Advertisement
১৮ মে ২০২৪

ভাঙনের ভয়

কোথাও তাঁকে ঘিরে রেখেছে ‌‌র‌্যাফ কোথাও তিনি দলীয় অনুগামীদের ঘেরাটোপে নিশ্চুপে প্রহর গুনছেন। তিনি, কোথাও লেনিন কোথাও  সুভাষচন্দ্র, শ্যামাপ্রসাদ কিংবা মহাত্মা— দেশ জুড়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মূর্তি ভাঙার অবুঝ অসভ্যতার মুখে ওঁরা। নদিয়া আর মুর্শিদাবাদের রাস্তায় তাঁদের খোঁজ করল আনন্দবাজার।কোথাও তাঁকে ঘিরে রেখেছে ‌‌র‌্যাফ কোথাও তিনি দলীয় অনুগামীদের ঘেরাটোপে নিশ্চুপে প্রহর গুনছেন। তিনি, কোথাও লেনিন কোথাও  সুভাষচন্দ্র, শ্যামাপ্রসাদ কিংবা মহাত্মা— দেশ জুড়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মূর্তি ভাঙার অবুঝ অসভ্যতার মুখে ওঁরা। নদিয়া আর মুর্শিদাবাদের রাস্তায় তাঁদের খোঁজ করল আনন্দবাজার।

কৃষ্ণনগর

কৃষ্ণনগর

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৮ ০৩:২৭
Share: Save:

মূর্তি ভাঙা নরহত্যার সামিল

এই মুহূর্তে দেশ জুড়ে মনীষীদের মূর্তিভাঙার উন্মাদনায় মেতেছে কিছু মানুষ। মূর্তি ভাঙার পিছনে তাঁদের কোন গ্রহণযোগ্য কারণ নেই। মূর্তি ভেঙে তারা কি বার্তা দিতে চায় তাও স্পষ্ট নয়। ‘শুধু অকারন পুলকে’ এই ধ্বংসলীলা চালিয়ে যাচ্ছে। কোনও রকম সংকীর্ণতা দিয়ে মনীষীদের বিচার করা শোভন নয়, মঙ্গলপ্রদও নয়। মনীষীরা দেশের গৌরব, জাতির অহংকার। সভ্য সমাজে শহর, গ্রাম, পথের সৌন্দর্যায়নের অন্যতম উপকরণ মনীষীদের মূর্তি। চলার পথে কোন মনীষীর মূর্তি দেখলে এক ঝলকে মনের ভিতর একটা বোধ ক্রিয়া করে। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু নবদ্বীপ শহরে দু’বার এসেছিলেন। নবদ্বীপের প্রাণকেন্দ্র পোড়ামাতলায় যেখানে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিয়ে ছিলেন সেখানে একটি নেতাজির মূর্তি আছে। মূর্তিটি ইতিহসের স্মারকস্বরূপ। মূর্তিভাঙ্গা তাই ইতিহাস মুছে ফেলার অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে এটা ঠিক ভারতবর্ষে প্রতি মূর্তি ভাঙ্গার নেপথ্যে কোন না কোন রাজনৈতিক দলের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদত থাকে। আমার মনে হয় নরহত্যা ও মূর্তিভাঙ্গা দুটোই সমান অপরাধ হিসাবে গণ্য হওয়া উচিত। ইতিহাস সচেতন মানুষের এখন একটাই প্রার্থনা ‘করুণাঘন, ধরণীতল কর কলঙ্কশূন্য।’ আমরা বলি এরা জানে না এরা কি জঘন্যতম অপরাধ করছে, এদের চৈতন্য হোক।

শান্তিরঞ্জন দেব, সম্পাদক, নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদ

এ কিছু বর্বরের কাজ

আমি তখন সদ্য যুবক। পায়ে হেঁটে সারা জেলা ঘুরে লোকসংস্কৃতির উপদান সংগ্রহের নেশায় মেতে উঠেছি। ঘরে ঘরে সীমাহীন দারিদ্য। ক্ষুধার আর্তনাদ। তা দেখে বুকে বড় ব্যথ্যা। কিন্তু তার মধ্যেই লোকসংস্কৃতির উপদান সংগ্রহের নেশায় প্রায় পাগল আমি। সেই সূত্রে এক দিন কলকাতায় গিয়েছি। শুনলাম বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা হয়েছে। পর দিন সেখানে গেলাম। আজ ৮২ বছর বয়সে জীবনের উপান্তে পৌঁছে মনে পড়ে সেই করুণ কথা! বিপথগামীর দল জানে না, এ ভাবে মূর্তি ভেঙে নারীশিক্ষা, বিধবা বিবাহের প্রসার, বাল্য বিবাহ বন্ধ করা যায় না। কয়েক দশক পর লেনিন ও শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, মধুসূদন দত্তের মূর্তি ভাঙা, কালি মাখানোর দল মানবসভ্যতা থেকে ওই মহামানবদের অবদান মুছতে পারবে না। বেনিয়ানের বুদ্ধ মূর্তি, বাবরি মসজিদ যারা ভেঙেছে তাদের জামার রং যা-ই হোক না কেন, মন তাদের একই। তারা বর্বর। এই বহরমপুর শহরে রয়েছে মহরাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী, কাজি নতরুল ইসলাম, মৌলবী রেজাউল করিম, লালগোলার মহারাজা যোগীন্দ্রনারায়ণ রায়-সহ অনেক মণীষীর মূর্তি। তাঁদের সঙ্গে কারও মত ও
পথের ফারাক হতেই পারে। তাই বলে সৃষ্টির বদলে ভাঙবে?

পুলকেন্দু সিংহ, লোকসংস্কৃতি গবেষক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Statues Vigilance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE