মহানন্দা-সহ শহরের অন্য নদীগুলিকে বাঁচাতে পরিবেশপ্রেমীরা একজোট হয়ে সরব হলেও পুর কর্তৃপক্ষের হেলদোল নেই বলে অভিযোগ। উল্টে, নদীগুলি সংস্কার করে বাঁচিয়ে তোলার কাজ পুরসভার একার পক্ষে সম্ভব নয় বলে মঙ্গলবার পুরসভায় সাংবাদিক বৈঠক করে জানান শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। তাঁর দাবি, ‘‘নদী বাঁচানোর কাজ পুরসভার একার পক্ষে সম্ভব নয়। নদী দূষণমুক্ত রাখা, সংস্কারে বাসিন্দাদের সচেতন করা, সরকারের উপর চাপ দেওয়া এটাই পুরসভা করতে পারে।’’ মেয়রের এই বক্তব্য নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। কেন না শহরে মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী সাফসুতো রাখা, দূষণমুক্ত রাখার দায়িত্ব পূরসভার উপরেই বর্তায়। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক আধিকারিক জানিয়েছে, ওয়াটার প্রিভেনশন অ্যান্ড কনট্রোল অব পলিউশন আইন-১৯৭৪ এবং পরিবেশ রক্ষা আইন-১৯৮৬ অনুসারে সংশ্লিষ্ট পুরসভারই দায়িত্ব শহরের নদীগুলি দূষণমুক্ত রাখা।
মহানন্দার দূষণ মাত্রা ভয়ঙ্কর অবস্থায় রয়েছে বলে গত জানুয়ারি মাসে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্যদ থেকে পুরসভাকে জানানোও হয়েছে। মেয়র দায় চাপিয়েছেন রাজ্য সরকার তথা শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে। তাঁর অভিযোগ, মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানে এই নদী সংস্কার এবং দু’পাড়ে সৌন্দর্যায়নের কথা ছিল। গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানের অধীনে মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যান প্রকল্পের সঙ্গে পরবর্তীতে যুক্ত করা হয়েছিল শিলিগুড়ির জোড়াপানি, ফুলেশ্বরী, পঞ্চনই এবং মহিষমারি নদীগুলিকেও। প্রথম দু’টি পর্বে ৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অধীনে এই কাজে জোড়াপানি নদী খাত সংস্কার এবং নিকাশি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান থেকে এই প্রকল্পটি বাদ দেওয়া হয়েছে, এমনটাই তিনি শুনেছেন বলে দাবি মেয়রের। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রী প্রকাশ জাভাদেকর, রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবকে চিঠি দিয়ে মহানন্দা সংস্কারে উদ্যোগী হওয়ার বিষয়টি জানিয়েছি। জাতীয় নদী সংরক্ষণ প্রকল্পে গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানের অধীনে মহানন্দা নদী সংস্কারের বিষয়টিকেও রাখার জন্য উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ করেছি।’’
মেয়রের তরফে রাজ্য এবং কেন্দ্রের কাছে মেয়র চিঠি দেওয়ার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে পরিবেশপ্রেমী সংগঠন হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন (ন্যাফ)-এর মুখপাত্র অনিমেষ বসু। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘শহরের মধ্যে মহানন্দা নদীর খাতে থাকা খাটাল তুলতে পুরসভাকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ নদীর খাতে প্রাতঃকৃত্য করেন, তা বন্ধ করতে হবে। নদীর মধ্যে গরু, মহিষের মৃতদেহ ফেলার মতো ঘটনা বন্ধ করতে পুরসভাকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।’’
শহরের পরিবেশপ্রেমীরা অবশ্য ইতিমধ্যেই নদী বাঁচাতে কমিটি গঠন করেছেন। তাতে রয়েছেন শহরের বাসিন্দা বিশিষ্ট সাহিত্যিক অশ্রুকুমার সিকদারের মতো ব্যক্তিত্বও। মেয়র জানিয়েছেন, নাগরিকদের ওই উদ্যোগকে তিনি সমর্থন করেন। কিন্তু পুরসভার তেমন কিছু করার নেই এ কথা মেয়র বলছেন কেন তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন নাগরিকদের একাংশ। সম্প্রতি মহানন্দা পচাগলা মহিষের মৃতদেহ ভাসতে দেখে সাফাই বিভাগের তরফেই তা শেষ পর্যন্ত নদী থেকে তোলা হয়। পুজোর সময় বিসর্জন বা ছট পুজোর পরেও পুরসভার তরফে নদী সাফাই করা হয়। অথচ এখন পর্যন্ত পুরসভার তরফে মহানন্দা নদীর খাতে থাকা খাটাল সরাতে বা নিয়মিত নদী সাফাই করতে যথাযথ উদ্যোগও নেই বলে বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ। পরে মেয়র বলেন, ‘‘রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্যদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্রকে আমি ফোন করেছিলাম। পুরসভার একার পক্ষে সম্ভব নয়। কেন্দ্র, রাজ্য, পুরসভা, এমনকী নাগরিক সকলের যৌথ উদ্যোগ দরকার।’’ এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সাফাই বিভাগের মেয়র পারিষদ মুকুল সেনগুপ্ত। তিনি জানিয়েছেন, খাটাল সরাতে তাঁরা ইতিমধ্যেই সেচ দফতরকে চিঠি দিয়েছেন।
পুরসভা দায় এড়াচ্ছে বলে সরব হয়েছে তৃণমূল কাউন্সিলর কৃষ্ণ পাল। তিনি বলেন, ‘‘বাম জমানায় অশোকবাবু এসজেডিএ’র চেয়ারম্যান থাকার সময় মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানের কাজ শুরু হয়েছিল। অর্থ বরাদ্দ এসেছিল। সে সময় তারা শুধু পাইপ নদীর ধারে ফেলে রেখে দায় সেরেছেন। কোনও সংস্কার কাজ হয়নি। নদীর চরে লোক বসিয়ে রাজনীতি করেছেন। মেয়রের জানা উচিত গঙ্গা প্রকল্পের মধ্যে মহানন্দা নদী সংস্কারের বিষয়টি রয়েছে।’’ কৃষ্ণবাবু দাবি, বাসিন্দারা অশোকবাবুদের কাছ থেকে কোনও উন্নয়ন আশা করছেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy