শাসক দলেই বিভাজন!
বিভাজন নীতির প্রশ্নে। বোর্ড গড়ব না বিরোধী হব, সেই প্রশ্নে।
শিলিগুড়ি পুরসভার ত্রিশঙ্কু ফলই তৃণমূলের একাংশের এই দ্বিধার নেপথ্যে। মোট ৪৭টি আসনের মধ্যে বামেরা যেখানে ২৩, তৃণমূল মাত্র ১৭টি। তবু যে ভাবেই হোক অশোক ভট্টাচার্যের মেয়র হওয়া রুখতে হবে, এমন একটা বার্তা ক্রমশ জোরদার হচ্ছে তৃণমূল শিবিরের অনেকের মধ্যেই। এই অবস্থায় দলের দার্জিলিং জেলা নেতাদের একাংশ ‘মানুষের রায় মেনে বিরোধী দলে থাক উচিত’ বলেই মনে করছেন। অন্য পক্ষের লক্ষ্য আবার অশোকবাবুকে ঠেকানো। যেনতেনপ্রকারেণ পুরবোর্ড গড়তে উদয়াস্ত ছোটাছুটি, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনালাপ করে চলেছেন। তাঁদের কাছে এটা ‘মর্যাদার লড়াই’।
কংগ্রেস-বিজেপি-নির্দলকে কাছে টানার চেষ্টাই শুধু নয়, বাম শরিকদের ‘সমর্থন’ পেতেও মরিয়া শাসকদলের ওই অংশ। তার জন্য ফ্রন্টে ভাঙন ধরাতে নানা ‘অফার’-এর কথাও শহরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে। ফ্রন্ট সূত্রের খবর, আরএসপি কাউন্সিলর রামভজন মাহাতো এবং ফব কাউন্সিলর দুর্গা সিংহের সমর্থন টানতে তৃণমূল মরিয়া। আরএসপি-র জেলা সম্পাদক তাপস গোস্বামী বলেন, ‘‘অনেক অফারের কথা শুনছি। অসম্ভব স্বপ্ন দেখছে কেউ কেউ। তবে, আমরাই বোর্ড গড়ব।’’ ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক অনিরুদ্ধ বসু জানান, অনেক ‘বহুমূল্য সব প্রস্তাব’ বাতাসে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘অমূল্য অফার হলেও দুর্গা কোথাও যাবেন না। মনে রাখতে হবে, তৃণমূলের আমলে ওঁর বাবাকে ৪১ দিন বিনা কারণে জেল খাটতে হয়েছে। মাত্র ক’দিন আগে ছাড়া পেয়েছেন তিনি। এ সব ভুলে যাওয়া কোন মূল্যেই সম্ভব নয়।’’
তবু ঝুঁকি না নিয়ে বোর্ড গড়া নিশ্চিত করতে দ্রুত ‘নির্দল’ প্রার্থীর সঙ্গে লিখিত বোঝাপড়া করতে আসরে নেমেছে বাম শিবিরও। সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার কিংবা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোকবাবু, দু’জনেই বলেছেন, ‘‘অনেক কিছু শুনছি। খেয়ালও রাখছি। এ সব করে কোনও লাভ হবে না। এ টুকু বলতে পারি, জনতার রায়ের বিরুদ্ধে গেলে শিলিগুড়ির মানুষ ছেড়ে কথা বলবেন না!’’ জীবেশবাবুর দাবি, ‘‘আমাদের বোর্ড গড়তে কোনও অসুবিধে হবে না। বামফ্রন্টে ভাঙন ধরানোর চেষ্টাও সফল হবে না।’’
তৃণমূলের জেলা কমিটির একাধিক নেতা কিন্তু ঘরোয়া আলোচনায় জানাচ্ছেন, তাঁরা জবরদস্তি বোর্ড গড়ার পক্ষপাতি নন। বরং, রায় মেনে বিরোধী শিবিরে বসতে চান। কিন্তু, নান্টু পালকে পদে বসাতে দলের একাংশ মরিয়া। তাঁরা দলের প্রদেশ নেতাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন, ছ’বছর আগে অশোকবাবুই আড়াল থেকে কংগ্রেসের মেয়র পদপ্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তৃণমূলের গৌতম দেব মেয়র হতে পারেননি। এ বার ‘রাজনৈতিক শোধ’ তুলতে চায় শাসক দলের ওই অংশ। দলের অন্দরের খবর, জেলা নেতৃত্বের একাংশের আগ্রহ দেখেই প্রদেশ তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের কয়েক জনও অশোকবাবু যাতে বোর্ড গড়তে না পারেন, সে জন্য সব রকম চেষ্টা করার পরামর্শ দিয়েছেন।
তবে সেই প্রচেষ্টায় দলনেত্রীর সিলমোহর মিলেছে কি না, তা স্পষ্ট করেননি কোনও নেতাই। বৃহস্পতিবার নান্টুবাবু বলেন, ‘‘আমি কলকাতায় রয়েছি। দিদির (দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) সঙ্গে দেখা করব। এর বেশি কিছু বলছি না।’’ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌতমবাবুও মন্তব্য এড়িয়ে যাচ্ছেন। প্রশ্ন হল, নানা দল ভাঙিয়ে বোর্ড গড়ার কাজে তৃণমূল সফল হওয়ার সামান্য সুযোগ মিললেও নান্টুবাবুকে দলের সকলে মেয়র পদে বসাতে রাজি হবেন কি? নাকি বোর্ড গড়ার চেষ্টা সফল হলে ও দলনেত্রীর সিলমোহর মিললে অনিচ্ছা সত্ত্বেও নান্টুবাবুকে সকলেরই মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে মেনে নিতে হবে? গৌতমবাবু বলেন ‘‘বোর্ড গড়া নিয়ে এখন কিছু বলব না। সময়ই সব বলবে।’’
শিলিগুড়িতে এই মুহূর্তে যাঁর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি, সেই নির্দল কাউন্সিলর অরবিন্দ ঘোষ ওরফে অমুদা কী বলছেন? তাঁর কথায়, ‘‘এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে বামেদের কী শর্ত দেব, তা অনেকটা ঠিক হয়েছে। যেমন, শিলিগুড়ি শহরে বহুতল নির্মাণ আইন কঠোর হওয়া উচিত। না হলে আগামী দিনে শহরের সমস্যা হবে। এমন কোন কোন শর্তে সমর্থন করব, তা নিয়ে আলোচনা করে বামেদের চিঠি দেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy