গজলডোবায় খেত জুড়ে চলছে তরমুজ চাষ। —নিজস্ব চিত্র।
হাতির হামলায় নষ্ট হতো ফসল। সম্বত্সেরর ধান অনেকটাই যেত বুনো দাঁতালের পেটে। রাত জেগে মশাল নিয়ে হাতি তাড়ানোর পরিশ্রমে খরচ কম নয়। তাতেও শেষরক্ষা হতো না।
এ বার তাই বিকল্প চাষে মন দিতে চাইছে ডুয়ার্সের তিস্তা পাড়ের জঙ্গল ঘেরা গজলডোবা। শীতের বোরো ধানের বদলে তরমুজের বীজ বুনে খেত ভরা ফলনে লাভ করে এলাকার বেশ কয়েক জন চাষি পথ দেখাচ্ছেন বাকিদের।
গজলডোবার ১২ নম্বর এলাকার পাশ দিয়েই বয়ে গেছে তিস্তা। নদীর চরের উর্বর জমিতে ধান চাষ আদর্শ হলেও মাত্র এক কিলোমিটার দূরের কাঠামবাড়ি আর বৈকন্ঠপুরের জঙ্গলের হাতির দল যে ধান পাকার গন্ধে হানা দেবে, তা এক প্রকার নিশ্চিত। ফলে, বিকল্প চাষের ভাবনা চাষিদের মাথায় ঘুরছিল বেশ কয়েক বছর ধরেই। সে কারণে বাদাম চাষ শুরু করেন এলাকার চাষিরা। কিন্তু বাদাম শীতের ফসল নয়। তাই শীতে এক প্রকার বাধ্য হয়েই বোরো ধান চাষ করতেন গজলডোবার চাষিরা। এই বাধ্যতা কাটাতে গত বছর থেকে তাঁরা শুরু করেন তরমুজের পরীক্ষামূলক চাষ। তাতে লাভ হওয়ায় এ বার ধানের বদলে গজলডোবার ৫০ বিঘারও বেশি জমি ভরেছে তরমুজে।
এক সময়ে ধান চাষ করতেন গজলডোবার বাসিন্দা বৃন্দাবন সরকার। এ বার ৮ বিঘা জমিতে তরমুজ লাগিয়েছেন। ধান চাষের বদলে নদীর চর এলাকায় গত নভেম্বর মাস থেকেই তরমুজ বীজ ছড়িয়েছিলেন তিনি। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকেই গাছে তরমুজ চলে আসে। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে তরমুজ বাজারে বিক্রির অবস্থায় পৌঁছে যাওয়ায় মুখে হাসি ফুটেছে তাঁর। বৃন্দাবনবাবুর কথায়, “ধান আগে অনেক করেছি। আলু ফলিয়ে লোকসানও অনেক সয়েছি। এ বারই সাহস করে প্রথম তরমুজ করলাম। তরমুজ হাতির খাদ্য নয়। এক দিকে যেমন হাতির হামলার ভয় কম। তেমনি লাভও ধান আর আলুকে ছাপিয়ে যাবে বলেই মনে করছি।”
গজলডোবার আরেক তরমুজ চাষি মহাদেব চৌধুরী গত বছর পরীক্ষামূলক ভাবে তরমুজ ফলিয়েছিলেন। এ বারে ২৫ বিঘা জমিতে তরমুজ করে এলাকার সকলকে চমকে দিয়েছেন তিনি। তরমুজে পুরোপুরি মনোযোগ দেওয়ার জন্য তিনিও এ বার আর অন্য কোনও চাষ করেননি। বাজারে বিক্রির জন্য তাঁর প্রথম দফার তরমুজ প্রস্তুত বলেও জানান তিনি।
চাষিরা জানালেন, এক বিঘা জমিতে ১০০ গ্রামের কম তরমুজ বীজের প্রয়োজন হয়। তরমুজের এক কেজি বীজের দাম ৩৫ হাজার টাকা। ফলে বিঘা প্রতি তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা বীজের জন্য খরচ। সেই সঙ্গে পরিচর্যার জন্যও প্রতি বিঘায় চার হাজার টাকা সার এবং কীটনাশক বাবদ খরচ হয়ে যায়। এক বিঘায় তরমুজ মেলে পাঁচ কুইন্টাল। এক মরসুমে খেত থেকে চার বার ফল তোলা যায়।
এই মুহূর্তে ১০-১২ টাকা কেজি দরে পাইকারেরা তরমুজ কিনছেন। সেই হিসেবে এক মরসুম তরমুজ চাষ করলে বিঘা প্রতি ১২-১৫ হাজার টাকা লাভ হয়। সেই সঙ্গে চাষিদের সোয়াস্তি হাতি না আসার নিশ্চয়তা ঘিরে। দু’য়ে মিলে গজলডোবার চাষিদের এখন আগ্রহ শুধু তরমুজ চাষ কেন্দ্র করে। জলপাইগুড়ি জেলা হর্টিকালচার আধিকারিক শুভাশিস গিরিও বললেন, “বিকল্প চাষ হিসেবে গজলডোবা তরমুজে নাম করছে। চাষিদের নিয়ে তরমুজ বিষয়ক একটি কর্মশালা করার কথাও ভাবছি। তরমুজে খুব বেশি খরচ নেই। হাতির দৌরাত্ম্যও থাকে না। লাভের সম্ভাবনাও অনেক বেশি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy