এক সময়ের ‘ডন’-এর এ কী হাল! বিধ্বস্ত চেহারা, চোখে কালি। তা দেখে চমকে উঠছেন সহবন্দিরা, এমনকী একাংশ কারাকর্তাও।
দিন কয়েক আগে হঠাৎই জেল হাসপাতালে যান মেদিনীপুরের এক কারাকর্তা। সেখানেই দেখা হয় বাসব রামবাবুর সঙ্গে। এক সময় খড়্গপুরের ‘ত্রাস’ রামবাবু এখন আর এক রেলমাফিয়া শ্রীনু নায়ডু খুনের মামলায় জেলবন্দি। দু’-চার কথার পরেই ওই কারাকর্তার কাছে রামবাবুর আর্জি, ‘একেবারে ঘুম আসছে না। রাতেও ঘুমোতে পারছি না। কয়েকটা ঘুমের বড়ি হবে!’ শুনে তো থ কারাকর্তা। রেলশহর দাপিয়ে বেড়ানো পুরনো সেই ‘ডন’-এর সঙ্গে এই রামবাবুকে মেলাতে পারছিলেন না তিনি। আগেও তো মেদিনীপুর জেলে এসেছে রামবাবু। মাসের পর মাস জেল খেটেছে। চাকরি সূত্রে তখনও মেদিনীপুরেই ছিলেন ওই কারাকর্তা। তবে তখনও রামবাবুকে এতটা বিধ্বস্ত দেখেননি তিনি। ওই কারাকর্তা মানছেন, “আগের রামবাবুর সঙ্গে এখনকার রামবাবুর অনেক অমিল। ওকে এতটা বিধ্বস্ত সত্যিই আগে দেখিনি। মিল শুধু এক জায়গাতেই। আগেও জেলে থাকাকালীন নিয়মিত শিব পুজো করত, এখনও করছে।”
রামবাবুর জেলবাস এই প্রথম নয়। জেল সূত্রের খবর, গত বছর খড়্গপুরের অন্য এক মামলায় মাসখানেক ৩২ নম্বর সেলে বন্দি ছিল রেলশহরের ‘ডন’। সে বার জেলে সকলের সঙ্গেই হাল্কা মেজাজে আড্ডা দিতে দেখা যেত তাকে। জেলেই আসত রামবাবুর পছন্দের বিভিন্ন দক্ষিণী খাবারের পদ সম্বর বড়া, ইডলি, উপমা, ধোসা। এ বার অবশ্য মুখে রুচি নেই তার। এক জেল কর্মীর কথায়, ‘‘গতবার রামবাবুর ভাবখানা এমন ছিল, যে তাকে কেউ জেলে ধরে রাখতেই পারবে না। আর এ বার মনমরা রামবাবু দিনে দু’জনের সঙ্গে কথা বলে কি না সন্দেহ। এমনকী এক আধিকারিকের কাছে সে কান্নাকাটিও করেছে। ভাবা যায়!’’
শ্রীনু খুনের মামলায় ধৃত রামবাবু আপাতত মেদিনীপুর জেল হাসপাতালের ‘ফিভার ওয়ার্ড’-এ রয়েছে। জেল সূত্রে খবর, এখানে শিবের ছবি রয়েছে। দিনের একটা বড় সময়ই সেই ছবির সামনে বসে থাকতে দেখা যায় রামবাবুকে। এই ওয়ার্ডের সহবন্দিদের সঙ্গেও বিশেষ কথাবার্তা বলে না রামবাবু। সপ্তাহে একদিন পরিজনেরা আসেন। তাঁদের সঙ্গেই যা একটু কথা হয় রামবাবুর।
শারীরিক পরিস্থিতি দেখে রামবাবুকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে স্থানান্তর করতে চেয়েছিলেন জেল হাসপাতালের এক চিকিত্সক। রামবাবু রাজি হয়নি। জেলের এক সূত্রে খবর, নানা রোগে ভুগছে সে। এক দিকে স্পন্ডেলাইটিস, অন্য দিকে হাইপ্রেশার।
এক কারাকর্তা বলছিলেন,“চার্জশিটে শ্রীনু খুনের মূল চক্রী হিসেবে ওকে দেখানোর পরই রামবাবু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হতে পারে, এমন পরিস্থিতির জন্য ও মানসিক ভাবে তৈরি ছিল না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy