লেভেল ক্রসিং-হীন প্রিন্সেপ ঘাট স্টেশন এলাকা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
জবরদখল উচ্ছেদ, ঝুপড়ি তোলা এবং কাঁটা তার দিয়ে ঘিরে দেওয়া সবই করা হয়েছে। কিন্তু রেললাইনে কাটা পড়া ঠেকাতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ। গত ছ’মাসে ৩০ জন কাটা পড়েছেন। কয়েক জন আহত হয়ে প্রাণে বাঁচলেও অধিকাংশেরই মৃত্যু হয়েছে। ফলে বাধ্য হয়েই মৃত্যু ঠেকাতে দমদম-মাঝেরহাট চক্র রেলের ট্রেনের গতি আরও কমিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ। এমনিতেই ওই শাখায় ট্রেনের গতি কম। এ বার গতি আরও কমলে যাত্রীদেরই গন্তব্যে পৌঁছতে সময় লাগবে বেশি।
রেল সূত্রে খবর, দমদম থেকে মাঝেরহাট (প্রায় ১৭ কিলোমিটার) পর্যন্ত যে ১৩টি স্টেশন রয়েছে, তার বেশির ভাগ স্টেশন এবং রেললাইন সংলগ্ন এলাকায় ঝুপড়ি থেকে শুরু করে জবরদখল রয়েছে। আবার বাগবাজার থেকে গঙ্গার পাশ দিয়ে রেললাইন যাওয়ায় সেখানে এমনিতেই মানুষের ভিড় থাকে। সেখানেও হয় মুশকিল। চালক বারবার হর্ন বাজালেও দল বেঁধে যাওয়া মানুষ তাকিয়েও দেখেন না যে, ট্রেন আসছে। আর তোয়াক্কা না করে লাইন পেরোতে গিয়েই বারবার দুর্ঘটনায় পড়ছেন তাঁরা। বিশেষ করে বড়বাজার এলাকায় ভিড় আরও বেশি। কিন্তু গঙ্গার পাড় ধরে সকাল-সন্ধ্যায় মানুষের অবাধ যাতায়াতের জন্য ট্রেন চালানো আরও মুশকিল হয়ে পড়ছে। আর এতেই বাড়ছে দুর্ঘটনা। রেল-কর্তাদের বক্তব্য, মাঝেমধ্যেই ঝুপড়ি সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্ল্যাটফর্ম থেকে বেআইনি জবরদখল তুলে দেওয়া হচ্ছে কিন্তু কয়েক দিন যেতে না যেতেই তারা ফের এসে দখল করে নেওয়ায় লাভের লাভ কিছুই হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়েই মৃত্যু ঠেকাতে ট্রেনের গতি আরও কমানোর কথা ভাবা হচ্ছে। তবে একই সঙ্গে চক্ররেলের লাইনে বেশ কিছু জায়গায় ঠিক মতো লেভেল ক্রসিং না থাকা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
শুধু চক্র রেল নয়, দেশ জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় মানুষ রেলেলাইনে কাটা পড়েন। রেল সূত্রে খবর, প্রাক্তন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদীর সময়ে অনিল কাকোদকরের কমিটি রেলে কাটা পড়ার বিষয়টি তাদের রিপোর্টে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেছিল। কমিটি বলেছিল, রেললাইনে কাটা পড়ার সমস্যা রয়েছে গোটা দেশেই। রিপোর্টে বলা হয়, গোটা দেশে এক বছরে রেলে কাটা পড়ার সংখ্যা নয় নয় করে ১৫ হাজারেরও বেশি। কিন্তু রেল বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে না। রেলে কাটা পড়লেই মৃতদের বেআইনি চলাচলকারী হিসেবে চিহ্নিত করে দেখানো হয়। ফলে এর হিসেবও থাকে না। তাঁদের মতে, ওই দুর্ঘটনার পিছনের কারণগুলি অনুসন্ধান করে মেটাতে হবে।
ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই ঘটনা বড় যে কোনও দুর্ঘটনা থেকেও ভয়ানক। ওই রিপোর্টে সুপারিশ ছিল, রেল, রাজ্য সরকার ও বিভিন্ন এনজিও-কে নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি তৈরি করতে হবে। তার পরে যে সব এলাকায় বেশি মানুষ কাটা পড়ছেন, সেই সব এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে জবরদখলদের সরিয়ে তাঁদের পুনর্বাসন দিয়ে রেললাইনের পাশ দিয়ে ‘গার্ড ওয়াল’ও নির্মাণ করে দিতে হবে। কিন্তু তার পরেই রেলমন্ত্রী পাল্টে যায়। ওই রিপোর্টও ফিতের ফাঁসে আবার বন্ধ হয়ে যায়। কেউই বিষয়টি নিয়ে আর না ভাবায় মৃত্যুর সংখ্যা কমেনি, উল্টে বাড়ছে। রেলের প্রাক্তন কর্তা সুভাষরঞ্জন ঠাকুরের কথায়, “অবিলম্বে গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি ভাবা উচিত। অতিরিক্ত ভিড়ের এলাকায় দেওয়াল তুলে রেললাইনকে আলাদা না করে দিলে কাটা পড়ার ঘটনা কমানো যাবে না।”
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, “রেল নিশ্চই ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু যাত্রীদেরও সচেতন হওয়া দরকার। তাঁদের সচেতনতা না এলে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব হবে না। তবে আমরা যাত্রীদের সচেতন করে মাইকে ঘোষণা, পোস্টার ও বিজ্ঞাপন দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। পাশাপাশি, প্ল্যাটফর্ম বা রেললাইনের পাশে রাস্তা আটকানো মানুষদেরও সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।” কিন্তু অনেক দিন ধরেই তো এই শাখায় এমন ভাবেই ট্রেন চলছে, কিন্তু আচমকা হইচই কেন? রেলের ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, এখন সকাল-সন্ধ্যায় অনেক বেশি লোকজন আসছেন ওই এলাকায়। গঙ্গার পাড়ে, পার্কগুলিতে বেড়াতে আসার মানুষের সংখ্যাও কম নয়। ফলে দুর্ঘটনা বাড়ছে। তাতেই চিন্তিত রেল কর্তৃপক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy