Advertisement
০৪ মে ২০২৪

পর্যুদস্ত কংগ্রেসে নেতৃত্ব বদলের দাবি

বোর্ড গঠন তো দূরের কথা, শিলিগুড়ি পুরসভায় নির্ণায়ক ভূমিকা নেওয়ার আশা পূরণের কাছেপিঠে পৌঁছতে পারল না দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস। মঙ্গলবার ভোটের ফল প্রকাশের পরে দেখা গেল কংগ্রেস প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছে সিংহভাগ ওয়ার্ডে। সাকুল্যে ৪টি ওয়ার্ডে কংগ্রেসের প্রার্থীরা জিতেছেন। বাকি ৪২টি ওয়ার্ডেই পর্যুদস্ত কংগ্রেস। যা কি না একযোগে দুটি প্রশ্ন তুলে দিয়েছে শহরে।

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৩৯
Share: Save:

বোর্ড গঠন তো দূরের কথা, শিলিগুড়ি পুরসভায় নির্ণায়ক ভূমিকা নেওয়ার আশা পূরণের কাছেপিঠে পৌঁছতে পারল না দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস। মঙ্গলবার ভোটের ফল প্রকাশের পরে দেখা গেল কংগ্রেস প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছে সিংহভাগ ওয়ার্ডে। সাকুল্যে ৪টি ওয়ার্ডে কংগ্রেসের প্রার্থীরা জিতেছেন। বাকি ৪২টি ওয়ার্ডেই পর্যুদস্ত কংগ্রেস। যা কি না একযোগে দুটি প্রশ্ন তুলে দিয়েছে শহরে।

প্রথমত, গত ৪ বছরের বেশি সময় কংগ্রেসের নেত্রী তথা গঙ্গোত্রী দত্ত মেয়র থাকলেও নানা ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থ হয়েছেন বলেই কী তার মাসুল দিতে হল কংগ্রেসকে? দ্বিতীয়ত, দলের জেলা নেতৃত্ব সংগঠন জোরাল করা তো দূরের কথা, শহরে তা ধরে রাখতেই কী ব্যর্থ? তাই জেলা নেত়ৃত্বে বদলের দাবিও তুলেছেন দলের একাংশ। শুধু তা-ই নয়, যে নেতারা প্রতিনিয়ত এলাকার বাসিন্দাদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকেন, তাঁরাই জিতেছেন বলেও কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের একাংশের দাবি। দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস সভাপতি (সমতল) শঙ্কর মালাকার নিজেও মানছেন, ফল একেবারেই আশানুরুপ হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘আমরা বোর্ড গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেব ভেবে ঝাঁপিয়েছিলাম। কিন্তু, পারিনি। কেন এমন ফল হল তা নিয়ে অবশ্যই খোলা মনে ভাবব। আলোচনা করব। ভুল-ত্রুটি থাকলে শুধরে এগোতে হবে।’’

কংগ্রেসের অন্দরের খবর, গত পুরবোর্ডে নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা কাউন্সিলরদের মধ্যে মাত্র ২ জন জিতেছেন। একজন হলেন ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সুজয় ঘটক, অন্যজন ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সীমা সাহা। সুজয়বাবুর আমলেই সিলিগুড়িতে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বর্জনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত শিলিগুড়ি প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ মুক্ত শহর হিসেবে স্বীকৃতিও পায়। পরে সুজয়বাবুর হাত থেকে ওই দফতর গেলে ফের শহরে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ জাঁকিয়ে বসেছে। তা নিয়ে নানা সময়ে তৃণমূলের নেতা তথা জনপ্রতিনিধিদের একাংশ আশ্বাস দিলেও প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ শহরে চোরাগোপ্তা চলছে। যা নিয়ে শহরের পরিবেশপ্রেমীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। হাকিমপাড়া এলাকায় সুজয়বাবু নিজে তদারকি করে এখনও বিস্তীর্ণ জায়গায় প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করিয়ে রেখেছেন। তা ছাড়াও তাঁর আমলে এলাকায় নানা উন্নয়ন হয়েছে। বাসিনম্দাদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগের ফলই তিনি ঘরে তুলেছেন বলে মনে করছেন কংগ্রেসের অনেকেই।

বস্তুত, ২০০৯ সালে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে প্রায় তিন দশক পর বামেদের হঠিয়ে শিলিগুড়ি পুরসভা দখল করেছিল কংগ্রেস। ১৫টি আসন পেয়েছিল কংগ্রেস। ১৫ থেকে সোজা এবার ৪। এবার সুজয়বাবু ও সীমা দেবী ছাড়া য়াঁরা জিতেছেন, তাঁরা হলেন শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে পিন্টু ঘোষ ও ২১ নম্বরে স্বপ্না দত্ত।

দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের সভাপতি তথা বিধায়ক শঙ্কর মালাকার বলেন, ‘‘আমরা আরেকটু ভাল ফল আশা করেছিলাম। তা হল না। কিন্তু কংগ্রেস যে শিলিগুড়িতে জোরালভাবে আছি তা ভোটের ফল বিশ্লেষণ করলেই তা দেখা যাচ্ছে। আর পুরসভায় আমাদের কাউন্সিলরেরা গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবেন।’’

এদিন সাত সকাল থেকে সিপিএমের ক্যাম্পের পাশেই থাকা কংগ্রেস অফিসেও উত্তেজনা কম ছিল না। অনেক সময়ই ফলাফলে বামফ্রন্ট, তৃণমূলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে তাঁরাই বোর্ড গঠনে নির্নয়ক ভূমিকা নেবেন বলে অনেকেই মনে করছিলেন। বিশেষ করে, একসময় চাউর হয়, বামফ্রন্টকে কংগ্রেসের সাহায্য নিয়েই হয়ত বোর্ড গড়তে হবে। যদিও দুপুরের মধ্যেই তা যে লাগছে না সেটা পরিস্কার হয়ে যায়। জেতা প্রার্থীরা নিজেদের মত এসে ক্যাম্প অফিস ঘুরে এলাকায় ফিরে বিজয় মিছিলও করেন।

জেলার কয়েকজন কংগ্রেস নেতা জানান, আমাদের চারজন প্রার্থী দলের থেকে বেশি নিজেদের পরিশ্রম আর এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের ভিত্তিতেই জিতেছেন। একজন তো প্রচারে নিজের ছাড়া দলের নেতানেত্রীদের ছবিও ব্যবহার করেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE