Advertisement
১৯ মে ২০২৪

হাতে কলম পেয়ে সাক্ষরতার শপথ প্রবীণদের

এ দিন সন্ধ্যায় এলাকাতেই একটি ঘরে এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে শুরু হল ক্লাস নেওয়া। তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হল খাতা, কলম, বইও।

প্রথম-পাঠ: মালদহে সাক্ষরতার ক্লাস শুরু হল। নিজস্ব চিত্র

প্রথম-পাঠ: মালদহে সাক্ষরতার ক্লাস শুরু হল। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৮:২০
Share: Save:

কেউ রিকশা চালান, কেউ বা অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। বৃদ্ধ বয়সে এত কষ্ট করলেও তাঁরা কিন্তু ছেলেমেয়েদের বা নাতি-নাতনিদের লেখাপড়া শিখিয়েছেন। কিন্তু সংসারের হাল ধরতে গিয়ে নিজেদের লেখাপড়া তো দূরের কথা সাক্ষর হওয়ারই সুযোগ হয়নি। এমন ৪২ জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে মঙ্গলবার শিক্ষক দিবসে সাক্ষর করার কাজ শুরু হল খোদ ইংরেজবাজার শহরের পশ্চিম হায়দরপুরে।

এ দিন সন্ধ্যায় এলাকাতেই একটি ঘরে এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে শুরু হল ক্লাস নেওয়া। তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হল খাতা, কলম, বইও।

ইংরেজবাজার শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডেরই জনবহুল এলাকা পশ্চিম হায়দরপুর। সেখানে প্রায় ৪০টি পরিবারের বাস। ওয়ার্ড কাউন্সিলার তথা মালদহ জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান আশিস কুণ্ডুই জানিয়েছেন, বাসিন্দাদের মধ্যে ৪২ জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা রয়েছেন যাঁরা এখনও নিরক্ষর। তিনি বলেন, সংসদের দায়িত্ব পাওয়ার পরই এই নিরক্ষর বাসিন্দাদের সাক্ষর করার সংকল্প নিয়েছিলাম। কয়েকদিন আগে এব্যাপারে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে দায়িত্ব নিতে বলি। তাঁরা সাদরে সেই আবেদন রাখে। শিক্ষক দিবসের মতো মহান দিন থেকেই তাঁদের সাক্ষর করার কাজ শুরু করল তাঁরা। ওই বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা সাক্ষর হলেই আমার উদ্যোগের সার্থকতা আসবে।

এদিন সন্ধ্যায় বয়স্ক শিক্ষার সেই ক্লাসে এসেছিলেন বছর ষাটের রবিউল শেখ। এই বয়সেও রিকশ চালানো তাঁর পেশা। তিনি বলেন, ‘‘ছোট থেকেই সংসারের বোঝা মাথার ওপরে পড়েছিল। তাই লেখাপড়া করার সুযোগ হয়নি। বাপ-ঠাকুর্দারাও উদ্যোগ নেয়নি। কিন্তু কষ্ট হলেও আমি আমার ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়েছি। নাতি-নাতনিরাও পড়ছে। এবার আমার সাক্ষর হওয়ার পালা।’’ ক্লাসে ছিলেন সোনা বেওয়া, জামেলা বেওয়া, আসমা বিবিরা। পরিচারিকার কাজ করলেও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখাতে তারা কসুর করেননি। এই বয়সে হাতে খাতা-কলম নিয়ে লজ্জায় তাঁদের মুখ লাল হয়ে উঠেছিল এদিন।

কিন্তু তাঁরা জানালেন, এবার তাঁরা সাক্ষর হবেনই। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত ক্লাস চলবে। এলাকারই শিক্ষিত দুই মহিলা পায়েল বিবি ও সরিকা বিবি তাঁদের পড়াবেন। দাদু-দিদিমারা এই বয়সেও লেখাপড়া শুরু করায় খুশি আব্বাস, নেহাল, রুকসানা, বিউটির মতো নাতি-নাতনিরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

veterans Study মালদহ
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE