নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন চত্বরে কাউকে নামিয়ে ফিরে গেলেও পার্কিং ফি চাওয়া হত বলে অভিযোগ ওঠে। — নিজস্ব চিত্র
বেসরকারি সংস্থার অফিসার অরিন্দম ঘোষ। স্ত্রী বা পরিবারে লোকদের ট্রেনে ওঠানো-নামানো করতে প্রায়ই এনজেপি স্টেশনে যান। কখনও বাইক, কখনও গাড়িতে। কিছুদিন আগেই প্ল্যাটফর্মে ঢোকার মুখে পরিবারের লোকেদের নামিয়ে গাড়ি ঘোরানোর মুখে তাঁর কাছে পার্কিং ফি চাওয়া হয়।
কথা কাটাকাটির পর সে দিন সমস্যা মিটলেও বাড়ি ফিরে বসে থাকেননি অরিন্দম। ট্যুইটারে সোজা কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর কাছে অভিজ্ঞতার কথা অভিযোগ আকারে জানিয়ে বসেন। এর কয়েকদিনের মধ্যেই একই অভিজ্ঞতার মুখে পড়েন অরিন্দম। এ বার স্টেশন চত্বর থেকেই ফের আরেক দফায় ট্যুইট করেন। ট্যুইটে এবার জানান রেলের কাটিহারের ডিআরএমকেও। সেখান থেকে সমস্যা মেটানোর আশ্বাস মেলে।
অবশেষে, অরিন্দমের ট্যুইট-সহ নানা মহলের অভিযোগের পর রেলের তরফে জানানো হয়েছে, এনজেপিতে ড্রপের জন্য কোনও পার্কিং চার্জ লাগবে না। আবার গাড়ি ভিতরে ঢুকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে চলে গেলেও লাগবে না ফি। আর শুধু পার্কিং নয়, স্টেশনের বাইরের চত্বরে বিভিন্ন ধরনের দালালদের সক্রিয়তা বন্ধ করতে রেল পুলিশের সঙ্গেই আরপিএফকে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালাতে বলা হয়েছে। তবে গাড়ি চালক, রিকশা, অটো চালকেরা জানাচ্ছেন, গাড়ি পার্কিং জোনে রাখা নয়, স্টেশন চত্বরে ঢুকলেই ফি নেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। তেমনই, গাড়িতে যাত্রী তুলে দিয়ে কমিশনও চাওয়া হয়।
শহরের বাসিন্দা, ব্যবসায়ী ও পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, পুজোর মরসুমে নিয়মিত ট্রেনগুলির পাশাপাশি ১৪টি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করছে। শীতের আমেজে শুরু হয়ে গিয়েছে পর্যটন মরসুমও। সেখানে পার্কিং, দালালদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে যাত্রীদের হেনস্থা বাড়বে। পার্কিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কর্মীদের অবশ্য দাবি, অনেকেই এদিক-ওদিParক গাড়ি রেখে পার্কিং হয়নি বলে দাবি করেন। তাই নিয়ে অনেক সময় গোলমাল হয়। পুজোর মরসুমে অবশ্য পযর্টকদের সুবিধার জন্য মহালয়া থেকে এক মাস আলাদা হেল্প ডেস্ক চালু করছিল পর্যটন দফতর। তাতে অভিযোগও কিছু এসেছে।
রেলের অফিসারেরা জানিয়েছেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রেলের তরফে কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে। স্টেশন চত্বরটি আমূল বদলে ফেলার নকশাও তৈরি হয়ে গিয়েছে। প্রায় ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প কয়েকটি ধাপে তা কার্যকরী করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অনুমোদনের জন্য তা রেল মন্ত্রকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের এনজেপি’র সিনিয়র এরিয়া ম্যানেজার পার্থসারথী শীল বলেন, ‘‘স্টেশন চত্বরটিকে পুরোপুরি বদলে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। যাত্রীবাস থেকে পার্কিং লট, গাড়ির লেন সব ধাপে ধাপে হবে। তবে প্রথমেই পার্কিং সমস্যা মেটানো হচ্ছে।’’
রেল সূত্রের খবর, এনজেপি স্টেশনের বাইরের শেডের সামনে চারটি নতুন লেন তৈরি করা হচ্ছে। সেগুলি দিয়ে এন্ট্রি পয়েন্ট দিয়ে গাড়ি ঢুকে যাত্রীদের নামিয়ে বার হয়ে যাবে। যে গাড়িগুলি পার্কিংয়ে যাবে, তার জন্য আলাদা লেন থাকবে। সেখানেই বাস, বড় গাড়ি থেকে ৫০ টাকা, গাড়ি ২০ টাকা, বাইক ১০ টাকা থেকে অটো ৫টা এবং রিকশা ২ টাকা পার্কিং ফি দেবেন। অনেকটা বিমানবন্দরের ধাঁচে আরপিএফ এবং রেল পুলিশ লেনগুলিতে মোতায়েন থাকবে। এর পরের ধাপ হিসাবে, স্টেশন চত্বরের সঙ্গে জুড়ে সামনের দেওয়াল ঘেরা ফাঁকা মাঠটিতে যাত্রীবাস, মার্কেট কমপ্লেক্স-সহ যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের পরিকাঠামো থাকবে।
যাত্রীদের অভিযোগ, সম্প্রতি স্টেশন চত্বরে অনেক সময়ই এনবিএসটিসি-র বাস ঢুকতে না দেওয়া হচ্ছে না। এতে ভোগান্তি হচ্ছে। রেলের দাবি, যানজট কমাতে বাস দূরে দাঁড় করানোর নির্দেশ রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy