জলপাইগুড়িতে কলকাতা হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ।
স্মৃতি আনন্দের। স্মৃতি কখনও আবার বেদনারও। অনেক না বলা কথা মনে করিয়ে দেয় স্মৃতি।
১৯৮৭ সালের শেষ দিক তখন। জলপাইগুড়ি সার্কিট হাউসে উত্তরবঙ্গের সব বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিকে সভা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, এখানকার মানুষের জন্য উত্তরবঙ্গেই কলকাতা হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের দাবি জানানো হবে। পরে জলপাইগুড়িতে সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের দাবি পেশ করা হয়। তখন শিলিগুড়ির বাসিন্দারাও নিজের শহরে সেই বেঞ্চ স্থাপনের জন্য সরব হন। এর পরিপ্রেক্ষিতে জলপাইগুড়ির সর্বস্তরে যেমন আন্দোলন শুরু হয়, শিলিগুড়িতেও পাল্টা দাবির আওয়াজ ওঠে।
এই আন্দোলন দীর্ঘদিন চলার পরে আমরা সকলে একজোট হয়ে জলপাইগুড়ির পক্ষেই সিদ্ধান্ত নিই। সেই দলে ছিল ফোসিন, তার বিভিন্ন জেলাভিত্তিক সদস্য সংগঠন, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ী সংগঠনগুলি এবং আরও অনেকে। সেই সিদ্ধান্ত উত্তরবঙ্গের সার্কিট বেঞ্চ দাবি আদায় সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক কমলকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এর পরেও বিভিন্নভাবে আন্দোলন চলতে থাকে জলপাইগুড়িতে। সেখানে আমরা ফোসিনের পক্ষ থেকে সময় সময় উপস্থিত থাকতাম। একবার জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে অবস্থান আন্দোলন হয়। আন্দোলনে আমরাও সামিল হই। ওই আন্দোলনে জেলাশাসক, জলপাইগুড়ি থানার আইসি, রাজনৈতিক নেতারাও ছিলেন। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সকলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আদালত আবমাননার মামলা দায়ের হয়। আমরা হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করি। আদালতের সামনে আমরা স্বীকারোক্তি দিয়েছিলাম। সেই সময়, কী দিন গিয়েছে! রোজ নানা জায়গায় যোগাযোগ, আলোচনা, বৈঠক। মামলা চলতে থাকে। পরে সাজা ঘোষণা হয়। আমাকে এবং সমাজসেবী পবিত্র ভট্টাচার্যকে রেহাই দেওয়া হয়। পরে সুপ্রিম কোর্টে মামলা যায়। সেখানেও অব্যাহতি মেলে। যদিও আন্দোলন থেমে থাকেনি।
পরে সরকারি ভাবেই জলপাইগুড়িতে সার্কিট বেঞ্চ চালুর সিদ্ধান্ত হয়। জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের ডাক বাংলোয় অস্থায়ী পরিকাঠামো তৈরি হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন সেখানেও সার্কিট বেঞ্চের কাজ শুরু হয়নি। এ বারে সেই বেঞ্চ চালু হতে চলেছে। ৯ মার্চ সার্কিট বেঞ্চের উদ্বোধন হবে।
এতে উত্তরবঙ্গের মানুষকে বিচারের জন্য আর কলকাতায় যেতে হবে না। সার্থক হতে চলেছে আন্দোলন। সময়, অর্থ, পরিশ্রম— সব দিক থেকেই উত্তরবঙ্গবাসী উপকৃত হবেন। তবে মালদহ, দুই দিনাজপুরের মতো জেলাগুলোর মানুষকে বিচারের জন্য কি এখনও সময় ও অর্থ খরচ করে সেই কলকাতায় যেতে হবে? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এর সমাধান আর্জি রইল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy