Advertisement
১৮ মে ২০২৪

রাজনীতির বদলেও ভোগান্তি সেই এক

বালুরঘাটকে যানজটমুক্ত শহর হিসেবে গড়ে তুলতে ছ’বছর আগে নিউ মার্কেট এলাকায় আত্রেয়ীর খাঁড়ি বরাবর মোটর কালীসেতু পর্যন্ত রাস্তা এবং পার্কিং জোন তৈরির উদ্যোগ শুরু করেছিলেন তৎকালীন বাম পরিচালিত পুর কর্তৃপক্ষ। কেননা এই শহরে কাছারি রোড থেকে নিউ মার্কেট, সাড়ে তিন নম্বর মোড় হয়ে বিশ্বাসপাড়া মোড় ও বাসস্ট্যান্ড এলাকার মধ্যে গাড়ি পার্কিংয়ের ছটাক জায়গাও নেই।

ফুটপাথ বলে কিছু নেই। হাঁটতে হয় রাস্তাতেই। ছবি: অমিত মোহান্ত।

ফুটপাথ বলে কিছু নেই। হাঁটতে হয় রাস্তাতেই। ছবি: অমিত মোহান্ত।

অনুপরতম মোহান্ত
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৫ ০২:৪২
Share: Save:

বালুরঘাটকে যানজটমুক্ত শহর হিসেবে গড়ে তুলতে ছ’বছর আগে নিউ মার্কেট এলাকায় আত্রেয়ীর খাঁড়ি বরাবর মোটর কালীসেতু পর্যন্ত রাস্তা এবং পার্কিং জোন তৈরির উদ্যোগ শুরু করেছিলেন তৎকালীন বাম পরিচালিত পুর কর্তৃপক্ষ। কেননা এই শহরে কাছারি রোড থেকে নিউ মার্কেট, সাড়ে তিন নম্বর মোড় হয়ে বিশ্বাসপাড়া মোড় ও বাসস্ট্যান্ড এলাকার মধ্যে গাড়ি পার্কিংয়ের ছটাক জায়গাও নেই।

সেচ দফতরের অনুমোদন ও আর্থিক সহায়তা পেয়ে ওই খাঁড়িতে সারা বছর জল ধরে রেখে মাছ চাষের পাশাপাশি বোটিং ও সৌন্দর্যায়নের পরিকল্পনা নিয়ে মাটি ফেলার কাজও শুরু করেছিল তৎকালীন বাম পুরবোর্ড। পরবর্তীতে আচমকা অর্থাভাবের কারণ দেখিয়ে ওই প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায় বলে অভিযোগ। হাল আমলে এটিই শহরে পার্কিং জোন তৈরির শেষ উদ্যোগ ছিল বলা যায়। তার আগে ৭-৮ বছর পিছন ফিরে তাকালে শহরের মারফিমোড়ে ব-দ্বীপ আকৃতির নাতিদীর্ঘ বাড়িটির কথা মনে আসে। ব্যক্তিগত মালিকানার ওই সরু আকৃতির ব-দ্বীপ গোছের দোকান বাড়িটি ভেঙে পুরসভা থেকে রাস্তা চওড়ার উদ্যোগের কথা শোনা গিয়েছিল। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ভোট ব্যাঙ্কে ধস নামতে পারে ভেবে ওই উদ্যোগ থেকে পিছিয়ে যান তৎকালীন পুর কর্তৃপক্ষ। দুই সরু রাস্তার মাঝে ব-দ্বীপ বাড়ি বহাল রয়েছে। আশপাশের সমস্ত দোকান মালিক থেকে কর্মচারির সাইকেল, মোটরবাইক ওই রাস্তা দখল করে। পার্কিংয়ের জেরে মোড়ের মাথায় অবস্থিত কবিগুরুর আবক্ষ মূর্তি অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।

প্রায় ১০০ বছরের উপর পুরনো বালুরঘাট শহরের উপরে খানিক জৌলুস নজরে পড়লেও ভেতরে ক্ষয়িষ্ণু চেহারা। ফুটপাত হারিয়ে সব ভার বহন করে কোনওরকমে দাঁড়িয়ে আছে শহরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া মূল পূর্ত দফতরের প্রাচীন রাস্তা। তার উপর ফি-বছর শহরে বাড়ছে জনসংখ্যা ও যানবাহনের চাপ। তৈরি হচ্ছে নিত্য নতুন দোকান ও ঘরবাড়ি। ওই মূল রাস্তার ধারে আকাশ ধরতে উঠছে একাধিক বহুতল। কিন্তু রাস্তা সেই মান্ধাতার আমল থেকে একই রকম রয়ে গিয়েছে। রাস্তা চওড়ার কথা ভেবে ওঠার আগেই তা দখল হয়ে পড়ছে।

তবে শহরের পূর্ত দফতরের রাস্তা ফিরে পেতে প্রায় চার বছর আগে সরকারিভাবে রাস্তায় নেমে পড়েন তখনকার জেলা পূর্ত দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার ফয়েজ আহমেদ। বহু বাধা, আপত্তি ঠেলে বালুরঘাট বাসস্ট্যান্ড থেকে যুবশ্রীমোড় এলাকায় পূর্ত সড়কের দুধার থেকে অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ভেঙে দেন একটি বাম প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের ভবনের একাংশ। অর্ধেক রাস্তা দখল করে গড়ে ওঠা গ্যারাজ, দোকান তুলে দিয়ে যুবশ্রীমোড় থেকে নতুন বাইপাস রাস্তা তৈরি করে দেন তিনি। ফয়েজ আহমেদ বদলি হয়ে বালুরঘাট ছেড়েছেন তারপরেই। কিন্তু ওই সময় তাঁর ওই উদ্যোগকে অনেকেই এখনও সাধুবাদ দেন।

প্রায় চার বছর আগে রাজ্যে পালাবদলের পর গত বছর বালুরঘাটের রাজনীতিতে আমূল বদল ঘটে। প্রথমে কারা, তারপর সমবায় মন্ত্রী থেকে স্থানীয় বিধায়ক শঙ্কর চক্রবর্তী রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী হন। শহরের বাসিন্দাদের আশাও বাড়ে। বালুরঘাট পুরসভা থেকে বামেদের দীর্ঘ রাজত্বের অবসান ঘটিয়ে বোর্ডের ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে শহরের যানজট নিয়ে কী ভাবছেন মন্ত্রী এবং পুর কর্তৃপক্ষ?

প্রথমে পুরসভার কথায় আসা যাক। তৃণমূল নতুন পুরবোর্ডের ক্ষমতা পেয়ে ঠিকমতো বসার আসেই ধুমকেতুর মতো উদয় হয়ে শহর দাপাতে থাকে টোটো। বাম আমলে শহরে রিকশাস্ট্যান্ড বিহীন সাইকেল রিকশার আধিক্যে যানজটের শিকার বাসিন্দারা বর্তমান আমলে টোটোর দাপটে যানজটের শিকার। সে সময় শহরে হাজার পাঁচেক সাইকেল রিকশা চালক বাম ইউনিয়নে ছিলেন। এখন তৃণমূলে টোটো চালকেরা। বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতা, সময়ের বদলের সঙ্গে যানের চরিত্র বদলালেও, ভোগান্তি সেই একই রয়েছে।

পুরসভা সূত্রের খবর, প্রথমে ২৩৮টি টোটোকে লাইসেন্স দেওয়া হয়। গত সপ্তাহে আরও ১৭১টি টোটোকে লাইসেন্স দিয়েছে পুরসভা। মোট ৪০৯টি টোটো ইতিমধ্যে অনুমোদন পেয়ে রাস্তা নেমে গেলেও তৈরি হয়নি কোনও টোটোস্ট্যান্ড। যত্রতত্র রাস্তা দখল করে দাঁড়িয়ে টোটো চালকদের যাত্রী ওঠানামা করতে হচ্ছে। তার উপর অননুমোদিত আরও অন্তত দেড়শো টোটো চলছে বলে অভিযোগ। তার উপর শহরের ডানলপ মোড় থেকে সাড়ে তিন নম্বর মোড় পর্যন্ত রাস্তার ধারে দোকানিদের মালপত্র, মোটর সাইকেল পার্কিংয়ের জেরে পথচারিদের রাস্তা চলাই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্কুল ও অফিস সময়ে দুর্ঘটনা লেগেই আছে।

বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারপার্সন চয়নিকা লাহা অবশ্য আশ্বাস দেন, ‘‘প্রথম দফায় শহরের রাস্তা দখল করে ব্যবসায়ী মালপত্র, হোর্ডিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযানে নামবো। শহরে মাইক প্রচার করে সকলকে সতর্ক করা হয়েছে। পরবর্তীতে আত্রেয়ী খাঁড়ির রাস্তা ও পার্কিংপ্লেস তৈরির পরিকল্পনা আছে। ধাপে ধাপে দখলদার তুলে শহরের মূল রাস্তা চওড়া করা হবে।’’ পূর্তমন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজার উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। তাছাড়া শহরের রঘুনাথপুর এলাকা থেকে বিশ্বাসপাড়া হয়ে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত রাস্তা চওড়ার কাজ শুরু হয়েছে। খাঁড়ির উপর ব্রিটিশ আমলের জীর্ণ গ্যারিটি সেতুর জায়গায় নতুন কংক্রিটের সেতু তৈরি পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে।’’

আপাতত সেই ভরসাতেই শহরবাসী বর্তমান যানজটের বিড়ম্বনা ভুলতে চাইছেন। (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE