ব্লক অফিসে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগে এফআইআর দায়ের হয়েছে তৃণমূলের নান্টু প্রধান ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে। অথচ একদিন কেটে যাওয়ার পর পুলিশ গ্রেফতার করতে পেরেছে শুধুমাত্র নান্টুর ঘনিষ্ট সঙ্গী যদু ওঝা নামে এক ব্যক্তিকে। পুলিশের দাবি, নান্টুর খোঁজে রাতভর তল্লাশি চালানো হলেও সন্ধান মেলেনি। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, শাসক দলের ছত্রছায়ায় থাকা নান্টুকে ধরেও ধরতে চাইছে না পুলিশ।
কিন্তু এই নান্টু প্রধানের এমন বাড়বাড়ন্তের কারণ?
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর পনেরো আগেও মাঠে কুয়োর চারদিকে বাঁশের বেড় দেওযার কাজ করতেন নান্টু। ২০০৩ সালে স্থানীয় মহম্মদপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতে চাঁদহরি প্রধানের তৃণমূল প্রধান হওয়ার সুবাদে রাজনীতি ও পঞ্চায়েতের কাজে হাতেখড়ি হয় ছেলে নান্টুর। ক্রমে এলাকায় সিপিএম বিরোধিতার মুখ হয়ে ওঠেন নান্টু। বিরোধীদের ধুয়ে মুছে সাফ করার পর একাধিপত্য কায়েম করে ধীরে ধীরে দলের একাংশের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছেন এই ব্যক্তি। আর ভোট বৈতরণী পেরোতে বরাবরই তাঁর পাশে থেকেছেন জেলা ও স্থানীয় নেতাদের একাংশ।
২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত গ্রামপ্রধান ছিলেন নান্টুর বাবা। আর গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মহম্মদপুর-১ পঞ্চায়েতের অধিকাংশ আসনে জেতে তৃণমূল। নান্টুর স্ত্রী অপর্ণা হন প্রধান, আর উপপ্রধান হন তাঁর বাবা। পঞ্চায়েত সমিতিতে জিতে পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ হন নান্টুর ভাই পিন্টু। কিন্তু, নান্টুর কথা শুনে পঞ্চায়েত পরিচালনা করতে না চাওয়ায় পঞ্চায়েত সদস্যের পদ থেকেই পদত্যাগ করতে বাধ্য হন চাঁদহরিবাবু। উপনির্বাচনে সেই আসনে বিনা বাধায় জিতে উপপ্রধান হয়েছেন দলের অঞ্চল সভাপতি নান্টুই।
নামে বেনামে মদ-গাঁজার ব্যবসা, ঠিকাদারি, তোলাবাজি, বাহিনী নিয়ে মারধর হুমকির নানা অভিযোগ উঠেছে এই নান্টু প্রধানের বিরুদ্ধে। একবার গ্রেফতারও হতে হয়েছিল তাঁকে। কেলেঘাই নদী সংস্কারের কাজে আসা ঠিকাদার সংস্থার কাছে তোলা চেয়ে কাজে বাধা দেওয়া ও আধিকারিকদের মারধরের অভিযোগ ও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু প্রশাসনের সাহস হয়নি তাঁর বিরুদ্ধে যাওয়ার।
বুধবারের ঘটনার পর নান্টুর বিরুদ্ধে এখনও বিবৃতি দিতে পারছেন না তৃণমূলের কোনও নেতা। পুলিশ সরাসরি নান্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলেও ভগবানপুর-১ ব্লক সভাপতি মদনমোহন পাত্রের দাবি, ‘‘নান্টু স্মারকলিপি দেওয়ার নেতৃত্বে থাকলেও ঘটনাস্থলে ছিলেন না।” দলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী তো জানিয়েছেন, তিনি এই ঘটনার কথা জানতেনই না। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তথা ভগবানপুরের সিপিএম নেতা সুব্রত মহাপাত্রের কথায়, ‘‘দলের প্রশ্রয়ে বেড়ে ওঠা নান্টু এখন সমাজবিরোধী। পুলিশ সব জেনেও চুপ করে রয়েছে।’’
একশো দিনের কাজের প্রকল্পে টাকা না পাওয়া পর্যন্ত বৃহস্পতিবার সকালে মহম্মদপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েত ভবনে তালাও ঝোলানো হল। এ দিন সকাল দশটার দিকে পঞ্চায়েত অফিসের কর্মীরা কাজে যোগ দিতে এলে তাঁদের তেড়ে আসেন মহিলারা। ভয়ে কর্মীরা ফিরে এসে বিডিও অফিসেই হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। পঞ্চায়েতের প্রধান নান্টু প্রধানের স্ত্রী অপর্ণাদেবী বলেন, “আমিও বাধা পেয়ে ফিরে এসেছি। মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছি।” সিপিএম নেতা সুব্রত মহাপাত্র বলেন, “ নান্টু প্রধানের বিরুদ্ধে এফআইআর হওয়ায় পাল্টা আক্রোশে পঞ্চায়েত বন্ধ করে রাখা হয়েছে নান্টুরই নির্দেশে।’’ এগরার মহকুমাশাসক রজতকান্তি বিশ্বাস বলেন, “এলাকায় আইনশৃঙ্খলার সমস্যা রয়েছে। স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে পঞ্চায়েত খোলার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” আর যাকে পুলিশ খুঁজছে সেই নান্টু প্রধান কিন্তু পুরো দোষ দিয়েছে পুলিশকেই। তাঁকে ফোনে ধরা হলে বলেন, ‘‘ভাঙচুরের সময় আমি বিডিওর সামনেই বসেছিলাম। পরে উঠে গিয়ে শ্রমিকদের সামলানোর চেষ্টা করি। কিন্তু পুলিশের লাঠিচার্জে দু’জন মহিলা জখম হওয়ায় মানুষ আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ভাঙচুর করে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy