Advertisement
১৯ মে ২০২৪

টাকা না নিয়েই ফিরলেন বৃদ্ধ

টাকা নেই, টাকা নেই। বুধবার মাসের শেষ দিনে সরকারি এবং বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক পোস্ট অফিসে এমনই রব শোনা গেল। তা নিয়ে চলল ক্ষোভ-বিক্ষোভ, অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ পর্ব।

ময়নাগুড়িতে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক থেকে বুধবার টাকা না পেয়ে খালি হাতে বেরিয়ে আসছেন এক বৃদ্ধ। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।

ময়নাগুড়িতে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক থেকে বুধবার টাকা না পেয়ে খালি হাতে বেরিয়ে আসছেন এক বৃদ্ধ। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:০৭
Share: Save:

টাকা নেই, টাকা নেই। বুধবার মাসের শেষ দিনে সরকারি এবং বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক পোস্ট অফিসে এমনই রব শোনা গেল। তা নিয়ে চলল ক্ষোভ-বিক্ষোভ, অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ পর্ব। কোথাও তিতিবিরক্ত গ্রাহকরা চেঁচামেচি জুড়ে দেওয়ায় ব্যাঙ্ককর্মীরা গেট আটকে পুলিশে খবর দিয়েছেন, কোথাও আবার মাত্র দু’হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করে পেনশন না নিয়েই ফিরে গিয়েছেন অসুস্থ বৃদ্ধ। দুর্ভোগের ছবি অব্যাহত উত্তরের ব্যাঙ্ক এবং এটিএম কিয়স্কের সামনে। সব থেকে চিন্তার, বৃহস্পতিবার মাস পয়লার পরে কী হবে?

প্রতীকী প্রতিবাদ

এ দিনও কোচবিহারের বেশিরভাগ এটিএমে টাকা মেলেনি বলে অভিযোগ। গ্রাহকদের অভিযোগ, যে দু’একটি এটিএম খোলা ছিল, সেখানেও দীর্ঘ লাইনে ভোগান্তি পোহাতে হয়। সেখানেও অবশ্য দুই হাজারের বেশি তোলা যায়নি। বিভিন্ন ব্যাঙ্কেও চাহিদা মতো টাকা মিলছে না। কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে চেকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। গ্রামীণ এলাকার আঞ্চলিক ব্যাঙ্কের শাখাগুলিতে অবশ্য পাঁচশ থেকে দুই হাজার পান অনেকে। অন্য দিকে মাথাভাঙায় দুই হাজার নোট খুচরো করা নিয়ে ভোগান্তির অভিযোগে বুধবার একটি পেট্রোল পাম্পের সামনে অবস্থানে বসেন স্থানীয় বাসিন্দা কাজল রায়। ডিওয়াইএফআই নেতা কাজলবাবুর অভিযোগ, ‘‘দুই দিন আগে ব্যাঙ্ক থেকে বহু কষ্টে দুই হাজার টাকা তুলতে পেরেছি। দুই হাজারের নোট ভাঙাতে আমার নাভিশ্বাস উঠছে। পেট্রোল পাম্প থেকে মুদি দোকান কোথাও বড় নোট নিতে চাইছিল না। বাধ্য হয়ে অবস্থানে বসে প্রতীকী প্রতিবাদ জানাই।’’

চিৎকার চেঁচামেচি

সকাল থেকে লম্বা লাইন ছিল ইসলামপুরের ব্যাঙ্কগুলিতেও। গ্রাহকদের দাবি, সারা দিন ব্যাঙ্কে দাড়িয়েও ব্যাঙ্কে কোথাও মিলেছে প্রায় ৩০০০, কোথাও ৪০০০ আবার কোথাও বা ১০ হাজার টাকা। গ্রাহকেরা জানিয়েছেন, ইসলামপুর স্টেট ব্যাঙ্কে সকাল থেকে লাইনে দাড়িয়েও ১০ হাজার টাকার বেশি তুলতে পারেননি কেউ। এ দিন স্টেট ব্যাঙ্কে লাইনে দাড়ানোর পর বিকেল তিনটের মধ্যে ব্যাঙ্কের গেট বন্ধ করে দেওয়ায় গেটের বাইরে লাইনে থাকায় ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দেন। পরে পুলিশ গিয়ে গ্রাহকদের শান্ত করে। গেট খুলে কিছু গ্রাহকদের ভিতরে ঢোকার ব্যবস্থা করে দেয়। রাজ্য সরকারি কর্মীদের সংগঠন কোঅর্ডিনেশন কমিটির ইসলামপুরের মহকুমা সম্পাদক রথীন দাসের কথায়, ‘‘ব্যাঙ্কে এসে দেখলাম মানুষকে কী হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। অপরিকল্পিত কাজ
করেছে কেন্দ্র।’’

কতবার লাইন, প্রশ্ন

কেউ পাঁচশো, কেউ দুই হাজার, তো কেউ আবার পেলেন চার হাজার৷ বেতন কিংবা পেনশনের টাকা তুলতে ব্যাঙ্কে গিয়ে এতটুকু অর্থই জুটল জলপাইগুড়ির অনেক শিক্ষক, সরকারী কর্মী বা অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের কপালে৷ বেতনের টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকতে শুরু করায় এ দিন থেকেই জলপাইগুড়ির বিভিন্ন ব্যঙ্কে যেতে শুরু করেছেন স্কুল শিক্ষক ও সরকারি কর্মীরা৷ পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের অনেক কর্মী এ দিন পেনশনের টাকা তুলতে যান৷ কিন্তু স্টেট ব্যাঙ্কের জলপাইগুড়ি মেইন শাখায় বেতন বা পেনশন থেকে সর্বোচ্চ চার হাজার টাকাই তুলতে পারেন তাঁরা৷ অনেকের ভাগ্যে আবার সেটাও জোটেনি৷ ময়নাগুড়ি হাই স্কুলের শিক্ষক শুভঙ্কর চক্রবর্তী এ দিন দুপুরে স্টেট ব্যাঙ্কের জলপাইগুড়ি মেইন শাখায় যান৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমার অ্যাকাউন্ট এই ব্যাঙ্কের হলেও, এই শাখার নয়৷ সে জন্য বেতনের মাত্র দুই হাজার টাকা এদিন তুলতে পেরেছি৷’’ কাঁদোপাড়া থেকে অবসরপ্রাপ্ত বিএসএফ কর্মী দিলীপ কুমার বর্মন এদিন পেনশনের টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তুলতে জলপাইগুড়ি এসেছিলেন৷ কিন্তু মাত্র চার হাজার টাকাই তুলতে পারেন তিনি৷’’ তাঁদের প্রশ্ন, কতবার এই বিরাট লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে টাকা তুলতে হবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

demonetisation elderly man
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE