Advertisement
০১ মে ২০২৪
Road blockade

হিমঘর নিয়ে ফের রাজ্য সড়ক অবরোধ, উত্তেজনা

শনিবার সকাল থেকে কৃষকেরা ভিড় করেছিলেন বন্ডের কুপন নিতে। হিমঘর কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, নতুন করে কুপন বিলি হবে না। তার পরেই শুরু হয় বিক্ষোভ।

আলুর বন্ডের জন্য দীর্ঘ লাইনে পুলিশি নজরদারি। শনিবার জলপাইগুড়ির একটি হিমঘরে। ছবি: সন্দীপ পাল

আলুর বন্ডের জন্য দীর্ঘ লাইনে পুলিশি নজরদারি। শনিবার জলপাইগুড়ির একটি হিমঘরে। ছবি: সন্দীপ পাল

বিল্টু সূত্রধর 
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৩ ০৮:০০
Share: Save:

হিমঘরে আলু রাখার বন্ড না পাওয়ার অভিযোগে শনিবার ফের রাজ্য সড়ক অবরোধ করলেন আলু চাষিরা। অবরোধকে কেন্দ্র করে এলাকায় কয়েক দফায় উত্তেজনা ছড়ায়। শুক্রবার বন্ডের দাবিতে একাধিক হিমঘরের সামনে অগ্নিসংযোগ থেকে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়েছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠি চালায়, কাঁদানে গ্যাসের শেলও ফাটায়। শনিবার অবশ্য পরিস্থিতি সে দিকে গড়ায়নি। তবে অবরোধের জেরে জলপাইগুড়ি-চাঙলহাটি রাস্তায় যানজট তৈরি হয়। অবরোধকারীদের অভিযোগ, শুক্রবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত বন্ডের কুপন দেওয়ার কথা থাকলেও, দুপুরের পরে, আর তা দেওয়া হয়নি।

শনিবার সকাল থেকে কৃষকেরা ভিড় করেছিলেন বন্ডের কুপন নিতে। হিমঘর কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, নতুন করে কুপন বিলি হবে না। তার পরেই শুরু হয় বিক্ষোভ। কৃষকদের অভিযোগ, কুপন নিয়ে কালোবাজারি চলছে। যদিও রাজ্য হিমঘর মালিক-পরিচালক সংগঠনের সভাপতি কিশোরকুমার মারোদিয়া বলেন, ‘‘কালোবাজারির প্রশ্নই ওঠে না। বন্ডের কুপন দেওয়া হয়ে গিয়েছে। এখন বন্ড দেওয়া হচ্ছে।’’

হিমঘরের বন্ড পাওয়া নিয়ে সমস্যা তৈরি হওয়ায় মাথায় হাত সাধারণ আলু চাষিদের। জলপাইগুড়িতে গড়ে এক বিঘা জমিতে পাঁচ হাজার কেজি আলু উৎপাদিত হয়। পঞ্চাশ কেজির বস্তা ধরলে ১০০ বস্তা আলু আসে এক বিঘা জমি থেকে। এক বিঘা জমি চাষে খরচ পড়ে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। হিমঘরের নিয়ম অনুযায়ী, এক জন কৃষক আধার কার্ড দেখিয়ে জেলার যে কোনও হিমঘরে একশো বস্তা আলু রাখতে পারেন। কৃষকদের অভিযোগ, কোনও ছোট কৃষক, যিনি এক বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন, তিনিও হিমঘরে আলু রাখার জায়গা পাচ্ছেন না।

জলপাইগুড়ি জেলায় মোট ২০টি হিমঘর রয়েছে। সেগুলিতে প্রায় সাড়ে ৩৯ কোটি কেজি আলু রাখা যেতে পারে। অথচ, জেলায় এ বছর ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর উৎপাদন ৬০০ কোটি কেজিরও বেশি। উদ্বৃত্ত আলুর কী হবে, তার কোনও দিশা এখনও দেখাতে পারেনি প্রশাসন। সব আলু চাষি কিছুটা অংশে হলেও হিমঘরের জায়গা পাবেন, তা-ও সুনিশ্চিত হয়নি বলে দাবি। আলু চাষি আব্দুল রেজ্জাক এ দিন বলেন, ‘‘বেশির ভাগ কৃষক বন্ডের কুপন পাননি। কেউ কেউ শয়ে শয়ে কুপন কুক্ষিগত করেছেন। কালোবাজারি চলছে। সাধারণ আলু চাষিরা মার খাচ্ছেন।’’ কৃষক সামসুদ্দিন মহম্মদ বলেন, ‘‘বন্ড পেলাম না। তিন লক্ষ ২০ হাজার টাকা খরচ করেছি! পথে বসতে হবে!’’

জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘‘প্রকৃত কৃষকেরা প্রমাণপত্র নিয়ে ব্লক অফিসে যোগাযোগ করলে, প্রশাসন তাঁদের আলু রাখার ব্যবস্থা করবে।’’

কৃষকদের দাবি, জেলায় সরকারি ভাবে আলু কেনার কোনও বন্দোবস্ত হয়নি। এ বিষয়ে জেলা কৃষি বিপণন দফতরের সহকারী অধিকর্তা সুব্রত দে’-কে একাধিক বার ফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রতি বারই ‘ব্যস্ত আছি’ বলে ফোন কেটে দেন। উত্তর মেলেনি মেসেজেরও।

অন্য দিকে, আলুর বন্ড প্রকৃত কৃষকেরা পাচ্ছেন না অভিযোগ তুলে জলপাইগুড়ির ডিবিসি রোডে আলু-টোম্যাটো ছড়িয়ে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপির কৃষক সংগঠন। এর ফলে, যানজট হয়। বিজেপির কিসান মোর্চার দাবি, কৃষকেরা টোম্যাটোর দামও পাচ্ছেন না। মোর্চার জেলা সভাপতি নকুল দাস বলেন, ‘‘আলুর বন্ড তৃণমূল নেতারা নিয়ে নিয়েছেন। সব কৃষক আলু রাখতে না পারলে, রাস্তায় আলু ফেলে দেওয়া হবে।’’ তৃণমূলের পাল্টা দাবি, বিজেপি রাজনীতি করার জন্যই এই অভিযোগ তুলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE