Advertisement
১৭ মে ২০২৪

মাটি মাফিয়াদের ক্ষত বুকে নিয়ে পড়ে আছে মাঝেরচর

কল্যাণীতে সরকারি জমি থেকে মাটি কাটার ঘটনায় পুলিশ তৎপর হতেই, রাতারাতি উধাও হয়ে গিয়েছে মাটি মাফিয়ারা। মাঝের চর এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে মাটি কাটার জেসিবি যন্ত্রগুলি।

মাটি কেটে এমনই হাল হয়েছে এলাকার।—ফাইল চিত্র।

মাটি কেটে এমনই হাল হয়েছে এলাকার।—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কল্যাণী শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৬ ০২:০৩
Share: Save:

কল্যাণীতে সরকারি জমি থেকে মাটি কাটার ঘটনায় পুলিশ তৎপর হতেই, রাতারাতি উধাও হয়ে গিয়েছে মাটি মাফিয়ারা। মাঝের চর এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে মাটি কাটার জেসিবি যন্ত্রগুলি। দিনভর মাটিকাটার তত্ত্বাবধান করা শাসক দলের পরিচিত মুখগুলোও উধাও। বুকে জেসিবি-র তৈরি ক্ষত নিয়ে শুধু পড়ে রয়েছে ধু ধু মাঝের চর। কল্যাণী থানার পুলিশ জানাচ্ছে, চর এলাকাতেই নয়, খোদ কল্যাণীর বেশ কয়েকটি জায়গাতেও মাটি কাটার জন্য জেসিবি-সহ অন্য যন্ত্র নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু, মাঝের চরে পুলিশ সক্রিয় হয়ে ওঠায় সেগুলিকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। মাটি মাফিয়ারা এখন আর শাসক দলের ছায়ায় তেমন ভরসা পাচ্ছে না। ফলে, তারা পাততাড়ি গুটিয়েছে।

পিকনিক গার্ডেনকে পিছনে রেখে ভাগীরথীর দিকে এগিয়ে যেতেই পড়ে মাঝের চর। সেখানে একরের পর একর সরকারি জমি। কিছুটা তফাতে গঙ্গার পাড় বরাবর একের পর এক বেসরকারি ইটভাটা। আগে এখানে একটি সরকারি ইটভাঁটা ছিল। কিন্তু বছর কয়েক আগে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। বেসরকারি ইটভাটার জন্য ভাটা মালিকদের চড়া দামে মাটি কিনতে হয়। ইট ভাটার মালিকেরা বলছেন, ‘‘মাটি এখন দুষ্প্রাপ্য। ব্যাক্তিগত জমি থেকে মাটি কিনতে হলে লরি পিছু প্রায় সাত-আট হাজার টাকা দাম পড়ে। ব্যবসা বড় মন্দা।’’এই জায়গা থেকেই কল্যাণীতে মাটি মাফিয়াদের রমরমা। তারা ভাটা মালিকদের কম দামে মাটি সরবরাহ করে। ফলে ভাটা মালিকদের ভাল লাভ হয়। আবার মাটি মাফিয়াদেরও এর জন্য কিছু বিনিয়োগ করতে হয় না। ফলে সামান্য খরচ বাদ দিয়ে পুরোটাই তাদের পকেটে ঢোকে। সেই টাকা কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে যায়। মাঝের চর এলাকায় রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের প্রচুর জমি রয়েছে। বাম আমলে এখানে ইন্দোনেশিয়ার সালিম গোষ্ঠীকে দিয়ে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (সেজ) তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু, তৃণমূলের বাধায় সে কাজ থমকে গিয়েছিল। বিরোধীরা সরব, রাজ্যে জমির অভাবে শিল্প হচ্ছে না। অথচ নদীপথ ব্যবহার করে এখানে নানা শিল্প গড়ে তোলার সুযোগ ছিল। কিন্তু সরকার এই জমিগুলি ব্যবহারের কোনও পরিকল্পনাই করেনি বলে জানাচ্ছেন জেলা প্রশাসনের এক কর্তা। সেই সরকারি জমি তাই তৃমূলের মদতে এখন খুবলে কাচ্ছে মাটি-দালালেরা। এত দিন শাসক দলের চাপে পুলিশও গা বাঁচিয়ে নির্বাচনী আচরণ বিধি লাগু হওয়ায় শিরদাঁড়া সোজা হয়েছে পুলিশের। এ বার তাই সরকারি জমি থেকে মাটি পাচারের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ কড়া পদক্ষেপ করেছে। দুটি জায়গা থেকে গ্রেফতার করা হয় আটজনকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Soil mafia police crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE