেখা হয় কোথাও জল জমে রয়েছে কি না। লার্ভা পেলে পুরসভার তরফ থেকে তা পরিষ্কার করিয়ে কীটনাশক স্প্রে করা হয়।

মশা মারার কীটনাশক নিয়মিত স্প্রে করার হয় ঠিকই, কিন্তু তাতেও মশা কমে না বলে জানাচ্ছেন দু’টি বরোর বাসিন্দারা। কয়েকটি ওয়ার্ড পরিচ্ছন্ন থাকলেও মশার দাপট কমানো যায়নি। যেমন, ১১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দুলু সরকারের অভিযোগ, প্রতি দিন মুদির দোকান থেকে ডিম রাখার কাগজ নিয়ে যান। দুপুরের পরে সেগুলি না পোড়ালে টেকা যায় না। একই ওয়ার্ডের আর এক বাসিন্দা সুশান্ত রায়ের দাবি, অন্য বারের তুলনায় মশা অনেকটাই কম। আর বেহালার অন্য অংশে? শীলপাড়ার বাসিন্দা প্রিয়ব্রতর দাবি, মশার প্রকোপ বৃদ্ধি দেখে মনে হয় কীটনাশকে ভেজাল রয়েছে।

পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্তা জানাচ্ছেন, মশা মারার যে কীটনাশক ব্যবহার হয়, তা দেশের ভেক্টর কন্ট্রোল বোর্ড ঠিক করে দেয়। তিন রকমের কীটনাশক মূলত মশা মারার কাজে ব্যবহার করা যায়। সব থেকে জরুরি বিষয় হল, মশার উৎসস্থল অর্থাৎ মশার লার্ভা যেখানে জন্মায়, সেই জায়গাটা খুঁজে বের করে সেখানেই লার্ভা মেরে ফেলা হয়। তিনি আরও জানান, সাধারণত, শীতকালে দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কিউলেক্স মশার দাপট থাকে। এর থেকে ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গি না হলেও মশাও মারার প্রয়োজন রয়েছে। তবে পুকুরে বা বদ্ধ লেকে কীটনাশক ছড়ানো যায় না। সেখানে অন্য ভাবে মশা মারার ব্যবস্থা করতে হয়।নিয়মিত যদি কীটনাশকই দেওয়া হয় তবে এত মশা কেন? পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ স্বীকার করেছেন মশার প্রকোপের কথা। তিনি জানান, প্রতি দিন মশা মারার প্রক্রিয়া চালু থাকলেও, কিউলেক্স মশার বিস্তার দ্রুত হয়। প্রায় পাঁচ কিলোমিটর পর্যন্ত এই জাতের মেয়ে মশা ডিম পাড়ে। তাই মশা মেরেও লাভ হয় না। তা ছাড়া এই এলাকায় অনেক জলাজমি এবং ছোট ছোট ডোবা বা পুকুর রয়েছে। সেগুলি সময় মতো পরিষ্কার না হওয়াতেই কীটনাশক কাজ করছে না। তবে খুব শীঘ্রই পুরসভার পক্ষ থেকে ওয়ার্ড-ভিত্তিক পরিদর্শন করিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dikshya bhuniya mosquito behela
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE