Advertisement
১৭ মে ২০২৪
Haldia

সুকুমারের লক্ষ্মীপুজোয় আলপনা আঁকেন সইফুদ্দিন

গ্রামে সুকুমার সইফুদ্দিনকে মামা বলে ডাকেন। আর সইফুদ্দিনের কাছে সুকুমার আদরের ভাগ্নে। গ্রামবাসীদের কাছেও তাঁদের এই মধুর সম্পর্ক সম্প্রীতির বার্তা পৌঁছে দিয়েছে।

প্রতিমার সামনে আলপনা আঁকছেন সইফুদ্দিন (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র

প্রতিমার সামনে আলপনা আঁকছেন সইফুদ্দিন (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদতাতা
হলদিয়া শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২২ ০৭:২২
Share: Save:

সম্প্রীতির এমন অটুট বন্ধনকে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই সাধুবাদ জানিয়েছেন। আবার অনেকের মতে এটাই তো এ রাজ্যের স্বাভাবিক ছবি। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষদের মধ্যে হৃদয়ের যোগ অনেক নিবিড় এমন ঘটনা সেটাই প্রমাণ করে।

রবিবার লক্ষ্মীপুজো। আবার এই দিনই ইসলামের প্রবর্তক হজরত মহম্মদের জন্মদিন। যা মুসলমান সম্প্রদায়ের মানু‌ষজনের কাছে যা নবী দিবস। শোভাযাত্রায় এ দিন মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে যেমন সামিল হয়েছিলেন একই গ্রামের যুবক সুকুমার সামন্ত। কুমারপুর থেকে বেরোয় শোভাযাত্রা। নানাবিধ সামাজিক কর্মসূচিও ছিল নবি দিবসে। শোভাযাত্রায় ছিল একাধিক টোটো। যার মধ্যে ছিলেন টোটো চালক সেখ সইফুদ্দিন। নবী দিবস পালনের পর যাঁকে আলপনা দিতে দেখা গেল সুকুমারের বাড়ির লক্ষ্মী পুজোয়।

গ্রামে সুকুমার সইফুদ্দিনকে মামা বলে ডাকেন। আর সইফুদ্দিনের কাছে সুকুমার আদরের ভাগ্নে। গ্রামবাসীদের কাছেও তাঁদের এই মধুর সম্পর্ক সম্প্রীতির বার্তা পৌঁছে দিয়েছে। হলদিয়া শহর থেকে বেশ খানিকটা দূরে হলদিয়া ব্লকের চকদ্বীপা গ্রাম পঞ্চায়েতের ডালিম্বচক গ্রাম। রবিবার সেখানেই দম ফেলার সময় ছিল না সইফুদ্দিনের। নবী দিবসের শোভাযাত্রা থেকে ফিরেই চলে যান চৈতন্যপুর বাজারে। দেখেশুনে ভাগ্নের বাড়ির জন্য লক্ষ্মীপ্রতিমা কিনতে। তারপর কলাগাছ কেটে আনা থেকে লাইট, প্যান্ডেল সবেতেই হাত লাগিয়েছেন মামা। এমনকী দেবীর ভদ্রাসনের জায়গায় এঁকেছেন নিখুঁত আলপনা।

সুকুমারের স্ত্রী মিঠু বলেন, ‘‘মামা এই কাজ এত ভাল করেন যে আমাদের ভাবনার কিছু থাকে না। ফি বছর আমাদের বাড়ির পুজোয় মামা একেবারে ঘরের লোকের মতো হাজির থেকে সব কাজে হাত লাগান।’’ সুকুমার বলেন, ‘‘এ দিন মামা বিশ্ব নবী দিবস পালন করেই সোজা চলে এসেছেন আমাদের বাড়িতে লক্ষ্মীপুজোর কাজে। আমিও নবী দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি মামার সাথে।’’ সইফুদ্দিনের কথায়, ‘‘এটা তো ভাগ্নের বাড়ি। তাই সবটাই করতে হয়। নবী দিবসের শোভাযাত্রা শেষ করেই চলে এসেছি। উৎসবের কী কোনও রং আছে! গ্রামের মানুষ আমরা সবাই মিলে মিশে থাকি। ধর্ম নিয়ে কোনও বড় কথা বুঝি না। শুধু এটাই বুঝেছি, মনের দিক থেকে কাছে এলেই সব বেড়া ভেঙে যায়।’’

কথা শেষ করে ফের আলপনায় তুলির টান দিতে শুরু করেন সইফুদ্দিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Haldia Communal harmony
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE