জমি বিক্রির তালিকা। — নিজস্ব চিত্র
প্রকাশ্যে চা বাগানের জমি দখল এবং প্লট করে বিক্রি করার আগে, ‘তুষ্ট’ করতে হয়েছে প্রভাবশালীদের অনেককে। পানিট্যাঙ্কিতে এশিয়ান হাইওয়ে তৈরিতে উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীদের পুর্নবাসনের নাম করে ডান-বাম বিভিন্ন দলের বড়-ছোট নেতা-কর্মীদেরও ‘দখলে’র জমি পাইয়ে দেওয়া অথবা কম দরে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
কাগজে রীতিমতো ‘ব্লু প্রিন্ট’ করে পানিট্যাঙ্কির চা বাগানের জমি বিক্রি হয়েছে। সেই ব্লু প্রিন্টেরই একটি প্রতিলিপি প্রশাসনের কাছে পৌঁছেছে। তাতে থাকা অনেকের নামের প্রথম অংশ এবং অদ্যাক্ষরের সঙ্গে নকশালবাড়ি-পানিট্যাঙ্কির অনেক ডান-বাম নেতার নাম রয়েছে। যদিও, সেই সব নেতাদের সকলেই দাবি করেছেন, বিষয়টি নেহাতই সমাপতন। তাঁরা কোনও জমি পাননি।
নেপাল সীমান্তবর্তী পানিট্যাঙ্কির সতীশচন্দ্র চা বাগানের ৫ একরেরও বেশি জমি বেড়া দিয়ে ঘিরে কংক্রিটের খুঁটি পুঁতে প্লট করে বিক্রি হয়েছে বলে অভিযোগ। সরকারি লিজে থাকা চা বাগানের জমিতে খুঁটি পোঁতার আগেই কতগুলি প্লট হবে, তার আয়তন কী হবে সব তথ্য দিয়ে নকশা তৈরি হয়েছে।
কেউ জমি কিনতে অগ্রিম দিয়েছেন, কেউ বা পুরো টাকা মিটিয়ে দিয়েছেন, তবে তার জন্য কাউকেই কোনও কাগজ দেওয়া হয়নি বলে জানা গিয়েছে। ‘দাদা’দের কাছে থাকা মূল নকশায় শুধু জমি ক্রেতাদের নাম লিখে রাখা হয়েছে। সেই সব নাম নিয়েই জল্পনা চলছে নকশালবাড়ি-পানিট্যাঙ্কিতে।
মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি কেন্দ্র থেকে এবারে বিধানসভায় তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছিলেন ডাকাবুকো নেতা অমর সিংহ। ‘এ’ সারির একটি প্লটে নাম লেখা রয়েছে ‘এ সিনহা’। শসাক দলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে তবে কী অমরবাবুও দখলের জমির প্লট পেয়েছেন? অমরবাবু বর্তমানে স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য বেঙ্গালুরুতে রয়েছেন। তিনি ফোনে দাবি করলেন, ‘‘পানিট্যাঙ্কির জমির বিষয়টি শুনেছি। তার পরে এখানে চলে এসেছি। ওখানে আমি কোনও জমি কিনিনি। এ সব ভিত্তিহীন কথা। আমার নামে অপপ্রচার করার জন্য বলা হয়ে থাকতে পারে।’’ সি প্লটের তিন নম্বর জমির প্লটে নাম রয়েছে ‘দুলাল’। সিপিএমের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য দুলাল রায় গত বছর তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই শাসক দলে তার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে বলে দাবি। দুলালবাবু অবশ্য খোলাখুলি জমি কেনার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘ওই প্লটটি আমারই। আমার পারিবারিক ব্যবসা রয়েছে। জমি বিক্রি হচ্ছে শুনে কিনেছি। এর মধ্যে প্রভাব খাটানোর কোনও বিষয় নেই।’’
জমি কেনা-বেচার দাবি প্রকাশ্যে চলে এলেও, এখনও পুর্নবাসনের তত্বেই আটকে রয়েছেন এলাকার অনান্য নেতারা। থড়িবাড়ির সিপিএমের জোনাল কমিটির নেতা রামকুমার ছেত্রী এ দিনও দাবি করেছেন, ‘‘কে কী বলেছেন জানি না। জমি বিক্রি হয়েছে এটা ভুল কথা।’’ তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত সদস্য হান্দ্রু ওঁরাও আগাগোড়াই দাবি করছেন, ‘‘পুর্নবাসনের জন্য উচ্ছেদ্দ হওয়া ব্যবসায়ীরাই জমি বিলি করেছেন।’’
প্রশাসনের হাতে আসা প্লচটের নকশায় দেখা গিয়েছে, এ-বি-সি-ডি করে ইংরেজি বর্ণমালার অক্ষর দিয়ে প্লট ভাগ হয়েছে। কোনটি কত মাপের তাও চিহ্নিত করা রয়েছে। নেপাল রোডের থেকে সামান্তরাল ভাবে দু’টি ১৪ ফুটের রাস্তা তৈরি হয়েছে, রাস্তার দু’পাশে প্লট করে জমি বিক্রি হয়েছে। এ দিনই জেলা প্রশাসনের তরফে পানিট্যাঙ্কির দখল হওয়া চা বাগানের জমি পরিদর্শন হয়েছে। ভূমি ও ভূমি রাজ্য দফতরের আধিকারিকরা জমি মাপতে গেলে ব্যবসায়ীদের একাংশ পুর্নবাসনের দাবি করে স্মারকলিপি দিতে চান। এ দিন দার্জিলিঙের অতিরিক্ত জেলা শাসক (ভূমি) সঞ্জীব বিশ্বাসও ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তিনি অবশ্য ব্যবাসীদের কথা শুনতে চাননি। ব্যবসায়ীদের কাছে তিনি জানতে চান, দীর্ঘদিন ধরে ওখানে জমিতে খুঁটি পোঁতা চলছে। এতদিন পরে কেন প্রশাসনের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে? অতিরিক্ত জেলাশাসক বলেন, ‘‘মাপজোক চলছে। বেশির ভাগটাই চা বাগানের জমি বলে মনে হচ্ছে। তবে পুরোটা খতিয়ে না দেখে বলা যাবে না।’’
বিক্রির কথা না মানতে না চাইলেও, প্রকাশ্যে জমি দখলকে স্বাগত জানাচ্ছে শসাক-বিরোধী দু’দলের স্থানীয় নেতারাই। তার পরেও ডান-বাম দলের জেলা নেতৃত্ব কেন চুপ তা নিয়েও জল্পনা চলছে পানিট্যাঙ্কিতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy