Advertisement
০১ জুন ২০২৪
Murshidabad Murder Case

‘ছেলেটা জ্বালাতন করছে, এক বার যাবি?’ সাবিনাকে প্রেমিকের হাতে খুন হতে দেখে মূর্ছা যান তাঁর বান্ধবী

মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদে মিঠু শেখের হাতে খুন হন সহপাঠিনী সাবিনা খাতুন। ওই ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন তিনি। তাঁর মুখে মিঠু-সাবিনার গন্ডগোলের কথা শুনলেন তদন্তকারীরা।

মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদের খুনের ঘটনা ফেরাল সুতপাকাণ্ডের স্মৃতি।

মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদের খুনের ঘটনা ফেরাল সুতপাকাণ্ডের স্মৃতি। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
দৌলতাবাদ শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২৪ ১৯:১৯
Share: Save:

প্রেমিকের সঙ্গে একা একা দেখা করতে যেতে রাজি ছিলেন না সাবিনা খাতুন। প্রিয় বান্ধবীকে সঙ্গে যেতে বলেছিলেন। যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু বান্ধবীকে নিরাশ করতে চাননি নাজিয়া (নাম পরিবর্তিত)। তাই সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা সাবিনাকে সঙ্গ দিয়েছিলেন নাজিয়া। কিন্তু চোখের সামনে বান্ধবীকে তাঁর প্রেমিকের হাতে খুন হতে দেখে সেখানেই মূর্ছা যান নাজিয়া। মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদে ছাত্রী খুনের ঘটনায় একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী তিনিই। সেই নাজিয়ার মুখে পুলিশ শুনল, কী ভাবে ১৮ বছরের মিঠু শেখের ছুরির আঘাতে খুন হন তাঁরই সহপাঠিনী ১৭ বছরের সাবিনা। দুপুরবেলা যে বীভৎস দৃশ্য দেখেছেন সেখান থেকে বেরোতেই পারছেন না নাজিয়া। বলতে গিয়ে বার বার কেঁদে ফেলছেন। আঁতকে উঠছেন। বান্ধবী যে আর নেই, সেটা কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না তাঁর।

মিঠুর পরিবারের দাবি, সম্পর্কের অবনতি থেকে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে। একই কথা বলছেন নাজিয়াও। তাঁর দাবি, মিঠু যে তাঁকে ডেকে আবার অশান্তি করবেন, সাবিনা সেটা জানতেন। তাই তাঁকে সঙ্গে যেতে বলেছিলেন। নাজিয়ার কথায়, ‘‘সাবিনা বলেছিল, ‘ছেলেটা বার বার জ্বালাতন করছে। দেখা করার জন্য চাপ দিচ্ছে। ভয় দেখাচ্ছে।’ তার পর বলেছিল, ‘তুই যাবি আমার সঙ্গে?’’’ ছোটবেলার বান্ধবী। অসুবিধায় পড়ে ফোন করছে। তাই তাঁর সঙ্গে যেতে রাজি হয়ে যান নাজিয়া। পুলিশকে তিনি জানান, অশান্তি যে হবে, তা আগেই আশঙ্কা করেছিলেন সাবিনা। তাই তাঁকে সঙ্গে নিয়েছিলেন। কিন্তু ‘শেষরক্ষা’ আর হল কই!

পুলিশকে নাজিয়া জানিয়েছেন, শনিবার দুপুরে প্রাইমারি স্কুলের সামনে সাবিনাকে দেখার পরে প্রথমে কান্নাকাটি শুরু করেন মিঠু। জড়িয়ে ধরতে যান সাবিনাকে। কিন্তু সাবিনা দূরে সরে যান। তার পর তর্কাতর্কি শুরু হয়। নাজিয়ার দাবি, দু’জনে একে অপরকে গালাগালি পর্যন্ত করেন। তিনি বান্ধবীকে কোনও ভাবে সরিয়ে আনতে পারেননি। কিন্তু দু’জনে যে ভাবে ঝগড়া করছিলেন, তাতে ভয় পেয়ে যান তিনি। খারাপ কিছুর আঁচ করে আশপাশের পরিচিত কাউকে ডাকতে গিয়েছিলেন। কয়েক মিনিট এ দিক-ও দিক প্রায় দৌড়ে বেড়িয়েছেন। তার পর যখন ওই স্কুলের সামনে এলেন, তত ক্ষণে দেখেন সাবিনার নিথর এবং রক্তাক্ত দেহ পড়ে রয়েছে মাটিতে। আর উল্টো দিকে জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটে পালাচ্ছেন মিঠু। বান্ধবীর গলায় কাটা দাগ। সেখান দিয়ে ফিনকি দিয়ে রক্ত বয়েই চলেছে। ওই দৃশ্য দেখেই জ্ঞান হারান নাজিয়া।

তদন্তকারীদের একটি সূত্রে খবর, পুলিশ কিছু জিজ্ঞেস করলেই প্রথমে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলছেন নাজিয়া। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে যেটুকু তিনি বর্ণনা দিতে পেরেছেন, সেটা হল, সাবিনার সঙ্গে নতুন এক জনের বন্ধুত্ব হয়েছিল। তাতে জোর আপত্তি ছিল মিঠুর। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে গন্ডগোল শুরু হয়। একটা সময়ে মিঠুর সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখতে চাননি সাবিনা। কিন্তু ফোনে কথাবার্তা হলেই শুরু হয় কথা ঝগড়া ও কথা কাটাকাটি। নাজিয়া পুলিশকে জানান, ফেসবুক-সহ যে সব সমাজমাধ্যমে সাবিনার প্রোফাইল ছিল, বৃহস্পতিবার তার সব ক’টি থেকে মিঠুকে তিনি ব্লক করে দেন। তার পর অন্য একটি নম্বর থেকে সাবিনার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন মিঠু। এ বার আসে হুমকি। নাজিয়ার অভিযোগ, মিঠু তাঁর বান্ধবীকে শাসান, দেখা না করলে তাঁদের ব্যক্তিগত মুহূর্তের সমস্ত ছবি ফাঁস করে দেবেন। তাই বাধ্য হয়ে মিঠুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন সাবিনা। তার পর ওই বীভৎস কাণ্ড! নাজিয়ার দাবি, সাবিনাকে ছুরি দিয়ে মারার পর সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করছিলেন মিঠু। তার পর আর কিছু তাঁর মনে নেই। এর বেশি আর কিছু তাঁর জানা নেই বলেও পুলিশের কাছে দাবি করেছেন ওই প্রত্যক্ষদর্শী।

ইতিমধ্যে মিঠুকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, তরুণীর মানসিক অবস্থা দেখে তাঁর পরিবারের সদস্যদের ডেকে নেওয়া হয় থানায়। তদন্তের প্রয়োজনে ওই তরুণীকে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murshidabad Murder Case Man killed Girl
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE