Advertisement
১৭ মে ২০২৪

হাত কেটে হোয়েল জুজু ছাত্রীর

স্মার্টফোন হাতে ছেলেমেয়েদের মারণ-গেম খেলা আটকাতে মরিয়া মন্ত্রী থেকে পুলিশ। স্কুলে-স্কুলে হচ্ছে শিবির। আর এই জুজুর তলে-তলে কিশোর বয়সের নানা ফন্দিফিকির প্রায় হিড়িক হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

ক্ষত। নিজস্ব চিত্র

ক্ষত। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলঙ্গি শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৩৫
Share: Save:

আগে লোকের ‘রজ্জুতে সর্পভ্রম’ হত, এখন হাত কাটলেই ‘ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জ’!

স্মার্টফোন হাতে ছেলেমেয়েদের মারণ-গেম খেলা আটকাতে মরিয়া মন্ত্রী থেকে পুলিশ। স্কুলে-স্কুলে হচ্ছে শিবির। আর এই জুজুর তলে-তলে কিশোর বয়সের নানা ফন্দিফিকির প্রায় হিড়িক হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ জানা যায়, জলঙ্গির প্রত্যন্ত নওদাপাড়ায় নবম শ্রেণির এক ছাত্র নিজের ঘরে খাটে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। কেন? ছাত্রের দাবি, সে ‘ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জ’-এর ৩২ নম্বর ধাপে ছিল। খেলা চালানোর দায়িত্বে থাকা ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটর’-এর নির্দেশেই আগুন লাগিয়েছে।

শুনে চোখ কপালে ছেলের মুদি দোকানি বাবার। ছেলের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে আছড়ে ভেঙে ফেলেন তিনি। পুলিশেরও দ্বারস্থ হন। শেষমেশ সোমবার ছেলেকে নিয়ে কলকাতায় কাউন্সেলিং করাতে চলে গিয়েছেন তার বাবা-মা। ছাত্রটির এক আত্মীয়ের কথায়, ‘‘বাবা-মায়ের এক মাত্র সন্তান। পড়াশোনায় ভালই ছিল। কিন্তু মাসখানেক ধরে পড়া লাটে তুলে দিনরাত মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকত। তার পর এই কাণ্ড!’’

জলঙ্গির বাগমারা হাইস্কুলের ওই ছাত্রের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেই মঙ্গলবার শোনা যায়, জলঙ্গি বালিকা বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী স্কুলের শৌচালয়ে ঢুকে ব্লেড দিয়ে হাত কেটে ‘নীল তিমি’ আঁকার চেষ্টা করছিল। সহপাঠীরা হাতেনাতে তাকে ধরে ফেলে প্রধান শিক্ষিকা শ্যামলী ধাড়ার কাছে নিয়ে যায়। তাঁর কথায়, ‘‘আমি জিজ্ঞাসাবাদ করতে মেয়েটি বলে, ব্লু হোয়েলে আসক্ত হয়েই সে এই কাজ করেছে। তা শুনে জলঙ্গি থানার সঙ্গে যোগাযোগ করি। পুলিশ এসে কাউন্সেলিং করানোর জন্য দেয়। পরে ছাত্রীটির বাবা-দাদা এসে তাকে বাড়ি নিয়ে যান।’’

মজার কথা, ছাত্রীটির স্মার্টফোনই নেই। ‘‘কোনও মোবাইলই পাইনি ওর কাছে। মেয়েটি অসংলগ্ন কথা বলছে। কখনও বলছে ব্লু হোয়েল খেলছিল, কখনও বলছে ব্যক্তিগত কারণে ওই কাণ্ড’’— বলছেন প্রধান শিক্ষিকা। পরে ছাত্রীটিও কবুল করে, ‘‘ব্যক্তিগত কারণেই কেটেছি। বাড়িতে জানাজানি হয়ে গেলে বকাবকি করবে বলে ব্লু হোয়েল খেলার কথা বলেছি।’’

রাশিয়া থেকে ছড়িয়ে পড়া ‘ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জ’ আসলে কোনও ‘গেম’ নয়। ফেসবুকের মতো কোনও সোশ্যাল নেটওয়ার্কে চালু গ্রুপ থেকে গোপনে নানা বিপজ্জনক কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয় খেলুড়েকে, যার শেষ ধাপ আত্মহত্যা। এই ধরনের গ্রুপ চালানো বা তার সন্ধান পাওয়া, কোনওটাই সহজ কাজ নয়। ফেসবুকে যে আদৌ এমন কোনও গ্রুপ সক্রিয়, তার প্রমাণ মেলেনি। শোলাপুর বা বাগদার মতো কিছু জায়গায় এই গেমের কথা শোনা গেলেও কোনও ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট করে প্রমাণ হয়নি।

মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারও বলেন, ‘‘জলঙ্গির দুই ঘটনায় ব্লু হোয়েলের প্রমাণ মেলেনি। ছাত্রটির বাবা মোবাইল ভেঙে ফেলেছেন, তার সঙ্গে সরাসরি কথাও বলা যায়নি। ছাত্রীটি সম্পর্কের টানাপড়েনেই হাত কেটেছে বলে আমরা জেনেছি।’’ তবে ছেলেমেয়েদের সন্দেহজনক আচরণ দেখলেই পুলিশে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

blue whale Wounded
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE