Advertisement
১৯ মে ২০২৪
প্রচারে আসছেন অভিষেক

পদ্ম-কাঁটা সামলাতে মরিয়া তৃণমূল

বিজেপি-র শক্তি বৃদ্ধিতে যে দল চিন্তিত, সম্প্রতি রেলশহরে এসে তা বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। তাঁর বক্তব্যেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে ‘হাত’ নয়, এখানে তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ ‘পদ্ম’ই। আর সেই পদ্মের কাঁটা উপড়ে ফেলতে রীতিমতো হেভিওয়েট নেতাদের নিয়ে আসছে তৃণমূল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৩০
Share: Save:

বিজেপি-র শক্তি বৃদ্ধিতে যে দল চিন্তিত, সম্প্রতি রেলশহরে এসে তা বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। তাঁর বক্তব্যেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে ‘হাত’ নয়, এখানে তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ ‘পদ্ম’ই। আর সেই পদ্মের কাঁটা উপড়ে ফেলতে রীতিমতো হেভিওয়েট নেতাদের নিয়ে আসছে তৃণমূল।

বিদায়ী পুরবোর্ড যদিও কংগ্রেসের হাতে থাকা সত্ত্বেও পরিস্থিতি বুঝেই খড়্গপুর পুরভোটে এই বাড়তি বাড়তি গুরুত্ব। সময় নষ্ট না-করে দলের সর্বস্তরের কর্মীদের প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তাঁরা। হেভিওয়েটদের এনে শেষ বেলায় প্রচারে ঝড় তোলারও নকশা প্রায় তৈরি করে ফেলেছে জোড়াফুল-শিবির। কে থাকছেন না বক্তাদের সেই তালিকায়? দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরভোটের প্রচারে রেলশহরে আসবেন কি না, তা অবশ্য এখনও চূড়ান্ত নয়। তবে আসবেন শুভেন্দু অধিকারী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো তরুণ সাংসদ থেকে শুরু করে সুব্রত বক্সী, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিমেরা। দলের এক সূত্রে খবর, কলকাতা পুরভোট মিটলে অর্থাত্‌ ১৮ এপ্রিলের পরেই রেলশহরে শুরু হবে তাবড় নেতার আনাগোনা। ইতিমধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো, যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচার-সূচি চূড়ান্তও হয়ে গিয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২২ এপ্রিল রেলশহরে তাঁর সভা হবে। তবে ‘হেভিওয়েটদের’ সভার দিনক্ষণ নিয়ে এখনই মুখ খুলতে নারাজ তৃণমূল। দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “এখন বাড়ি বাড়ি প্রচার চলছে। ছোট সভা হচ্ছে। পরে বড় সভা হবে। রাজ্য নেতৃত্বের অনেকেই আসবেন।”

এ দিকে পুরভোটে দলের রণকৌশল ঠিক করতে মঙ্গলবার রেলশহরে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছে তৃণমূলের। সে বৈঠক আবার হয়েছে খড়্গপুরের কৌশল্যায়, দলীয় কার্যালয়ে। যে কৌশল্যা বিজেপি-র ‘গড়’ বলেই পরিচিত। কংগ্রেস অধ্যুষিত খড়্গপুরে এই এলাকার ওয়ার্ডটি কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই গেরুয়া-শিবিরের দখলে। বিজেপি-র সেই ‘গড়ে’ বৈঠক করেই পুরভোটে বিজেপিকে ধরাশায়ী করার পরিকল্পনা করেছেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব।

পুরভোটকে গুরুত্ব দিতে তৃণমূল যে এ বার অনেক সতর্ক তার প্রমাণ মেলে বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের তালিকাতেই। জেলা কিংবা রেলশহরে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল নতুন কিছু নয়। সে সব কোন্দল দূরে সরিয়ে রেখে বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন সবপক্ষের নেতৃত্ব। ছিলেন দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, তিন জন জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্‌ ঘোষ, নির্মল ঘোষ, আশিস চক্রবর্তী। ছিলেন জহরলাল পাল, দেবাশিস চৌধুরীরাও।

বৈঠক শেষে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতার তাত্‌পর্যপূর্ণ ভাবে মন্তব্য করেন, “এ বার লড়াইটা সত্যিই কঠিন। শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেখিয়ে হবে না! নিজেদেরও পরিবর্তন দরকার! কিছুটা দেরিতে হলেও এটা অনেকে বুঝতে পারছেন!” তাঁর উপলব্ধি, ‘‘এটা তো ঠিক, আগে দল। মানুষ বিমুখ হয়ে গেলে তখন চাওয়াও থাকবে না। পাওয়াও থাকবে না! দলের ফল খারাপ হলে নিজের পায়ের তলায় জমিও থাকবে না!”

তৃণমূলের এক সূত্রে খবর, রুদ্ধদ্বার এই বৈঠক থেকে রেলশহরের পুরভোটের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটিই এ বারের পুরভোটে দলের তরফে সমস্ত কাজকর্ম দেখভাল করবে। পাশাপাশি, শুধুমাত্র পুরভোটকে ‘পাখির চোখ’ করে খড়্গপুর শহরকে সাংগঠনিক ভাবে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একদল নেতাকে এক একটি এলাকার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জেলা তৃণমূলের এক নেতার ব্যাখ্যা, “রেল-এলাকার সমস্যা আর শহরের অন্য এলাকার সমস্যা এক নয়। শহরের অন্য এলাকাগুলোর মধ্যেও মৌলিক কিছু তফাত্‌ রয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখেই শুধুমাত্র পুরভোটের জন্য খড়্গপুর শহরকে সাংগঠনিক ভাবে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এটা পুরোপুরি দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়।”

গত লোকসভা ভোটে খড়্গপুর শহরে আশাতীত ফল হয়েছিল বিজেপি-র। লোকসভার নিরিখে এখানে ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৯টিতেই এগিয়ে গেরুয়া-শিবির। বিজেপি যে সব এলাকায় এগিয়ে, সেখানে প্রচারে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে তৃণমূল। এ নিয়ে বৈঠকে কিছু সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্‌ ঘোষ, নির্মল ঘোষেরা বলেন, “বাড়ি বাড়ি প্রচার শুরু হয়েছে। এরপর প্রচার কী ভাবে এগোবে, তা নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা চলছে। প্রচারে রাজ্য থেকে অনেকেই আসবেন।”

বৈঠক শেষে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতার মন্তব্য, “বলতে দ্বিধা নেই, গোড়ায় কারও কারও আত্মসন্তুষ্টি এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে তাঁরা ভেবেছিলেন, ভোটটার তেমন গুরুত্বই নেই। বিজেপির প্রভাব যে বেড়েছে, এটা উপলব্ধি করার চেষ্টাই করছিলেন না। তবে কিছুটা দেরিতে হলেও ভুলটা ভেঙেছে! এখনও কিছু দুর্বলতা রয়েছে। যেগুলো এখনই কাটিয়ে ওঠা জরুরি। না হলে আগামী দিনে দলের বাইরে-ভিতরের ছোট ছোট সমস্যাগুলোই বড় হয়ে দেখা দেবে!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE