Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Domkol

উদ্বেগে যেন বন্‌ধ রায়পুরে

মাস দেড়েক থেকে এনআইএ আতঙ্কে ভুগছে ডোমকল। তবে দ্বিতীয় দফার অভিযান এবং এলাকার জলঙ্গি বিএসএফ ক্যাম্পে এনআইএ কর্তাদের ঘাঁটি গেড়ে বসা ও একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা আবারও নতুন করে জল্পনা দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মনে।

শুনশান: এনআইএ-র অভিযানের পরে। ছবি: সফিউল্লা ইসলাম

শুনশান: এনআইএ-র অভিযানের পরে। ছবি: সফিউল্লা ইসলাম

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস
ডোমকল শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২০ ০৫:২৮
Share: Save:

জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার হয়েছে এক জন। কিন্তু সেই খবর চাউর হতে থমথমে ডোমকলের দুটি গ্রাম। রানিনগরের নজরানা, আর ডোমকলের রায়পুর। দু’টি গ্রামের মধ্যে দূরত্ব প্রায় ৩০ কিমি হলেও দুই গ্রামের মধ্যে সোমবার থেকে অদ্ভুত ভাবে মিল পাওয়া গিয়েছে। গ্রামের মানুষের চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ, রাস্তাঘাটও শুনশান। বাইরের লোক দেখলে খুব বেশি কথা বলতে চাননি তারা।

তাদের চেনা ভদ্র শান্ত স্বভাবের আব্দুল মোমিনকে কেন গ্রেফতার করা হল সেটাই এখন বুঝে উঠতে পারছে না মোমিনের নিজের গ্রাম থেকে শ্বশুরের গ্রামের সাধারণ মানুষ। তাদের দাবি, যে মানুষটা পিঁপড়ে মারতে ভয় পায় সে আবার জঙ্গি হবে কি করে?

যদিও এনআইএ সূত্রে জানা গিয়েছে, এর আগে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল তাদের মধ্যে দু’জন, শামিম আনসারি ও আল মামুন কামালের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল মোমিনের।

মাস দেড়েক থেকে এনআইএ আতঙ্কে ভুগছে ডোমকল। তবে দ্বিতীয় দফার অভিযান এবং এলাকার জলঙ্গি বিএসএফ ক্যাম্পে এনআইএ কর্তাদের ঘাঁটি গেড়ে বসা ও একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা আবারও নতুন করে জল্পনা দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মনে। একাংশের মানুষের দাবি, বিশেষ কোনও কারণেই চক্রান্ত করে ফাঁসানো হচ্ছে বেশ কিছু যুবককে।

আবার অন্য একটা অংশের মানুষ মনে করছেন, কিছু না কিছু ভুল করে বসেছিল এই যুবকেরা, তার মাসুল দিতে হচ্ছে তাদের। আগেও যারা গ্রেফতার হয়েছিল সেই সময়ও প্রশ্ন উঠেছিল সাধারণ খেটে খাওয়া দরিদ্র পরিবারের শান্ত স্বভাবের নির্বিবাদী মানুষ কিভাবে জঙ্গি হতে পারে তা নিয়ে। আর রবিবার বিকেলে আবদুল মোমিনকে গ্রেফতার করার পরেও সেই একই প্রশ্ন উঠেছে নজরানা গ্রামে।

গ্রামের বাসিন্দা জহির মণ্ডল বলছেন, ‘‘জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িয়ে থাকলে কিছু-না-কিছু আঁচ পেতাম আমরা, একেবারে নিরীহ গোবেচারা শান্ত স্বভাবের ছেলেটি আর যাই হোক জঙ্গি হতে পারে না।’’

অন্য দিকে মোমিনের পরিবারের দাবি, মোমিনের হাতে একটা স্মার্টফোনও নেই। ফলে সামাজিক মাধ্যমে কোনও ভুল করার সম্ভাবনা ও তার নেই বলে এলাকার মানুষের দাবি।

নজরানা থেকে রায়পুর, দূরত্ব অনেকটা হলেও দুটি গ্রামে দুই পরিবারেরই ছবি রবিবার বিকেলে থেকে এক। খাওয়া-দাওয়া উড়ে গিয়েছে দুই পরিবারের সদস্যদের। বাঁশের চাটাই দিয়ে তৈরি ঘরের দরজা গুলোতেও ঝুলছে তালা।

মোমিনের স্ত্রী সুলেখা বিবি ঘটনার পরদিন শ্বশুরবাড়ি ছেড়েছেন ছেলে আবুজার ও মেয়ে মুসলিমাকে সঙ্গে নিয়ে। সুলেখার দাবি, ‘‘পুরোপুরি চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে আমার স্বামীকে। ওকে যদি ছেড়ে না দেওয়া হয় তাহলে সন্তানদের নিয়ে আত্মহত্যা করা ছাড়া আর আমার কাছে কোনও রাস্তা থাকবে না।’’

অন্য দিকে এনআইএ সূত্রে জানা গিয়েছে, রায়পুর থেকে তিন চার কিমি দূরেই নওদা পাড়া গ্রাম।

সেখান থেকেই এর আগে গ্রেফতার হয়েছিল আল মামুন কামাল ও শামিম আনসারিকে। এই শামিম আনসারির শ্বশুরবাড়ি রায়পুরের শিশু মাদ্রাসার লাগোয়া এলাকায়। ফলে মাঝেমাঝেই শামিম কামালের সঙ্গে আলোচনা হত মমিনের বলে দাবি তাদের। এমনকি রায়পুরের শিশু মাদ্রাসাতেও বারকয়েক বৈঠক হয়েছে বলে দাবি করছেন গোয়েন্দারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Domkol NIA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE