Advertisement
২১ মে ২০২৪
Ananta Maharaj

Mamata meets Maharaj: চিলা রায়ের জন্মদিবসে এক মঞ্চে মমতা, মহারাজ, কোন পথে উত্তরবঙ্গের রাজনীতি?

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, কোচবিহার ২ নম্বর ব্লকের বাবুরহাট ও ঝিনাইডাঙার মাঝে বসবে ১৫ ফুট উঁচু চিলা রায়ের মূর্তি। তাঁর নামে একটি কমিউনিটি হলও হবে। নিউ বাণেশ্বর রেলস্টেশন থেকে সিদ্ধেশ্বরী গ্রাম পর্যন্ত নবনির্মিত রাস্তার নাম হবে মহাবীর চিলা রায় রোড।

পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, অনন্ত মহারাজ ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, অনন্ত মহারাজ ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৪:১০
Share: Save:

উপলক্ষ, চিলা রায়ের ৫১২ তম জন্মদিবস পালনের অঙ্গ হিসেবে কোচবিহারের সিদ্ধেশ্বরী গ্রামে তাঁর মূর্তি উন্মোচন অনুষ্ঠান। আর সেই অনুষ্ঠানেই কি উত্তরবঙ্গের রাজনীতি নতুন পথে বাঁক নিল? এক মঞ্চে এলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ‘গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন (জিসিপিএ)’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা-নেতা অনন্ত রায়। যিনি এলাকায় মহারাজ নামে পরিচিত।

কোচবিহার শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে সিদ্ধেশ্বরী গ্রাম। এখানেই বিশ্ব মহাবীর চিলা রায়ের জন্মদিবস পালনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মহারাজ। আমন্ত্রণ গ্রহণ করে বুধবার সেখানে পৌঁছন মমতা। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উত্তরবঙ্গ সফর কাটছাঁট করে বুধবারই ফিরছেন তিনি। তাই অনুষ্ঠানসূচিতে বেশ কিছু পরিবর্তনও করা হয়। নির্ধারিত সময় দুপুর ১টার বেশ কিছুক্ষণ আগেই মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছে যান সিদ্ধেশ্বরী গ্রামে। সেখানে গুয়াপান ও গামছা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বরণ করেন মহারাজ। হলুদ উত্তরীয় পরিয়ে মহারাজের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন মমতা।

বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী চিলা রায়ের তুলনা করেন শিবাজির সঙ্গে। বলেন, ‘‘চিলা রায়ের কৃতিত্ব, বীরত্বের কাহিনি গোটা দেশ জানুক।’’ পাঠ্যসূচিতে চিলা রায়ের বীরগাথা কী ভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, তা নিয়ে শিক্ষা দফতরকে ভাবার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজবংশী সম্প্রদায়, ভাষা-সহ চিলা রায় ও ঠাকুর পঞ্চানন বর্মার কীর্তিকে অক্ষয় করতে তাঁর সরকার কী কী করেছে এবং কী তাঁর আগামী পরিকল্পনা, তা জানান মুখ্যমন্ত্রী। মমতা ঘোষণা করেন, কোচবিহার ২ নম্বর ব্লকের বাবুরহাট ও ঝিনাইডাঙার মাঝে বসবে ১৫ ফুট উঁচু চিলা রায়ের মূর্তি। নিউ বাণেশ্বর রেল স্টেশন থেকে সিদ্ধেশ্বরী গ্রাম পর্যন্ত রাস্তার নাম হবে মহাবীর চিলা রায় রোড। কোচবিহার দু’নম্বর ব্লকে ৭৫ লক্ষ টাকা খরচ করে চিলা রায়ের নামে একটি কমিউনিটি হল হবে বলেও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, ‘‘আপনাদের শুধু একটা কথাই বলতে চাই, ভরসা রাখবেন, আস্থা রাখবেন, ভুল বুঝবেন না। আপনাদের ভরসা আর বিশ্বাস পেলে, উত্তরবঙ্গকে উন্নত থেকে উন্নততর করে গড়ে তুলব।’’

এ দিন মুখ্যমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে আসার পথে খেয়াল করেন, রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে সাদা পোশাক পরিহিত যুবকেরা। তিনি জানতে পারেন, তারা সবাই মহারাজের অনুগামী, মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে। অনুষ্ঠানের মধ্যেই তিনি মহারাজকে প্রস্তাব দেন, সাদা পোশাক পরিহিত ছেলেদের তিনি নারায়ণী সেনা ব্যাটালিয়নে অন্তর্ভুক্ত করতে চান। এ জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী বিশেষ পদ তৈরি করতেও রাজি। মুখ্যমন্ত্রী অনন্তকে বলেন, ‘‘আপনি ভেবে আমাকে জানান। ওরা সরকারের হয়ে মানুষের কাজ করবে।’’

উত্তরবঙ্গের রাজনীতির সঙ্গে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, এই দৃশ্যপটের ভিন্ন তাৎপর্য। বিগত ভোটে মহারাজপন্থী জিসিপিএ-এর ঢালাও সমর্থন পেয়েছে বিজেপি। ভোটের আগে অসমে মহারাজের গোপন ডেরায় গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তার পর বিধানসভা ভোটের পর তিস্তা-তোর্সা দিয়ে বহু জল বয়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক মহলের একটি অংশের দাবি, বিধানসভা ভোটের পর থেকেই মমতা সরকারের সঙ্গে মহারাজের সম্পর্ক মেরামতিতে লাগাতার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। গেরুয়া সঙ্গ ত্যাগ করে ইদানীং তৃণমূল ঘনিষ্ঠ মহারাজ।

দীর্ঘদিনের চেষ্টায় মেরামত হওয়া সেই সুসম্পর্কের প্রথম প্রকাশ্য আত্মপ্রকাশ হল সিদ্ধেশ্বরী গ্রামে বিশ্ব মহাবীর চিলা রায়ের মূর্তি উন্মোচন অনুষ্ঠানে। যেখানে এক মঞ্চে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রী ও মহারাজকে। এ দিনের অনুষ্ঠানে দেখা মেলেনি স্থানীয় সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের। যদিও তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বলে দাবি অনন্ত শিবিরের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE