Advertisement
০৬ মে ২০২৪

সরঞ্জাম, ডাক্তার নেই, রেফার-ই একমাত্র পথ 

রবিবার রাতে নিউজিল্যান্ডের পর্যটক শন মাইকেল হ্যান্ডসনের মৃত্যু, এই হাসপাতাল-সহ গোটা আলিপুরদুয়ার জেলার স্বাস্থ্য পরিষেবাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে৷

ভূমিশয্যা: হাসপাতালের শয্যা ভর্তি, শুক্রবার বীরপাড়া রাজ্য সাধারণ হাসপাতালে অতিরিক্ত রোগীদের ঠাঁই হয়েছে মাটিতে। ছবি: অর্ণব সাহা

ভূমিশয্যা: হাসপাতালের শয্যা ভর্তি, শুক্রবার বীরপাড়া রাজ্য সাধারণ হাসপাতালে অতিরিক্ত রোগীদের ঠাঁই হয়েছে মাটিতে। ছবি: অর্ণব সাহা

নিজস্ব সংবাদদাতা
বীরপাড়া শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:৪৩
Share: Save:

আইসিইউ নেই, সিটি স্ক্যানের ব্যবস্থাও নেই৷ নেই একজনও জেনারেল সার্জেন৷ নেই কোনও প্যাথোলজিস্ট। একজন অ্যানাসস্থেটিস্ট। মেডিক্যাল অফিসার ছাড়াই চলছে ব্লাড ব্যাঙ্ক৷ বীরপাড়া রাজ্য সাধারণ হাসপাতালের বর্তমান ছবিটা ঠিক এমনই৷ তাই সঙ্কটাপন্ন রোগীদের বাধ্য হয়ে রেফার করেই দায় সারছেন চিকিৎসকেরা।

রবিবার রাতে নিউজিল্যান্ডের পর্যটক শন মাইকেল হ্যান্ডসনের মৃত্যু, এই হাসপাতাল-সহ গোটা আলিপুরদুয়ার জেলার স্বাস্থ্য পরিষেবাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে৷ রবিবার সন্ধ্যায় মোটরবাইকে করে হাসিমারা যাওয়ার পথে ম্যাজিক গাড়ির ধাক্কায় জখম হন শন৷ তাঁর সঙ্গী নিউজিল্যান্ডের আর-এক পর্যটক ও গাজিয়াবাদ নিবাসী দুই ভারতীয় যুবক দ্রুত তাঁকে বীরপাড়া রাজ্য সাধারণ হাসপাতালে নিয়ে যান৷ তাঁদের অভিযোগ, হাসপাতালে পৌঁছনোর পর চিকিৎসকদের নিজের মুখেই চোটের কথা বলেন শন৷ কিন্তু হাসপাতালে সিটি স্ক্যান না থাকায় শরীরের ভিতরে কোথায় তাঁর চোট লেগেছে, তা ধরতেই পারেননি চিকিৎসকরা৷ আইসিইউ না থাকায় প্রবল শ্বাসকষ্ট হতে থাকা শনকে বাধ্য হয়ে শিলিগুড়িতে রেফার করে দেন চিকিৎসকরা৷ কিন্তু রেলগেট লেভেল ক্রসিংয়ে প্রায় ত্রিশ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাঁদের। সঙ্গীরা তখন শনকে আবার বীরপাড়া রাজ্য সাধারণ হাসপাতালে ফিরিয়ে আনতে মনস্থির করেন। ফেরার পথে, রাস্তাতেই শনের মৃত্যু হয়৷

এই ঘটনায় জেলার অন্যতম সরকারি হাসপাতালের দৈন্যর ছবি স্পষ্ট হয়েছে। সোমবার আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে শনের ময়নাতদন্ত হওয়ার সময়ই বীরপাড়া হাসপাতালের আইসিইউ ও সিটি স্ক্যান না থাকা নিয়ে, ক্ষোভ উগরে দেন তাঁর সঙ্গীরা৷ কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, সমস্যা শুধুমাত্র আইসিইউ বা সিটি স্ক্যানেই থেমে নেই, তার শিকড় আরও গভীরে।

১৯৮১ সালে হাসপাতালটি চালু হয়৷ প্রায় ২৬টি চা বাগান এলাকার মানুষ এই হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল৷ অথচ, যত সময় যাচ্ছে ততই যেন অভাব বাড়ছে হাসপাতালের৷ অভাব যে শুধু আধুনিক যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে রয়েছে তাই নয়, অভাব রয়েছে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদেরও৷ যার প্রভাব এসে পড়ছে চিকিৎসা পরিষেবায়৷

হাসপাতাল সূত্রের খবর, শনের মতো দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম কোনও রোগী সেখানে গেলে, ‘রেফার’ ছাড়া উপায় থাকে না৷ চিকিৎসকদের কথায়, এই হাসপাতালে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় গর্ভবতী মা ও শিশুদের৷ সেখানেও মাত্র একজন অ্যানাসস্থেটিস্ট থাকায় হাসপাতালে ওটি চালু থাকে আট ঘণ্টা৷ ওই সময়ের পরে কোনও গর্ভবতী মায়ের সিজার করার প্রয়োজন হলেও, তখন উপায় সেই একটাই- রেফার করা৷

হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশের অভিযোগ, বীরপাড়া রাজ্য সাধারণ হাসপাতালে প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক চিকিৎসকও নেই৷ হাসপাতালে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ রয়েছেন মাত্র একজন৷ ব্লাড ব্যাঙ্ক চালু হলেও, সেখানে কোনও মেডিক্যাল অফিসার নেই৷ ১১ জনের জায়গায় জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার রয়েছেন ৬ জন৷ একই ভাবে কর্মবন্ধু, জেনারেল ডিউটি অ্যাটেনডেন্টদের পদ অধিকাংশই ফাঁকা। অথচ হাসপাতালে দু’শোর মতো শয্যা রয়েছে। গড়ে দিনে ২৭০-৮০ জন রোগী ভর্তি থাকে এখানে। ফলে অনেক রোগীকেই মেঝেয় ঠাঁই নিতে হয়৷

হাসপাতাল সুপার বিদ্যুৎ ঘোষ বলেন, ‘‘এটা বাস্তব হাসপাতালে পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা রয়েছে৷ কিন্তু আমাদের সবসময়ই চেষ্টা থাকে তাঁর প্রভাব যেন চিকিৎসা পরিষেবায় না পড়ে৷’’ আলিপুরদুয়ারের সিএমওএচ পূরণ শর্মা বলেন, ‘‘চিকিৎসকের সমস্যা গোটা রাজ্যেই রয়েছে৷ স্বাস্থ্যভবনের কর্তারা জানেন৷ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে৷’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Birpara Hospital Doctor Equipment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE